ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ছবির গল্প ॥ রুটি-পাউরুটির মিউজিয়াম

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ৫ জানুয়ারি ২০১৮

ছবির গল্প ॥ রুটি-পাউরুটির মিউজিয়াম

‘পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’ কাব্য, শিল্প, সাহিত্য, ধর্ম প্রায় সব ক্ষেত্রেই রুটি বা পাউরুটির উল্লেখ পাওয়া যায়। রুটির ইতিহাস ও প্রভাব নিয়ে আস্ত একটা মিউজিয়াম রয়েছে অস্ট্রিয়ায়। যার স্থাপত্যশৈলীও নজর কাড়ার মতো। এ যেন স্বপ্নের এক বাড়ি। অস্ট্রিয়ার লিনৎস শহরের উপকণ্ঠে আস্টেন-এর ‘পানেউম’ মিউজিয়াম ভবনটি যেন ভবিষ্যৎ থেকে উঠে এসেছে। প্রায় ১০০০ বর্গমিটারজুড়ে শুধু একটি বিষয় ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে পাউরুটি। পেটার আউগেনডপলার তাঁর বেকিং কোম্পানির দৌলতে গোটা বিশ্বে কোটি কোটি ইউরো আয় করছেন। পাউরুটির জন্য এমন এক স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা ছিল তাঁরই স্বপ্ন। তিনি বলেন, ‘যে মুহূর্তে কিছুই ছিল না, তখন রুটিই ছিল সম্বল, তা সে যতই খারাপ হোক না কেন। সেটা খেয়ে বেঁচে থাকার উপায় ছিল। পাউরুটি না থাকলেই লোকে বুঝতো, আর কিছুই নেই। এটাই রুটির বৈশিষ্ট্য।’ সাধের এই মিউজিয়ামের জন্য তিনি এক অসাধারণ ভবন গড়তে চেয়েছিলেন। ভিয়েনার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্থপতি সংস্থা কোয়প হিমেলবাউ মিউজিয়ামের নক্সা তৈরি করে। ভবনটির আকার-আয়তন সম্পর্কে ভল্ফ ডে প্রিক্স-এর নিজস্ব এক আইডিয়া ছিল। তিনি বলেন, ভবনটির আকৃতি নিয়ে নিত্য নতুন ব্যাখ্যা শুনলে খুব খুশি হই। কেউ বলে রুটির ডেলা অথবা কেকের ছাঁচ। অবশ্যই ভুল ধারণা, কারণ আমি শুধু মেঘের জাহাজের কথা ভেবেই ভবনটি তৈরি করেছি। কোয়প হিমেলবাউ সংস্থা তার উদ্ভাবনী নক্সার জন্য গোটা বিশ্বেই পরিচিত। ফ্রাংকফুর্ট শহরে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদর দপ্তর থেকে শুরু করে মিউনিখ শহরের বিএমডব্লিউ ওয়ার্ল্ড, অথবা ফ্রান্সের লিয়ঁ শহরে বিজ্ঞান ও নৃতত্ত্ব মিউজিয়াম ভবন তাদেরই সৃষ্টি। গোটা ভবনটিকে সংগ্রাহকের ব্যক্তিগত প্রদর্শনীর মঞ্চ করে তোলাই ছিল লক্ষ্য। প্রদর্শনীর বস্তুগুলোকে শুধু কাচের কেসের আড়ালে রাখা হয়নি, দেওয়াল ও সিলিং-এও কিছু বস্তু শোভা পাচ্ছে। ঘরের মাঝে ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে দর্শকরা চারতলার উপর মিউজিয়ামের মূল কাঠের কামরায় পৌঁছতে পারেন। পেটার আউগেনডপলার নিজেই বেশ কয়েক বছর ধরে প্রায় ১২০০ বস্তু সংগ্রহ করেছেন। তিনি বলেন, আমরা দর্শকদের দেখাতে চাই, পাউরুটি কীভাবে বিগত ছয় থেকে আট হাজার বছর ধরে মানবজাতির ইতিহাসের উপর প্রভাব রেখেছে। শুধু খাদ্য নয় কৃষি, শিল্প, সংস্কৃতি, ধর্মসহ মানুষের জীবনের সব ক্ষেত্রেই রুটির ভূমিকা রয়েছে। প্রায় ৯০০০ বছর প্রাচীন শস্যের ফলকের মাধ্যমে মিউজিয়ামে রুটির আদি যুগও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বিভিন্ন ধর্মীয় ঐতিহ্যে রুটিকে কীভাবে সম্মান দেখানো হয়েছে, মিউজিয়ামে তারও দৃষ্টান্ত দেখা যায়। যেমন দক্ষিণ অ্যামেরিকা বা প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায়। শিল্পের ক্ষেত্রেও রুটি তৈরির প্রক্রিয়া কীভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, তারও স্বাদ পাওয়া যায়। -রুবেন কালুস/এসবি
×