ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভিক্ষার টাকায় দুই সন্তানের লেখাপড়া

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ৬ জানুয়ারি ২০১৮

ভিক্ষার টাকায় দুই সন্তানের লেখাপড়া

উচ্চতা মাত্র ৩৮ ইঞ্চি লালচাঁন মোল্লার। এলাকার লোকজনের কাছে বামন (বায়ন) মানুষ হিসেবেই পরিচিত। সংসারে সহায় সম্বলহীন লালচাঁন মোল্লা (৪৫) পেশায় একজন ভিক্ষুক। দুটি পুত্রসন্তানের জনক তিনি। নিজে পেশায় ভিক্ষুক হলেও সন্তান দুটিকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলার স্বপ্ন তার অনেকদিন থেকেই। মানুষের কাছে হাত পেতে চেয়ে নেয়া ভিক্ষার টাকায় চলছে তার দুই সন্তানের লেখাপড়া। ভিক্ষুক লালচাঁন মোল্লার স্বপ্ন তার দুই সন্তান লেখাপড়া শিখে সরকারী চাকরি করার মাধ্যমে দেশের সেবায় নিয়োজিত হবে। বর্তমানে তার বড় ছেলে ফিরোজ হোসেন (১৮) মান্দা মোমিন শাহানা ডিগ্রী কলেজের এইচএসসি ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছোট ছেলে ফরহাদ হোসেন (৯) চকশ্যামা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর শিক্ষার্থী। ইতোমধ্যেই তার কলেজ পড়ুয়া বড় ছেলের চাকরির জন্য এমপি, মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের স্মরণাপন্ন হয়েছেন, ৩৮ ইঞ্চির এই বামন লালচাঁন মোল্লা। জানা গেছে, মান্দা উপজেলার ভারশো ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মৃত তারা মোল্লার ৫ কন্যা ও ২ পুত্রের মধ্যে ৬ জন স্বাভাবিক হলেও শুধু লালচাঁন মোল্লা বামন। তার উচ্চতা মাত্র ৩৮ ইঞ্চি। মাত্র দুই শতক জমির ওপর একটি মাটির ভাঙ্গাচোরা ঘর ছাড়া সম্পদ বলতে আর কিছুই নেই তার। বর্তমানে সে মহাদেবপুর উপজেলার নওহাটামোড় (চৌমাশিয়া) বাসস্ট্যান্ডে বাসের যাত্রীদের কাছে থেকে হাত পেতে ভিক্ষার টাকা সংগ্রহ করে। সেই টাকায় অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে সংসার চালানোর পাশপাশি দুই ছেলের লেখাপড়া চালিয়ে আসছেন তিনি। লালচাঁন মোল্লা জানান, আমি বেটে (ছোট) মানুষ হওয়ায় গেরস্তদের বাড়িতে কাজে যেতে পারি না। আমি কাজ করতে পারব না জেনে গেরস্তরাও আমাকে কাজে নেয় না। সার্কাসের মানুষেরা আমাকে সার্কাসে জোকার বানাতে চাইলেও আমি জোকার হয়ে মানুষকে হাসাতে চাইনি। এজন্য সার্কাসে আমার চাকরি হয়নি। ২০-২১ বছর পূর্বে আমি এলাকার ফিরোজা নামে এক মেয়েকে বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করি। এর কিছুদিন পরই নওগাঁ শহরের একটি চাইনিজ হোটেলে গার্ডের চাকরি করে সংসার চালাতে থাকাকালে আমাদের সংসারে দুটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। একপর্যায়ে দুই ছেলে ও আমাকে ছেড়ে আমার স্ত্রী ফিরোজা বেগম অন্যত্র গিয়ে বিয়ে করে সংসার করে। আমি বড় অসহায় ও দিশেহারা হয়ে পড়ি। তখন আমি মনোস্থির করি, যেভাবেই হোক আমার সন্তানদের আমি লেখাপড়া শিখিয়ে সরকারী চাকরি করার মাধ্যমে দেশের সেবায় নিয়োজিত করাব। এরপরই আমি নওহাটামোড় বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা বাসের যাত্রীদের কাছে হাত পাতিয়ে সংগ্রহ করা ভিক্ষার টাকায় সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে আসছি। এমনকি যারা বেটে মানুষ বলে আমাকে কাজে নেয়নি তাদের অনেকেই আমার সন্তানদের দিনমজুরের কাজে নিতে চাইলেও আমি সন্তানদের কাজে না পাঠিয়ে স্কুলে পাঠিয়েছি। এসব কথা বলার একপর্যায়ে লালচাঁন মোল্লার কণ্ঠ ভার হয়ে আসে। -বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ থেকে
×