ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাল্টাপাল্টি অবস্থানে আওয়ামী লীগ বিএনপি

রাজনীতির মাঠে উত্তাপ, দেশজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ॥ আলোচিত ৫ জানুয়ারি আজ

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৫ জানুয়ারি ২০১৮

রাজনীতির মাঠে উত্তাপ, দেশজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ॥ আলোচিত ৫ জানুয়ারি আজ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বহুল আলোচিত ৫ জানুয়ারি আজ। গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক দিন। নির্বাচন বানচালের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের ধারাবাহিক অগ্নিসন্ত্রাস, ভয়াল নাশকতা ও বর্বরোচিতভাবে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার মহোৎসবের টালমাটাল পরিস্থিতি দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবেলা করে দেশে তখন শান্তি ফিরিয়ে আনা ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও দৃঢ় নেতৃত্বে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ভয়াল সহিংসতা-নাশকতার পথ পেরিয়ে গণতন্ত্রের নবযাত্রার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চতুর্থ বছর আজ পূর্ণ হলো। গতবারের মতো এবারও ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে আজ শুক্রবার মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে কিছুটা হলেও উত্তাপ ছড়িয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। আজকের দিনটিকে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন করবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এ উপলক্ষে আজ ঢাকাসহ সারাদেশে সভা-সমাবেশ ও বিজয় শোভযাত্রা বের করবে দলটি। অন্যদিকে ৫ জানুয়ারিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ আখ্যায়িত করে বিএনপিও নানা কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। রাজধানী ঢাকা ছাড়া বিএনপি আজ দেশের সব জেলা ও মহানগরে কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। বড় দু’দলই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশ কাউকেই অনুমতি দেয়নি। বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের ইতিহাসে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটি বিভিন্ন দিক থেকে অত্যন্ত আলোচিত। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে ৫ জানুয়ারি দেশের ইতিহাসে একটি অনন্য দিন হলেও এই তারিখটির নাম শুনলেই দেশের মানুষ এখনও আতঙ্কিত হয়ে উঠে। কেননা ২০১৪ ও ২০১৫ সালে এই ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াল নাশকতা, সহিংসতা ও পুড়িয়ে মানুষ হত্যার মহোৎসবের কথা স্মরণ করলে এখনও দেশের মানুষ উৎকণ্ঠি হয়ে উঠে। কায়মনে প্রার্থনা করে, এমন ভয়াল ও বীভৎস পরিস্থিতি দেশে কখনও না আসে। চার বছর আগের এই দিনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ তাদের সমমনা কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। শুধু কি তাই। এ নির্বাচনকে বানচালের নামে যে সহিংসতা, নাশকতা ও নির্বাচন প্রতিহতের নামে বীভৎস কায়দায় পুড়িয়ে মানুষ হত্যার মহোৎসব এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জ্বালানো, হাজার হাজার বৃক্ষনিধন, যাত্রী বোঝাই রেল-লঞ্চে অগ্নিসংযোগ, রেললাইন উপড়ে ফেলার মতো নাশকতার ঘটনা ঘটানো হয়েছে, যা অতীতে কোন নির্বাচনের সময় ঘটেনি। শত ষড়যন্ত্রের পরও নির্বাচন হয়েছে, বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় রয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগসহ চৌদ্দ দলীয় জোটের সরকার। নির্বাচন বানচাল করতে না পারলেও সরকারের প্রথম বছর পূর্তি দিবস অর্থাৎ ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে বিএনপি-জামায়াত জোট আবারও একটানা ৯৩ দিন ধরে চালানো ভয়াল সহিংসতা, নাশকতা, শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার বীভৎসতা প্রত্যক্ষ করেছে দেশের মানুষ। কিন্তু নির্বাচন বানচালে ব্যর্থ বিএনপি-জামায়াত জোট টানা হত্যাযজ্ঞ-নাশকতা চালিয়েও