ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাখিদের নিরাপদ নীড়

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ৬ জানুয়ারি ২০১৮

পাখিদের নিরাপদ নীড়

পাখি-সব করে রব, রাত্রি পোহাইলো’ ছড়াটি অনেকটা এখন বইয়ের পাতার মধ্যেই বিদ্যমান। ছড়ার মতো পাখির শব্দে এখন আর কারও ঘুম ভাঙ্গে না। গাছে গাছে পাখির কলরবও শোনা যায় না। গ্রাম-বাংলায় নানা প্রজাতির পাখির দেখাও অনেকটা মিলে না। সময়ের পরিবর্তন ও জলবায়ুর বিবর্তনে হঠাৎ করেই সেই পাখিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামাঞ্চল থেকে। আর হারানো সেই পাখিগুলো ফিরিয়ে আনতে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার আটিয়া ইউনিয়নের কয়েকজন তরুণ যুবক মিলে নিয়েছে ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ। গাছে গাছে মাটির কলসি বেঁধে দিয়ে পাখিদের জন্য তৈরি করছেন তারা নিরাপদ আবাসস্থল। তাদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে এলাকার সাধারণ মানুষ এবং উপজেলা প্রশাসন। পাখির নীড় তৈরির উদ্যোক্তা তালহা আহামেদ সাজু জানান, একসময় গ্রামের মানুষেরা পাখির কলরবের শব্দে ঘুম থেকে উঠত। হঠাৎই গ্রাম থেকে হারিয়ে যাওয়ার পথে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। সেই ভাবনা থেকেই আমরা গ্রামের কয়েকজন যুবকের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। নিজেদের অর্থ দিয়ে কিনে গাছে গাছে বেঁধে দেই মাটির কলসি। প্রথমে তিন শ’ কলসি গাছে গাছে বেঁধে দেয়ার মাধ্যমে আমাদের যাত্রা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে এক হাজার পাঁচ শ’ কলসি ইউনিয়নের বিভিন্ন গাছে লাগানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছি। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে চোখে পড়েছে বিলুপ্ত কয়েকটি জাতের পাখি। যেমন দোয়েল, শালিক, চড়ুই, টুনটুনি, জালালি কবুতর, ঘুঘু, টগা ইত্যাদি। এসব পাখির কলকাকলিতে ভরে উঠেছে আমাদের গ্রাম। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে আমাদের ইচ্ছাশক্তি আরও বেড়েছে। আমরা চাই আমাদের মতো দেশের প্রতিটি গ্রামের তরুণরা এমন উদ্যোগ গ্রহণ করুক। যাতে আমাদের প্রাকৃতিক সমাজ থেকে পাখি হারিয়ে না যায়। আরও দুজন উদ্যোক্তা জানান, আমাদের ইচ্ছা শুধু আটিয়া নয়, পুরো দেলদুয়ার উপজেলা হোক পাখিদের নিরাপদ বাসস্থানের অভয়ারণ্য। আমরা চাই দেলদুয়ার থেকে আমরা তরুণরা যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি তা ছড়িয়ে পড়ুক সারাদেশ। পাখি ফিরে পাক তার শান্তির নিরাপদ নীড়। সেই সঙ্গে যদি আমরা সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পাই তাহলে পুরো দেলদুয়ার উপজেলাকে পাখির জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল বানাতে পারব। যা হবে দেশের অন্যান্য যুবকদের জন্য দৃষ্টান্ত। যুবকরা যদি এভাবে পাখিদের বাঁচাতে এগিয়ে আসে তাহলে হয়ত বা গ্রাম-বাংলার সেই পুরনো চিত্র আবার ফিরে আসবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। স্থানীয়রা বলেছেন, আমাদের দেশে আগে যেসব পাখি আমরা দেখতাম তা এখন আর চোখে পড়ে না। তবে এলাকার যুবকরা পাখি সংরক্ষণের জন্য যে আবাসন তৈরি করেছে তা আমাদের এলাকার সবার নজর কেড়েছে। তাদের এ উদ্যোগের কারণে অনেক পাখি আবার ফিরে আসছে। আমরা চাই এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক। পাশাপাশি সরকার তাদের এমন মহৎ কাজে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিক। দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, আটিয়া গ্রামের স্থানীয় যুবকরা মিলে পাখিদের বাসস্থল তৈরির জন্য গাছে গাছে মাটির হাঁড়ি বেঁধে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা আমি শুনেছি। আমি অবশ্যই তাদের এ ব্যতিক্রম উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। দেলদুয়ার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আবদুল মোতালেব বলেন, গ্রাম-বাংলা থেকে পাখি এখন হারিয়ে যাচ্ছে। যুব সমাজ পাখির নীড় তৈরিতে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। -ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইল থেকে
×