ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতুর বিশেষজ্ঞ সভা আজ, দ্বিতীয় স্প্যান বসছে এ মাসেই

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৬ জানুয়ারি ২০১৮

পদ্মা সেতুর বিশেষজ্ঞ সভা আজ, দ্বিতীয় স্প্যান বসছে এ মাসেই

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের বিশেষসভা বসছে আজ শনিবার। সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকার সেতু ভবনে বসছে এই সভা। এতে পদ্মা সেতুর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ দলটির বাংলাদেশী পাঁচ সদস্যের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এছাড়া বিদেশী বিশেষজ্ঞসহ বিশেষজ্ঞ পুরো দলটির সরেজমিন সভা বসছে জানুয়ারির ২৫, ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি। শনিবারের সভায় সেতুর চলমান কাজের নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। তলদেশে নরম মাটির চ্যালেঞ্জটিও সফলতার দিকে রূপ নিচ্ছে। এদিকে সেতুটির দ্বিতীয় স্প্যান বসানোর সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ জানুয়ারি। তাই ৮ থেকে ১০ জানুয়ারির দিকে স্প্যানটি কুমারভোগের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ৩৮ নম্বর পিয়ারের কাছে নেয়া হবে। সেতুর পাইল স্থাপন চলছে হরদম। শুক্রবার পর্যন্ত পদ্মা সেতুর ৮৮টি পাইল বসে গেছে। বটম পাইল হয়েছে আরও ১০টি। দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত মূল সেতুর ৫৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে এই সময় পর্যন্ত ৭৩ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। নানা চ্যালেঞ্জের কারণে পিছিয়ে রয়েছে ১৮ শতাংশ কাজ। দায়িত্বশীলরা জানান, গত ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে পদ্মা সেতুতে যোগ করা হবে আরও দুটি নতুন ¯প্যান। এমন টার্গেট থাকলেও নানা কারণেই সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে শীতকালে পলি জমে নদীর তলদেশের গভীরতা কমে যাওয়ায় ¯প্যানবাহী ভাসমান ক্রেনটি চলাচল করতে না সমস্যা হচ্ছিল। তবে তিনটি ড্রেজার কৃত্রিমভাবে নদীর গভীরতা বাড়াতে দিনরাত কাজ করে গভীরতা বাড়াচ্ছে। এখন শান্ত পদ্মা নদী। বর্ষায় প্রমত্তা নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে কাজ করা হয়ে পড়ে দুরূহ। তাই সেতুর কাজে গতি আনতে শুকনো মৌসুমকেই মোক্ষম সময় ধরে নেয়া হয়। তবে ঘটছে ঠিক উল্টোটা। এখন তেমন স্রোত না থাকায় নদীর তলদেশে জমছে পলি। সাধারণত নদীতে ভারি যানবাহন চলাচলের জন্য ৫ মিটার গভীরতা প্রয়োজন হলেও সেটা কমে এসেছে প্রায় ৩ মিটারে। ড্রেজিং করে এখন প্রয়োজনীয় গভীর করা হচ্ছে। তাই শীঘ্রই সচল হচ্ছে ভাসমান ক্রেনটি। জাজিরা প্রান্তে ¯প্যান বসানোর নির্ধারিত স্থানের এক কিলোমিটার দূরত্বে অলস বসিয়ে রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৬শ’ টন ওজন বহনে সক্ষম এই ভাসমান ক্রেন। মাওয়ার কুমারভোগের ইয়ার্ড থেকে ¯প্যান নিয়ে জাজিরা পর্যন্ত নদী পথই এখন উপযোগীর কাজ চলছে। এছাড়া পিলারের সঙ্গে স্প্যান জোড়া দেয়ার জন্য সিমেন্টের মিশ্রণে তৈরি গ্রাউটিংয়ে সমস্যা দেখা দেয়ায় সমাধানে পেরে উঠছিলেন না ভারতের প্রকৌশলীরা। চীনের প্রকৌশলীরা এখন চেষ্টা করে এই সমস্যাও সমাধানের দিকে নিয়ে আসছেন। গ্রাউটিং এখন আর ফাটছে না। পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম শুক্রবার সন্ধ্যায় জনকণ্ঠকে জানান, মধ্য জানুয়ারিতে দ্বিতীয় স্প্যানটি বসছে। স্প্যান বসানোর জন্য সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে। স্প্যান বহনকারী ভাসমান ক্রেনটি চলাচল ও নদীপথটি নাব্য রাখার জন্য তিনটা ড্রেজার কাজ করছে। শনিবারের বিশেষজ্ঞ সভা সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রকল্পে প্রয়োজনীয় জরুরী বিষয়গুলো নিয়েই ডিসকাস হবে। এছাড়া বাকি ১৪টি পিয়ারের চূড়ান্ত ডিজাইন নিয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এখনও কাজ করছে। শীঘ্রই এই ডিজাইন চূড়ান্ত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এ পর্যন্ত মূল সেতুর কাজ ৫৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করে বলেন, ছোট কিছু কাজের জন্য ৩৯-৪০ নম্বর ¯প্যানগুলো বসাতে দেরি হচ্ছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম ¯প্যানটি বসানোর পর এর পাশেই পুরো প্রস্তুত করে তোলা হয়েছে ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলার। অপেক্ষা এখন ¯প্যানের। প্রতিটি স্প্যান ১৫০ মিটার দীর্ঘ। বাকি ২টি স্প্যান বসে গেলে জাজিরা প্রান্তে এক সঙ্গে দৃশ্যমান হবে ৪৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে তিন ¯প্যান। এদিকে ৪২ নম্বর সেতুর খুঁটি ওপরে উঠেছে। প্রথম ধাপে ৮ ফুট ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে। জাজিরা প্রান্তে সংযোগ সেতুর (ভয়াডাক্ট) খুঁটি ওপরে উঠছে। মাওয়া প্রান্তে বসছে পাইল। এ পর্যন্ত ৬৬টি পাইল স্থাপন হয়েছে বলে শুক্রবার সেতুকর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন। এদিকে কুমারভোগ ইয়ার্ডে রেলওয়ে স্লাভ কাস্টিং কাজও চলছে পুরোদমে। চলছে নদী শাসনে হুলস্থুল কাজ চলছে। প্রকল্প এলাকায় এখন ব্যাপক কর্মযজ্ঞ।
×