ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

একগুচ্ছ কবিতা ॥ রাব্বী আহমেদ

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ৫ জানুয়ারি ২০১৮

একগুচ্ছ কবিতা ॥ রাব্বী আহমেদ

**থার্মোকাপল খুলে দাও যদি বুকের বন্ধ ঝাঁপি, উত্তাপে তার কতোটকু প্রেম মাপি। দুয়ার বন্ধ আকাশের রং কালো, মেঘের মিছিলে দৃশ্যেরা জমকালো। মোম আগুনে পুড়ে যায় জলধারা, দেয়ালে ঝুলছে সময়ের বাটখারা। মুহূর্তগুলো ভাঙা কাচ খানখান, চুমুকে চুমুকে আঁধার করেছি পান। এই যে শরীর, শরীরের শেষে কী? যেখানে জ্বলছে সহস্র জোনাকি। আলোকিত ওই পল্লীর নাম মন, তাই ছোঁব বলে, জীবনের এই অনাড়ম্বর আয়োজন। **জর্জেট অভিমান সমস্ত নদী সমুদ্রে মিশে গেলে, ভাটিয়ালি পাবে নৌকা হারানো গান। ক্লান্ত হৃদয়, হৃদয়কে খুঁজে পেলে বাতাসে ভাসবে জর্জেট-অভিমান। সভ্যতা জুড়ে শেষ হলে ক্রন্দন, পলাতক প্রেম আবারও ফিরবে ঘর। অপেক্ষার চোখ খুঁজবে হারানো মুখ, পৃথিবী তখনও রোগে-শোকে ভঙ্গুর। সকল গৃহ ফিরিয়ে দেবার পর, ফিরে আসি যদি নেবে কি আমার ভার? প্রস্তর প্রেমে মাথা নত করে দিয়ে, বাঁধবো দু’জন নুন-পান্তার ঘর। থাকুক অভাব-দারিদ্র্য-অনটন ক্ষুধা ও ক্লান্তি, হারানো দিনের গান। দুঃখ আহিত জীবনের পথে পথে প্রবাহিত হোক প্রেমের আধান। **এম্রায়োলজি কোথাও যাওয়ার নেই, তাই যাই না। বাজারে রবিশস্য ওঠে, বিবাহিত জীবন ডিমের দরদাম করেই কাটিয়ে দেয় সুরভিত সময়। শহরে জোনাকি নেই, মরিচবাতির আলোয়, প্রিয় প্রেম তুমি আর কতো বাসর সাজাবে? বাজারের ফর্দে ফুটে আছে বিভিন্ন চাহিদা। পিঁয়াজ, নতুন আলু, এলাচ, লবণ, ডাল, মরিচ আর নরডেট টুয়েন্টি এইট। অনিষিক্ত ভ্রণের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে বলি, ‘না জন্মালেই বরং বাঁচা যায়।’ **আড়াল কেউ কি জানে বুকের কোথায় ক্ষত? বিকেল ক্যানো রাতের সমুখে নত। ক্লান্ত পাখিরা যেখানে জিরোয় ডানা, সেখানে স্মৃতিরা গড়ে তোলে আস্তানা। অবাধ্য রাত আঁধারের কাছে ঋণী, অলক্ষ্যে প্রেম মরে যায় প্রতিদিনই। আমরাও মুছি পুরনো প্রেমের দাগ সযত্নে তুলে রাখি আহত অনুরাগ। **বিশ্রাম তোমার নিকটে গেলেই, যে ফুলের ঘ্রাণ পাই তার কোন ডাকনাম নেই? অথচ, আমার বাগানে কতো ফুল ফোটে রোজ প্রভাতে, তাতে জল ঢেলে দেই। স্মৃতির কি ঘ্রাণ থাকে? সময় যেভাবে যায় সেভাবে তুমিও, ফুলের গন্ধের মতো বুকের বাগানে আগাছা সরিয়ে পাশে, ঘুমিও। **প্রাচীন যে কোন ঝড়েই তুলোর মতো উড়ে, তুমি কি আসবে হৃদয় অন্তঃপুরে? বহু শতাব্দী প্রাচীন হৃদয় হয়ে আছে সিলগালা। অনেক খুলেছি এবার তোমার, আমাকে খোলার পালা। **আঘাত যে কোন আঘাতে ভেঙে পড়ে যাও ক্যানো? আঘাতে ভাঙে না কতো কিছুই তো আছে। যে বৃক্ষ মরে যেতে যেতে বাঁচে, প্রাণ রেখে যায় আগামী বীজের কাছে। ভেঙে চুরমার হয়ে যায় তবু কাচ, অজস্র কাচ জন্ম দিয়েই তো মরে। যে গৃহ ভাঙে ঝড়ের আঘাতে কোন, ভিটে রেখে যায়, সম্ভাব্য কোন ঘরে। মন ভেঙে গেলে, এমন কী ক্ষতি বলো? কতো মন ভাঙে, আঘাতে-আঘাতে প্রিয়। শুধু ভেঙে যাওয়ার ইচ্ছে জমে গেলে, চুরমার হতে সময়টুকু দিও। যা কিছু যায়, যা কিছু গিয়েছে চলে, কেউ কি আর ফেরাবার কথা বলে? দাগগুলো হোক আগামীর অনুরাগ, ঋণ রেখে যাই তোমার কোলের কাছে। সভ্যতার এই বিবর্তনের পথে, মানুষের মনে এমন অনেক ভাঙনের ব্যথা আছে। এমন অনেক ভাঙনের ব্যথা আছে।
×