সরকারকে সামান্য টলাতে পারেনি। ২০১৫ সালের মার্চের পর থেকে এ পর্যন্ত রাজনীতির মাঠে আর শক্তভাবে দাঁড়াতে পারেনি বিএনপি। চার বছর আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সফলতা নিয়ে যাত্রা শুরু করা ক্ষমতাসীন সরকার চতুর্থবর্ষ পূর্তির সময়ও রাজপথে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে উন্নয়ন-অগ্রগতির মাধ্যমে মাথা তুলে দাঁড়াতেই দেয়নি সরকার। পর পর দুই বছর ধরে ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা, পেট্রোল বোমা, অগ্নিসংযোগ, ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এখনও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তখন বার্ন ইউনিটে দুই শতাধিক মানুষের পোড়া শরীর আর আর্তনাদ দেখে চোখে পানি ধরে রাখতে পারেননি অনেকে। টানা তিন মাসের এই নাশকতা দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। আজ সেই ৫ জানুয়ারি। দিবসটিকে ঘিরে আবারও আজ মাঠে নামছে দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দিনটিকে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ আখ্যা দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ আখ্যা দিয়ে বিএনপি আজ সারাদেশে নানা কর্মসূচী নিয়ে সাংগঠনিক মহড়া দেখানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে অতীতের অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে আজ ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকাসহ দেশের কোথাও এ দিনটিকে সামনে রেখে কেউ যাতে কোনরূপ সহিংসতা বা নাশকতা চালাতে না পারে- সেজন্য দেশব্যাপী গড়ে তোলা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে সূত্রে জানা গেছে, ঢাকাসহ সারাদেশেই আজ কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। যেকোন ধরনের নাশকতা-সহিংসতার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নিয়েই মাঠে থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কেউ কোন ধরনের সহিংসতা-নাশকতার চেষ্টা করলে পুলিশ বাহিনীকে তা শক্ত হাতে তাদের দমনের নির্দেশও দেয়া হয়েছে। ঢাকাসহ সারাদেশের মাঠ দখলে রাখবে আ’ লীগ ॥ রাজধানীতে আজ শুক্রবার দুটি স্থানে সমাবেশ এবং দেশের সব জেলা ও উপজেলা সদরে আনন্দ শোভযাত্রা, সভা-সমাবেশের মাধ্যমে আজ গণতন্ত্রের বিজয় দিবস পালন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এবং বনানী পূজার মাঠে পৃথক দুটি সমাবেশ শেষে বিজয় র‌্যালি বের করবে দলটি। এ দুটি সমাবেশে এবং বিজয় র‌্যালিতে মানুষের ঢল নামিয়ে আজ রাজধানীতে বড় ধরনের সাংগঠনিক মহড়া দেখাতে চায় আওয়ামী লীগ। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে দেশ ও জাতির স্বার্থে বিএনপি যাতে আজ দেশের কোথাও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য রাজধানীসহ সারাদেশেই সতর্ক অবস্থানে থেকেই বিজয়োৎসব পালন করবে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি সারাদেশেই আজ সভা-সমাবেশ ও বিজয় শোভাযাত্রার মাধ্যমে মাঠ দখলে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক সপ্তাহ আগেই সারাদেশে তৃণমূল নেতাদের চিঠির মাধ্যমে পুরো জানুয়ারি মাস রাজপথ দখল এবং যেকোন ধরনের নাশকতা-সন্ত্রাস জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মোকাবেলার নির্দেশ দিয়েছেন। বিএনপিও আজ মাঠে থাকবে ॥ নির্বাচনের চতুর্থ বর্ষপূর্তির দিন আজ শুক্রবার বিএনপিও মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। ঢাকা ব্যতিরেকে দেশের সব জেলা-মহানগর ও উপজেলায় দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ আখ্যায়িত করে কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচী দিয়েছে দলটি। সোহরাওয়ার্দীর পরিবর্তে আজ শুক্রবার নয়াপল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ডিএমপিতে আবেদন করেছেন বিএনপির নেতারা। এ নিয়ে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। বিএনপি নেতারা জানান, শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে ঘরোয়া পরিবেশে আজ কর্মসূচী পালনের জন্য তাদের অনুরোধ জানিয়েছেন ডিএমপি কর্তৃপক্ষ।
×