ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে চলেছেন পা হারানো স্বপন

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ৬ জানুয়ারি ২০১৮

পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে চলেছেন পা হারানো স্বপন

২১ বছর বয়সী আল আমীন স্বপন যখন প্রাইমারী স্কুলে পড়েন তখন তার দরিদ্র পিতা আমির হোসেন কনিষ্ঠ ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছিলেন। ছেলেকে তিনি লেখাপড়া করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করবেন। ছোট ছেলের উপার্জনের ওপর ভর করে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবেন। কিন্তু তার আগেই দুর্ঘটনাজনিত কারণে ছেলে প্রতিবন্ধী হওয়ার মধ্য দিয়ে আমির হোসেনের সেই স্বপ্ন চিরদিনের জন্য শেষ হয়ে যায়। কিন্তু সেই স্বপ্ন বিফলে যেতে দেননি ছেলে। প্রতিবন্ধী ছেলের উপার্জনের দৃশ্য দেখে চোখ থেকে জল আটকাতে পারেন না তিনি। খামার পাথুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে অধ্যয়নকালীন স্কুল থেকে দৌড়ে বাড়ি ফেরার সময় গর্তে পা পড়ে ডান পা ভেঙ্গে যায় স্বপনের। পাশাপাশি পায়ের ভাঙ্গা হাড় রগ ও চামড়া ছিঁড়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। সেসময় স্বপনের পায়ে প্লাস্টার করা হলেও পরবর্তীতে হাঁটার সময় আবার পায়ের রগ ছিঁড়ে যায় এবং বাকা হওয়া শুরু করে। এরপর হাড় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছ স্মরণাপন্ন হলে তিনি স্বপনকে পা কেটে ফেলার পরামর্শ দেয়। পরে স্বপনের বাবা বহুকষ্টে ছেলের অপারেশন করান। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা প্রবল অনুরাগী স্বপনের লেখাপড়ায় বাধা হতে পারেনি। নব উদ্যমে শুরু করেন লেখাপড়া। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াকালীন তিনি নিজের ও পরিবারের ব্যয়ভার বহন করতে মুদির দোকান খুলে বসেন। প্রতিবন্ধী হয়েও স্বপনের এমন প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানান অনেকেই। এরপর ভর্তি হন মাহফিজুর রহমান কারিগরি স্কুল এ্যান্ড কলেজে। ২০১১ সালে তিনি এসএসসি পরীক্ষায় ৪.১১ জিপিএ অর্জন করেন। ২০১৩ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় বিএম শাখা থেকে ৪.৩৩ জিপিএ অর্জন করেন। এরপর অভাব অনটনের কারণে আর পড়ালেখা করার সুযোগ পাননি। দুই বছর আগে সংসারের ব্যয়ভার বহন করতে তাই অটো চার্জার ভ্যান কিনে ভাড়া খাটা শুরু করেন। ভ্যান কেনার আগে তিনি অন্যের জমিতে মজুরি খেটে লেখাপাড়ার খরচ যুগিয়েছেন। স্বপন জানান, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রতিবন্ধী ভাতাবাবদ প্রতিমাসে ৭শ’ টাকা পান। এই টাকা দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব নয়। -কালিদাস রায়, নাটোর থেকে
×