ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পথের ধারে গরম জিলাপি ॥ চলবে শীতজুড়ে

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ৬ জানুয়ারি ২০১৮

পথের ধারে গরম জিলাপি ॥ চলবে শীতজুড়ে

শীত আসতেই জমে উঠেছে শহীদ মোল্লা আর মিনারা বেগমের যুগলবন্দী ব্যবসা। ব্যবসা মানে শীতের জিলাপি। যা চলবে শীতজুড়ে। সকাল থেকে রাত অবধি, প্রতিদিনের বাঁধা রুটিন। শীতের সময়টাতে বাড়তি কিছু লাভের আশায় মুদি-মনোহারি দোকানের সামনে অস্থায়ী চুলায় চলছে জিলাপি ভাজা আর চিনির রসে ভেজানো। গাঁয়ের লোকজনও বেশ খুশি। হাতের কাছে মিলছে টাটকা গরম গরম জিলাপি। চলছেও দেদার। পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা শহরের বুক চিরে সোজা দক্ষিণে রাঙ্গাবালী উপজেলা সদরের দিকে চলে গেছে সামুদাবাদ সড়ক। মাঝখানে আগুনমুখার মতো উত্থাল নদী থাকলেও ভাঙ্গাচোরা এ সড়কটি কিছুটা হলেও রাঙ্গাবালী উপজেলার মানুষকে জেলা সদরে যাতায়াতে সড়ক পথের স্বাদ দিচ্ছে। তাই এ সড়কটি মোটামুটি ব্যস্ত। এ পথ ধরে দক্ষিণে পাঁচ-ছয় কিলোমিটার গেলেই উত্তর বোয়ালিয়া গ্রাম। সড়কের পশ্চিম পাশে গোটা তিন-চার দোকান। এর একটি শহীদ মোল্লার। দোকান মানে মুদি-মনোহারি থেকে শাড়ি কাপড়, অনেক কিছুই মেলে দোকানে। এমনকি গরম চা-বিস্কুটও মেলে। শহীদ মোল্লার স্ত্রী মিনারা বেগম। স্বামী-স্ত্রী দুজনে যৌথভাবে দোকান সামলান। শীত এলেই তারা দোকানের সামনে অস্থায়ী চুলা নিয়ে বসে পড়েন জিলাপির ব্যবসায়। ৫৫ বছর বয়সী শহীদ মোল্লা চুলার আগুনটা একটু উস্কে দিয়ে বলেন, ছোট বেলা থেকেই শীতের জিলাপির ব্যবসা করছি। তা ধরেন অন্তত ৪০-৪৫ বছর তো হবেই। মাঝখানে এক বছর গরু বেচাকেনার ব্যবসায় গিয়েছিলাম। লাখ খানেক টাকা লোকসান দিয়েছি। এরপরে আর ওইপথ মাড়াইনি। তিনি আরও বলেন, মাত্র ৬ শতক জমি নিয়ে ভিটেবাড়ি। আয়ের আর কোন পথ নেই। পাঁচ ছেলে। দুই মেয়ে। এক ছেলে সঙ্গে থাকে। অন্য ছেলেরা আলাদা হয়ে গেছে। মেয়েদেরও বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলেরা চলে গেছে, কোন দুঃখ নেই। স্ত্রীকে নিয়ে নিজে খাটতে পারেন, এটাই যথেষ্ট। ৪৫ বছর বয়সী মিনারা বেগম জানান, বছরের বাকি সময়টা শীতের অপেক্ষায় কাটান। শীতের পুরো তিন-চার মাসের প্রতিদিন জিলাপি ভাজেন। স্বামীর কাছ থেকে জিলাপি ভাজার কাজ শিখে নিয়েছেন। স্বামী কোথাও বেড়াতে কিংবা কাজে গেলে একাই দোকান নিয়ে বসেন। প্রতিদিন ৩০-৪০ কেজি জিলাপি ভাজেন। যার পুরোটাই বিক্রি হয়ে যায়। এতে দৈনিক তিন-চার শ’ টাকা লাভ থাকে। স্বামী-স্ত্রী দুজনই বলেন, একটা সময়ে খেজুরগুড়ের জিলাপির খুব চাহিদা ছিল। এখনও কমবেশি আছে। কিন্তু এলাকায় আসল খেজুরগুড় মেলে না। তাই চিনির জিলাপি বেছে নিয়েছেন। আরও বলেন, গাঁয়ের অনেকে নগদ টাকা দিয়ে জিলাপি কেনে না। তারা ধান দিয়ে জিলাপি কেনে। এতে লাভ আরও বেশি হয়। শহীদ মোল্লা ও মিনারা বেগম জানান, শীতের জিলাপির এ ব্যবসা তাদের বাড়তি আয়ের পথ খুলে দিয়েছে। সংসার চলছে সচ্ছলতার সঙ্গে। কোন ধরনের ধারদেনা করতে হচ্ছে না। ছেলেমেয়েদেরও বড় করেছেন। যতদিন সম্ভব, এ ব্যবসা করে যাবেন। গাঁয়ের লোকজনও হাতের কাছের জিলাপির দোকানে বেজায় খুশি। অশীতিপর আবুল হাওলাদার বলেন, সেই ছোটবেলা থেকে শহীদ মোল্লার জিলাপি খেয়ে আসছি। টাটকা গরম জিলাপির স্বাদই আলাদা। একই গাঁয়ের গৃহবধূ শান্তি বেগম জানান, জিলাপির জন্য শহরে যেতে হয় না। যখন তখন হাতের কাছে মেলে। এ জন্য সবাই দোকানে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। সামুদাবাদ সড়কের নিয়মিত মোটরসাইকেল ড্রাইভার আনোয়ার জানান, বহু যাত্রী পথের ধারের এ জিলাপি খেয়ে প্রশংসা করে। -শংকর লাল দাশ, গলাচিপা থেকে
×