ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পকলায় কাল বঙ্গলোকের ‘মর্তের অরসিক’

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ৬ জানুয়ারি ২০১৮

শিল্পকলায় কাল বঙ্গলোকের ‘মর্তের অরসিক’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের নাট্যাঙ্গনের অন্যতম সংগঠন বঙ্গলোক। আগামীকাল রবিবার সন্ধ্যা সাতটায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে প্রদর্শিত হবে দলের দ্বিতীয় প্রযোজনা ‘মর্তের অরসিক’। দলের অন্যতম সদস্য শামীমা শওকত লাভলীর রচনা ও নির্দেশনায় নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করবেন- রবিন বসাক, তানভীর হোসেন সামদানী, রাজীব রাজ, সিনথিয়া রহমান, শীষ, মোঃ রাসেল রানা (দোজা), শাহরান খান, উচ্ছ্বাস কুমার ঘোষ, অমিত আচার্য্য হিমেল এবং শামীমা শওকত লাভলী। দৃশ্য ও আলোক পরিচালনা জুনায়েদ ইউসুফ, সহযোগী পলাস হেনড্রী সেন, পোষাক পরিচালনায় এনাম তারা সাকি, কোরিওগ্রাফি সামিউন জাহান দোলা, সঙ্গীত পরিকল্পনা, শামীমা শওকত লাভলী, সহযোগী উচ্ছ্বাস কুমার ঘোষ, প্রচ্ছদ চিত্র শম্ভু আচার্য্য, মঞ্চ ব্যবস্থাপনায়, আশরাফ, জিয়া, সায়িক, শিবলি, শিশির, ¯িœগ্ধা, মিজান, স্বপন, সান্তনা, মঞ্চ ব্যবস্থাপক শাহরান খান । নাটকের মূল উপজীব্য সমসাময়িক অসঙ্গতি। দেশজ নাট্যধারায় নির্মিত হয়েছে নাটকটি। নাটকের গল্পে দেখা যায় আপসহীন গোকুলনাথ, অনেক কষ্টে একটি চাকরি জোগাড় করতে পারলেও সত্যে অনড় থাকার কারণে চাকরিটা হারাতে হয়। জীবন সংগ্রামে গোকুল যখন হতাশাগ্রস্ত তখন রবিঠাকুরের কাছ থেকে স্বর্গে যাওয়ার প্রস্তাব পায়। শর্ত থাকে এই স্বর্গের সমস্ত তথ্য সে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জোগাড় করে আনবে, যার ভিক্তিতে তিনি লেখা তৈরি করবেন। মেঘের পালকিতে চড়ে গোকুলনাথ স্বর্গে পৌঁছায়। স্বর্গের রূপ দেখে বিমোহিত হয়ে পড়লেও সেখানকার অনিয়ম দেবতাদের স্বেচ্ছাচারিতা মেনে নিতে পারে না। স্বর্গের আরাম আয়েশে গা ভাসিয়ে না দিয়ে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে সে উপলব্ধি করে যুগ যুগ স্বর্গ সম্পর্কে আমরা যা শুনেছি তা একই স্থানে স্থির হয়ে আছে। সে আরও বুঝতে পারে পৃথিবী প্রতিমুহূর্তে বদলাচ্ছে যার চাবিকাঠি মানুষের হাতে। তাই সে সিদ্ধান্ত নেয় পৃথিবীতেই সে ফিরে যাবে এবং পৃথিবীর পরিবর্তনের রূপকারদের সঙ্গে যোগ দেবে। এমনই ঘটনাচক্রে গড়ে উঠেছে বঙ্গলোকের নাটক ‘মর্তের অরসিক’। নাটকটি প্রসঙ্গে নাট্যকার ও নির্দেশক শামীমা শওকত লাভলী জানান, ২০১২ সাল। দেশে তখন গুম, খুনের তা-ব চলছে। শেয়ার বাজার ধসের কারণে কত মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে, আত্মহত্যা করেছে কেউ কেউ, এর কোন সুরাহা হয়নি। লাগামহীন পণ্য মূল্যের উর্ধগতি, ট্রাফিক জ্যাম, লোডশেডিং, গ্যাস না থাকা, সব মিলিয়ে শহরবাসীর জীবনবাস দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। ঠিক এই সময় আরণ্যক দল থেকে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হলো ( ৮ম ব্যাচের ) কর্মশালা প্রযোজনার এবং বেছে নিতে বলা হলো রবীন্দ্রনাথ থেকে। ভীষণ কঠিন কাজ কারণ, যদি নির্দিষ্ট নাটকের নাম বলা হতো তাহলে শুধু সেটাতে মনসংযোগ করা আর অগণিতের মধ্যে ঝাঁপ দেয়া এক কথা নয়। তারপর সময়ও বেঁধে দেয়া! তো শুরু হলো আমার রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পথ চলা। বেছে নিলাম ব্যঙ্গকৌতুক ‘অরসিকের স্বর্গপ্রাপ্তি’। ব্যঙ্গকৌতুকটিকে সমসাময়িক করার চেষ্টা করেছি। আমি কৃতজ্ঞ ৮ম ব্যাচের সকলের কাছে যারা প্রতি মুহূর্তে ছিল আমার চিন্তার সঙ্গে। তারপর যখন দেশে শুরু হল ব্লগার হত্যা এবং নাস্তিকতা নিয়ে হুল্লোড়, মানবতাবোধকে গলাটিপে হত্যার ষড়যন্ত্র, দেশব্যাপী মৌলবাদের উত্থান, আমার মনে হল ‘মর্তের অরসিক’ এই প্রেক্ষিতে যথাপোযুক্ত নাটক। সমসাময়িকতাই এই নাটকের মূল উপজীব্য। বঙ্গলোককে ধন্যবাদ যথা সময়ে যথাপোযুক্ত নাটক মঞ্চে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয়ার জন্য। দর্শকদের কাছেও আমি কৃতজ্ঞ তারা আমার কাজকে পছন্দ করেছেন বলে, এ জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ। প্রসঙ্গত, গত বছরের ২০ এপ্রিল ‘মর্তের অরসিক’ নাটকটি প্রথম মঞ্চে আসে। বঙ্গলোকের প্রথম প্রযোজনা ‘রূপ চান সুন্দরীর পালা’ দিয়েই বাজিমাত করেছে পুরো নাট্যাঙ্গনকে। সর্বমহলে প্রশংসিত এ প্রযোজনার রেশ ধরে তারা মঞ্চে আনে নতুন প্রযোজনা ‘মতের অরসিক’। দল নতুন হলেও দলের নাট্যকর্মীরা অনেক দক্ষ। রাজধানীর বিভিন্ন নাট্যদলের স্বপ্নবাজ কয়েকজন নাট্যকর্মী একত্রিত হয়ে গড়ে তুলেছে নতুন থিয়েটার দল বঙ্গলোক।
×