ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

হাশেম খানের শিল্পকর্ম প্রদর্শনী জোড়াতালির চালচিত্র

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ৬ জানুয়ারি ২০১৮

হাশেম খানের শিল্পকর্ম প্রদর্শনী জোড়াতালির চালচিত্র

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এ্যাক্রেলিক বা তেল রঙের আশ্রয়ে সৃজিত হাশেম খানের ক্যানভাস শিল্পানুরাগীদের কাছে চিরচেনা। বরেণ্য এই শিল্পী এবার ধাবিত হয়েছেন চিরচেনা সেই চিত্রপটের বাইরে। কাগজের পরিবর্তে কাঠের বুকে সাজিয়েছেন চিত্রপট। কাঠ খোদাই করে অবয়বের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন আপন শিল্প-ভাবনাকে। সেখানে উঠে এসেছে বাঙালীর মুক্তির সনদ ছয় দফা থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান জয় বাংলা। প্রস্ফুটিত হয়েছে নারীর অবয়ব, মাতৃত্বের রূপরেখা কিংবা জ্যামিতিক নক্সায় গড়া বিচিত্র ভাবনার প্রতিফলন। শুধু তাই নয়, কাঠের পাটাতনের ওপর রং-তুলির আঁচড়ে উদ্ভাসিত হয়েছে বহুবিধ বিষয়। এভাবেই শিল্পরসিকের নয়নে মুগ্ধতা ছড়িয়ে গড়েছেন কাঠচিত্র, কাঠ ভাস্কর্য ও জোড়াতালির চিত্রকর্ম। সেসব শিল্পকর্ম নিয়ে শুক্রবার থেকে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনালয়ে শুরু হলো শিল্পীর বিশেষ প্রদর্শনী। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর আয়োজিত এ প্রদর্শনীর শিরোনাম জোড়াতালির চালচিত্র। নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনালয়ে প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হলেও উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা ছিল জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে। যৌথভাবে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদে নিযুক্ত অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন। সভাপতিত্ব করেন শিল্প সমালোচক অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাশেম খানের সহধর্মিণী পারভীন হাশেম। অনুভূক্তি ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন হাশেম খান। নতুন ধারার নিজের শিল্পকর্ম প্রসঙ্গে হাশেম খান, জোড়াতালির কাঠশিল্প ও অন্যান্য শিল্প নির্মাণে আমি সাড়ে ৯৯ ভাগ সেগুন কাঠ ব্যবহার করেছি। সেগুনের রং, রঙের বিভিন্ন মাত্রাÑঅর্থাৎ গাঢ় ও হালকা রঙের সঙ্গে রেখার সমন্বিত কাঠের তলের স্বাভাবিকভাবে ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যই আমার শিল্পচিন্তাকে আলোড়িত করেছে। কাঠের আঁশ, আঁশের রেখা, রঙের এই তারতম্যকেই ছবি আঁকার রং ও রেখার মতো ব্যবহার করেছি। তোফায়েল আহমেদ বলেন, গত শতকের ষাটের দশক থেকেই হাশেম খানের সঙ্গে আমার পরিচয়। বাংলাদেশের শিল্প-ভুবনের তিনি এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। আর শুধু চিত্রশিল্পী পরিচয়ের বাইরেও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন স্বাধিকার আন্দোলনে রেখেছেন অগ্রণী ভূমিকা। তাই তার চিত্রকর্মেও খুঁজে পাওয়া যায় সেই সংগ্রামী রূপ। স্বাধীনতার চেতনা ও মূল্যবোধকে ধারণ করেই তিনি ধাবিত হন শিল্প-সৃজনের পথে। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণে রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। গণহত্যা একাত্তর শিরোনামের ভাস্কর্য গড়ার মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তীব্র ভালবাসা। এসব কারণেই শিল্পী হিসেবে তিনি একইসঙ্গে অর্জন করেছেন একুশে ও স্বাধীনতা পদক। হাশেম খানকে মূল্যায়ন করে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, তিনি এমন একজন শিল্পী যাকে আমরা পেয়েছি চারুকলার শিক্ষক হিসেবে, বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতের বইয়ের অলঙ্করণে-বিশেষ করে শিশুদের পাঠ্য বইয়ের জন্য ছবি আঁকার একজন পারদর্শী ও নিষ্ঠাবান শিল্পী হিসেবে। আমাদের সাংস্কৃতিক জগতে কোথায় নেই হাশেম খান। তিনি একের পর এক জাদুঘর তৈরি করছেন, শিশু সংগঠন কচি-কাঁচার মেলার জন্য আন্দোলন করে শিশুদের দেশপ্রেমিক হবার সাহস যুগিয়েছেন। এদেশে শিশু চিত্রকলাকে প্রতিষ্ঠিত করার বিষয়ে প্রধান শিল্পী হাশেম খান। আজ আমাদের শিশুরা যে ছবি আঁকছে, প্রদর্শনী করছে বিদেশে ছবি পাঠিয়ে সুনাম অর্জন করছে এর নেপথ্যের প্রধান শক্তি হচ্ছেন কর্মনিষ্ঠ শিল্পী হাশেম খান। হাশেম খানের নতুন আঙ্গিকের শিল্পকর্মের প্রতি মুগ্ধতা প্রকাশ করে রফিকুন নবী বলেন, এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমরা এই শিল্পীকে অন্যরকমভাবে খুঁজে পেলাম। কাঠের ব্যবহারে তিনি যে ধরনের শিল্পকর্ম সৃজন করেছে, তা অনবদ্য। মুর‌্যাল, ভাস্কর্য কিংবা কাঠচিত্রÑসবকিছুতেই রেখেছেন মুন্সিয়ানার স্বাক্ষর। এ প্রদর্শনী দেখার পর মনে হচ্ছে, হাশেম খানকে এখন নির্ধারণ করতে হবে কোন মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাবেন