ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিশ্চিন্ত আর নির্বিঘ্ন হোক ॥ ২০১৮-নারীর পথ চলা

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ৫ জানুয়ারি ২০১৮

নিশ্চিন্ত আর নির্বিঘ্ন হোক ॥ ২০১৮-নারীর পথ চলা

২০১৭ সাল পাওয়া না পাওয়ার আনন্দ আর বেদনায় সিক্ত হওয়ার বিচিত্র ঘটনাবলীর স্বচ্ছ প্রতিবেদন। ফেলে আসা বছরে নারীর পথচলা নানা মাত্রিকে সঙ্কটের আবর্তে পড়েছে। তার পরেও অনেক প্রাপ্তি নারীর সামনে এগিয়ে চলাকে সাফল্যের দ্বারেও পৌঁছে দিয়েছে। ২০১৭ সালে বছরজুড়ে নারী নির্যাতনের যে পরিমাণ হিসাবে গণমাধ্যমে প্রকাশ পায় তাও শিহরিত হয়ে ওঠার মতোই নির্যাতন শুধু সীমাবদ্ধ বলয়েই আটকে থাকেনি আরও ব্যাপক হারে পুরো সমাজে তার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট নারীদের জীবন সহনীয় পর্যায়ে ছিল না। কোন নারীর ওপর সহিংসতার মাত্রা পরিবার থেকে শুরু হলেও এক সময়ে তা গণমাধ্যমে চলে আসে। পর্যায়ক্রমে তা পুলিশী তদন্ত পর্যন্ত গড়ায়। পরিণতিতে শেষ অবধি বিচার ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হয়। তার পরেও আছে আইনী ব্যবস্থায় মামলার কার্যক্রম সুষ্ঠু অবস্থায় পরিচালিত হওয়া এবং একটি যৌক্তিক ও প্রত্যাশিত রায়ে অভিযুক্তদের যথার্থ শাস্তি বিধান করা। আর এই বিচারিক ব্যবস্থা এমনই দীর্ঘ মেয়াদী প্রক্রিয়া যা বছরের পর বছর মামলার নথিপত্রের মধ্যেই আটকে থাকে। এভাবে ২০১৭ সালের অনেক ঘটনা অমীমাংসিত অবস্থায় এখনও বিচারিক আস্থা অর্জন করতে পারেনি। সেই সময়ের ঘটনা প্রবাহ নিশ্চয়ই ২০১৮ সাল পর্যন্ত গড়াবে। নতুন করে যদি আবারও নারীদের ওপর নির্যাতনের পাল্লা ভারি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায় তাহলে ২০১৮ সালের পথপরিক্রমা কতখানি নিরাপদ আর নির্বিঘœ থাকবে তা একমাত্র সময়ই বলে দিতে পারে। তবে সম্ভাবনাময় বাংলাদেশে নতুন আশা আর নবউদ্যোমে নারীর চলার পথ অনেক বেশি সহজ, স্বাভাবিক আর সুস্থ ধারায় পরিচালিত হবে। সমস্ত আবর্জনা, জঞ্জাল, হীনম্মন্যতা, অমানবিকতা ধুয়ে মুছে নিঃশঙ্ক জীবন নিশ্চিত করতে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখবে এই আশা করাই যায়। ফেলে আসা দিনের বীভৎসতা, নির্যাতন, সহিংসতা কোনভাবেই যেন নতুন বছরের পথপরিক্রমাকে কলুষিত করতে না পারে সেদিকে বিশেষ নজর রাখা প্রত্যেক সচেতন আর দায়বদ্ধতা নাগরিকের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। সবার প্রতি স্বাধীনতা, অধিকার এবং মানবিক মূল্যবোধ যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা যায় তাহলে প্রত্যেকেই তার নাগরিকও মানবিক দাবি নিয়ে যথার্থভাবে বাঁচতে পারে। নিজের অধিকার নিয়ে যেমন প্রত্যেকের সচেতনতা হওয়ার প্রয়োজন আছে তেমনি অন্য জনের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকাও একান্ত বাঞ্ছনীয়। অন্যের অধিকার এবং মত প্রকাশের ইচ্ছেকে হরণ করে নিজেও স্বাধীন এবং সুস্থভাবে বাঁচা যায় না এ কথা প্রত্যেকের স্মরণে রাখা অত্যন্ত জরুরী। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অভিবাসী অনুপ্রবেশ সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির অবতারণা হয় তার সিংহভাগ সমস্যায় আক্রান্ত হতে হয়েছে নারী এবং শিশুদের। অপেক্ষাকৃত দুর্বল এবং অসহায় অংশ হিসেবে বিবেচিত নারী ও শিশু যে কোন বিপর্যস্ত পরিবেশে সবচেয়ে বেশি অসহনীয় অবস্থায় পৌঁছে। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে চরম সঙ্কটে নারী নির্যাতন ছিল পারিপার্শ্বিকতার এক দুঃসহ পরিস্থিতি। বর্তমান রোহিঙ্গা সমস্যায়ও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। মিয়ানমার থেকে অসংখ্য নারী সে দেশের সামরিক জান্তা দ্বারা লুণ্ঠিত আর ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তারা যেমন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে নিঃস্ব-রিক্ত অবস্থায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হয়েছে। একইভাবে তাদের স্থায়ী কোন ঠিকানা আজ অবধি নিশ্চিত হয়নি। তার ওপর অসংখ্য গর্ভবতী নারী মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় অংশ নিয়েছে তাদের অবস্থাও যে কতখানি বেহাল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই বেসামাল অবস্থায় নতুন শিশু জন্ম নেয়া পরিস্থিতিকে যে কোন্ মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে তা ভাবাও যায় না। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ কমলেও তা এখনও বন্ধ হয়নি। শুধু তাই নয় নিজের দেশে ফেরারও কোন ব্যবস্থা এখনও নিশ্চিত হয়নি। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের এসব রোহিঙ্গা বিশেষ করে বিপর্যস্ত নারী ও শিশু আদৌ কোন সামাজিক সুরক্ষায় নিশ্চিন্ত আর নিরাপদ জীবন পাবে কিনা তা সময়ই বলে দেবে। তবে আমরা আশা করছি এর একটা আশাব্যঞ্জক সমাধান অতি সত্বরই শুরু হবে, যাতে লক্ষাধিক নারী ও শিশু সমস্ত মানবিক অধিকারে নিজেদের আভাস ভূমিতে ফিরে যেতে এবং তাদের অবস্থানকে শক্ত জায়গায় দাঁড় করাতে পারবে। ২০১৭ সালের সমস্ত অশান্তি আর অসহায় অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে নতুন বছরের আশার আলো এসব বিপন্ন নারী ও শিশুর জীবনকে আলোকিত করবে। সব ধরনের বাধাবিপত্ত, শঙ্কা দূর হয়ে নব আলোকে তাদের ভবিষ্যত জীবন স্বাভাবিক এবং সুস্থ অবস্থায় পৌঁছে শান্তির বার্তা নিয়ে আসবে। নিজেদের সমস্ত প্রাপ্য পেয়ে যেন সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা তৈরি হয়ে রোহিঙ্গাদের জীবন নতুন বছরে নব কিরণে উদ্ভাসিত হবে এ কামনা সারা দেশবাসীর। অপরাজিতা প্রতিবেদক
×