ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এক লড়াকু মায়ের আর্তনাদ

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ৫ জানুয়ারি ২০১৮

এক লড়াকু মায়ের আর্তনাদ

মাতৃত্ব যে কোন নারীর সবচাইতে বড় ঐশ্বর্য। দশ মাস দশদিন গর্ভে ধারণ করে যে সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখায় একজন মা তার মাঝে যে কত আনন্দ, তৃপ্তি আর গৌরব জড়ানো থাকে তা বলে শেষ করা যায় না। ‘মা’ ডাক শোনার মধ্য দিয়ে সেই আকাক্সিক্ষত স্বপ্ন পূরণের অনাবিল অনুভব যে কোন মাকে পূর্ণ মাত্রায় ভরিয়ে তোলে। যে কোন মা-বাবা প্রত্যাশা করেন একটি সুস্থ এবং স্বাভাবিক সন্তান তার ছায়ায় বেড়ে উঠবে। কিন্তু এর ব্যত্যয় মা-বাবাকে অসহনীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি করতেও বেশি সময় নেয় না। এমনি এক বিপন্ন মায়ের করুণ আর্তি তার প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে। সিরাজগঞ্জ জেলার মেঘাই গ্রামের ফরিদা ইয়াসমিন ২৩ বছর আগে জন্ম দেন অসহায় প্রতিবন্ধী এক শিশু। মাতৃস্নেহের তাড়নায় সে শিশুটিকে পরম মমতায় তার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা দিয়ে বড় করতে থাকেন। জন্ম থেকে বোঝা গেলেও শিশুটি শারীরিক প্রতিবন্ধী, কিন্তু মানসিক বৈকল্য ধরা পড়ে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর। যে সময়টিতে শিশুর কথা বলা, শুনতে পারা কিংবা ভাবভঙ্গির মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করা সেই প্রয়োজনীয় মুহূর্তগুলোতে ধরা পড়ে শিশুটির মনোবিকাশের হরেক রকম ঘাটতি। শরীর এবং মনোজগতের স্থবিরতা নিয়ে জন্ম নেয়া এই বিকলাঙ্গ শিশুটির নাম আবদুল্লাহ আল মামুন। মা ফরিদা ইয়াসমিনকে প্রতিনিয়তই সংগ্রাম করে যেতে হচ্ছে এই প্রতিবন্ধী শিশুটিকে সুস্থ করা আর বাঁচানোর তাগিদে। মায়ায়- মমতায়, যত্নে-সেবায় শিশুটির শৈশব-কৈশোর পার হয়ে এখন জীবনের এক বিশেষ কাল অতিক্রম করতে হচ্ছে। যৌবনের এই স্বর্ণপর্বেও মামুন অসহায়, অবোধ, বাকহীন অসাড় চৈতন্যের এক নির্জীব মানুষ। আর দরিদ্র মা সন্তানের এই নীরব যন্ত্রণা চোখের সামনে অবলোকন করেও তেমন কিছুই করতে পারছেন না। ২৩ বছর ধরে চিকিৎসা আর সেবা-যত্ন দিয়ে গড়ে তোলা এই নির্বোধ ছেলেটির দিকে বুকভরা আর্তনাদ নিয়ে শুধু তাকিয়েই থাকেন। কিছুই করার নেই তার, ভাল হওয়ার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। তার ওপর অর্থকষ্টের মতো এক মহাদুর্ভোগ প্রতিনিয়তই পোহাতে হচ্ছে তাকে। হতদরিদ্র এই দুঃখী মা আজ তার ভাগ্যবিড়ম্বিত সন্তানটিকে নিয়ে দিশেহারা, সীমাহীন সমুদ্রের মাঝে হাবুডুবু খাচ্ছেন। সন্তানকে সুস্থ করে বাঁচানোর তাগিদে তিনি এখন সব মানুষের কাছে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছেন। সুচিকিৎসার মাধ্যমে সেবা-যত্ন দিয়ে যতদিন বাঁচিয়ে রাখা যায় সে চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হলে অর্থের প্রয়োজন। মা ফরিদা ইয়াসমিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের জন্য যে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন তা উল্লেখ করে তার সন্তানকে এই ধরনের সুযোগ-সুবিধার আওতায় এনে সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য বিশেষ আবেদন জানিয়েছেন। এই মুহূর্তে অর্থের অভাবে প্রতিবন্ধী সন্তানের চিকিৎসা প্রায় বন্ধ হতে চলেছে। পুনরায় চিকিৎসা শুরু করতে না পারলে ছেলেটিকে আর বাঁচাতে পারবেন কিনা সে ব্যাপারে আতঙ্কিত হয়ে তার দিন কাটাতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষের কাছেও এই দুঃখিনী মায়ের আর্তি সবাই যেন সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। সে কারণে তিনি তার মুঠো ফোনের নাম্বারও জানিয়েছেন। মোবাইল নং ০১৭১৮৯৯৫৮৪৬ যারা সাহায্য করতে চান তারা এই নাম্বারে যোগাযোগ করলে অসুস্থ ছেলে ও তার মার সন্ধান পেয়ে যাবেন। আমাদের পক্ষ থেকে ছেলেটির রোগমুক্তির জন্য অশেষ দোয়া আর শুভ কামনা রইল। অপরাজিতা প্রতিবেদক
×