আপন শিল্পচর্চাকে। মুনতাসীর মামুন বলেন, হাশেম খানের সঙ্গে আমার ৫০ বছরের পরিচয়। আমাদের প্রজন্মকে তিনি শিখিয়েছেন শিল্পকলা কিভাবে দেখতে হয় এবং কিভাবে শিল্পকলা বিষয়ে লিখতে হয়। শিল্পচর্চার ক্ষেত্রে অনবরত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এগিয়েছেন এই শিল্পী। কর্মের মাঝেই তিনি মুক্তি খুঁজেছেন এবং সেটা পেয়েছেনও। সব মিলিয়ে ব্যক্তি হাশেম খান পরিণত হয়েছেন একটি প্রতিষ্ঠানে। আর এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমরা নতুন এক হাশেম খানকে আবিষ্কার করলাম। যেই শিল্পী কিনা ক্যানভাস কিংবা কাগজের বাইরে অনবদ্য দক্ষতায় কাঠের ওপর সৃজন করেন শিল্পকর্ম। বিশাল গ্যালারির মেঝে ও দেয়ালে ঠাঁই পেয়েছে কাঠ, ইস্পাত নল, কাগজ ও রঙের সমন্বয়ে গড়া শিল্পীর নতুন ধাঁচের শিল্পকর্মগুলো। সেখানে আছে ১৪টি জোড়াতালি-কাঠচিত্র, ৩১টি জোড়াতালি-কাঠ ভাস্কর্য, ১৮টি জোড়াতালি-চিত্র এবং শিল্পীর সৃজিত ম্যুরাল ও ভাস্কর্যেও ৮টি আলোকচিত্র। সব মিলিয়ে শিল্পকর্মের সংখ্যা ৭১টি। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে এ প্রদর্শনী। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। রবীন্দ্রনাথকে নিবেদিত দুই আয়োজন ॥ বাঙালীর জীবনের প্রতিটি দিনের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তারপরও বিশেষ উপলক্ষকে আশ্রয় করে হাজির হন বিশ্বকবি। তেমনিভাবে শুক্রবার পৌষের সন্ধ্যায় দুই আয়োজনের মাধ্যমে আবির্ভূত হলেন রবীন্দ্রনাথ। শাহবাগের সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের সেমিনার কক্ষে রবিরশ্মি আয়োজন করে ‘গানের ওপার’ শিরোনামে রবীন্দ্রসঙ্গীত সন্ধ্যা, আবৃত্তি ও আলোচনা অনুষ্ঠান। অন্যদিকে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে ছিল রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংসদের আয়োজনে ‘হৃদয় আমার নুইয়ে দাও’ শীর্ষক রবীন্দ্রসঙ্গীত সন্ধ্যা। রবিরশ্মির আয়োজনের শুরুতে প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সাগর সেনের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা। এর পর ছিল ছিল আলোচনা পর্ব। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন আগরতলার সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অমিত ভৌমিক, ভারতের বাচিক শিল্পী শাউলী রায় ও সিলেটের রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী অনিমেষ বিজয় চৌধুরী। আলোচনা পর্বে সভাপতিত্ব করেন রবিরশ্মির পরিচালক মহাদেব ঘোষ। উদীচীর স্মরণে সত্যেন সেন ॥ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শিল্পী-সংগ্রামী-সাংবাদিক-কৃষক নেতা সত্যেন সেনের ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল শুক্রবার। এ উপলক্ষে স্মরণ সভার আয়োজন করে উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদ। যাতে সত্যেন সেনের দেখানো পথে মানুষের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করার মাধ্যমে তাকে স্মরণ করেছে সংগঠনটি। উদীচী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এ স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সহ-সভাপতি অধ্যাপক এ এন রাশেদা। আলোচনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি প্রবীর সরদার, ঢাকা মহানগর সংসদের সহ-সভাপতি সিদ্দিক আহমেদ, নিবাস দে, অমিত রঞ্জন দে ও উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান। বক্তারা বলেন, সত্যেন সেন প্রদর্শিত পথে চলে কৃষক-শ্রমিক-মেহনতী মানুষের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে উদীচীকে সবসময়ই অবিচল থাকতে হবে। সত্যেন সেন যেভাবে হেঁটে গ্রামে গ্রামে ঘুরে সাধারণ মানুষকে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করেছেন, তেমনিভাবে সারাদেশে গ্রামপর্যায়ে ছড়িয়ে যেতে হবে উদীচীকে। সাংগঠনিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশের আপামর জনসাধারণকে সকল ধরনের সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, ধর্মান্ধতা ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য উদীচীর শিল্পী-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তারা। ১৯৮১ সালের ৫ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শিল্পী-সংগ্রামী-সাংবাদিক-কৃষক নেতা সত্যেন সেন। আলিয়ঁসে ‘আকাশ ও বেদনার হরফ’ ॥ আলিয়ঁস ফ্রঁসেস দো ঢাকায় শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়েছে কবি, গবেষক ও অনুবাদক গৌরাঙ্গ মোহান্তের কবিতার আবৃত্তি-এ্যালবাম ‘আকাশ ও বেদনার হরফ’এর মোড়ক উন্মোচন ও কবিতা-সন্ধ্যার। অনুষ্ঠানে কবির সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনা করেন কবি ও প্রাবন্ধিক হায়াৎ সাইফ, কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং কবি ও অনুবাদক কায়সার হক।
×