ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুদের হার

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ৬ জানুয়ারি ২০১৮

সুদের হার

নতুন বছরের শুরুতে দেশের সাধারণ মানুষ সুসংবাদ পেল। ব্যাংক আমানতের ওপর সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে সরকারী-বেসরকারী অধিকাংশ বাণিজ্যিক ব্যাংক। মূলত আমানতকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১ শতাংশ পর্যন্ত আমানতের সুদ বাড়ানো হয়েছে। অবশ্য ঋণের সুদের হারও বেড়েছে। এটি দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করার জন্য স্বীকৃত একটি পদক্ষেপ। তবে সেক্ষেত্রে ঋণ আদায়েরও একটি ব্যাপার রয়েছে। যাহোক, ভোক্তা ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণে নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ পর্যন্ত ঋণের সুদের হার বাড়িয়েছে অধিকাংশ বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক। বাস্তবতা হলো গত কয়েক বছরে বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ প্রবাহ কম থাকায় ব্যাংকগুলোয় ঋণের চাহিদা কমে যায়। এ কারণে ব্যাংকে মাত্রাতিরিক্ত অলস অর্থের বিনিয়োগ বাড়াতে এবং আমানতের চাপ কমাতে ব্যাংকগুলো আমানত ও ঋণের সুদের হার কমাতে থাকে। গত দুই বছরে ব্যাংকগুলো ব্যাপক হারে আমানতের সুদের হার কমিয়েছে। ঋণের সুদের হার সামান্য কমলেও ব্যাংকিং খাতে ঋণের চাহিদা বাড়েনি। সঞ্চয় ও বিনিয়োগ নিয়ে অর্থনীতি শাস্ত্রে অনেক কথা লেখা আছে। সঞ্চয়কে বলা হয়েছে বর্তমান আয় থেকে যে অংশ ভবিষ্যত ভোগের জন্য রেখে দেয়া হয়। অন্যদিকে বিনিয়োগের সংজ্ঞা হলো নতুন করে ক্যাপিটাল স্টকে বা মূলধনী সম্পদে কিছু যোগ করা। তবে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ সব সময় একই ব্যক্তিরা করে না। সঞ্চয় করে এক দল, অন্য দল বিনিয়োগ করে। যারা সঞ্চয় করে তারা সরাসরি বিনিয়োগের দলের হাতে অর্থ তুলে দেয় না, তারা সাধারণ ব্যাংক বা অন্য কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অর্থ জমা করে আর ব্যাংক বা এজাতীয় প্রতিষ্ঠান সেই সঞ্চয়কে বিনিয়োগের জন্য অন্য ব্যক্তি বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেয়। এক্ষেত্রে অন্য পক্ষ থেকে ব্যাংক অর্থ দিলে বলা হয় ব্যাংক ডিপোজিট বা আমানত নিয়েছে আর ব্যাংক যখন অন্য পক্ষকে সেই আমানত বিনিয়োগ ভোগ ইত্যাদির উদ্দেশ্যে প্রদান করে, সেটাকে বলা হয় ল্যান্ডিং বা ব্যাংক ঋণ। এটা অস্বীকারের কিছু নেই যে, আমানতের তুলনায় ঋণ প্রবৃদ্ধি বেশি হলে স্বাভাবিকভাবেই আমানতের ওপর চাপ তৈরি হয়। দুই বছর ধরে আমানতের তুলনায় ঋণে বেশি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এ রকম সময়ে আমানত সংগ্রহে সুদহার বাড়ানো ছাড়া উপায়ও থাকে না। আগামীতে এটি আরও বাড়তে পারে বলে জানান ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান। ব্যবসায়ীরা, শিল্পপতিরা খুশি হন ঋণের ওপর সুদের হার হ্রাস পেলে। ইতোমধ্যে সেটি অনেক হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু তবু তারা কি খুশি হয়েছিলেন? আসলে তারা চান সুদের হার ‘সিঙ্গেল ডিজিট’-এ নামুক। কারণ তারা মনে করেন দেশে শিল্পায়নের অন্যতম প্রধান সমস্যা ব্যাংক ঋণের ওপর সুদের হার। সরকার ব্যবসায়ীদের দাবির কাছে অনেক সময় ছাড় দেয়, কিন্তু ব্যাংক ঋণের সুদের হারের সঙ্গে সম্পর্কিত দুটো জিনিস। প্রথমত মূল্যস্ফীতি, দ্বিতীয় আমানতের ওপর সুদের হার। সর্বোপরি বলাবাহুল্য, জাতীয় সঞ্চয় হার। বৃহত্তর মানুষের কল্যাণ চাইলে আমানতের ওপর সুদের হার বাড়ানো এবং একইভাবে ব্যাংক ঋণের ওপরও সহনীয় মাত্রায় সুদের হার বৃদ্ধি দরকার। জনবান্ধব সরকার সেই প্রত্যাশিত নীতিটিই অবলম্বন করছে।
×