ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ হযরত ঈসা আলায়হিস্ সালাম -অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ুম

প্রকাশিত: ০৩:১৭, ৫ জানুয়ারি ২০১৮

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ হযরত ঈসা আলায়হিস্ সালাম  -অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ুম

(গত সপ্তাহের পর) হযরত র্ম্ইায়াম আলায়হাস সালাম তখন আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করলেন এই অস্বাভাবিক ভবিতব্যের কথা বলে। কুরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে : সে (র্ম্ইায়াম) বলল : হে আমার রব, আমাকে কোন পুরুষ স্পর্শ করেনি, আমার সন্তান হবে কিভাবে? তিনি (আল্লাহ্্) বললেন, এমনিতেই, আল্লাহ যা ইচ্ছে সৃষ্টি করেন। ইযা কাদা আমরান ফাইন্নামা ইয়াকুলু কুন ফাইয়া কুন তিনি যখন কিছু স্থির করেন তখন বলেন, ‘হও’ এবং তা হয়ে যায়। (সূরা আলে ‘ইমরান : আয়াত ৪৭)। হযরত র্ম্ইায়াম আলায়হাস্্ সালাম কোন পুরুষের সংস্পর্শ ছাড়া গর্ভবতী হলেন। সমাজের কথা ভেবে তিনি লজ্জা-শরমে মুষড়ে পড়লেন। তিনি দূরবর্তী স্থানে (বায়তুলহাম বা বেথলেহাম) গিয়ে নির্জন বাস করতে লাগলেন। কুরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে : অতঃপর সে (মারইয়াম) গর্ভে ওকে ধারণ করল, তারপর তা নিয়ে এক দূরবর্তী স্থানে চলে গেল। প্রসব বেদনা তাকে এক খেজুর গাছের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য করল। সে বলল, হায় এর আগে যদি আমি মরে যেতাম ও লোকজনের স্মৃতি থেকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হতাম। (সুরা মারইয়াম : আয়াত ২৩)। হঠাৎ অলক্ষ্য থেকে ফেরেশতার কণ্ঠ ভেসে এলো। কুরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে : (হে মারইয়াম) আপনি দুঃখ করবেন না, আপনার পাদদেশে আপনার রব এক পানির নহর প্রবাহিত করে দিয়েছেন, আপনি খেজুর গাছের কান্ডে নাড়া দিন, তা আপনাকে সুপক্ব খেজুর দেবে। সুতরাং আপনি আহার করুন, পান করুন এবং চোখ জুড়িয়ে নিন। কোন লোক দেখলে বলবেন : ইন্নি নার্য্তাু র্ল্রহ্্িমানি সওমান আমি করুণাময়ের উদ্দেশে সিয়াম (মৌনতা) অবলম্বনের মানত করেছি। সুতরাং আজ আমি কিছুতেই বাক্যালাপ করব না। (সুরা মারইয়াম : আয়াত ২৪-২৬)। যথাসময় হযরত ঈসা (আঃ) জন্মগ্রহণ করলেন বায়তুলহাম বা বেথলেহেম নামক স্থানে। শিশুকে নিয়ে হযরত মারইয়াম বাড়ি ফিরলেন। সন্তান কোলে করে কুমারী মারইয়ামকে দেখে ইয়াহুদীরা ছিঃ ছিঃ করতে লাগল। কিন্তু আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্তা মা মারইয়াম অটল রইলেন। কুরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে : অতঃপর সে সন্তানকে নিয়ে তার কওমের নিকট উপস্থিত হলো। ওরা বলল হে মারইয়াম। তুমি তো অদ্ভুত কাণ্ড করে বসেছ। হে হারুন-ভগ্নি (এখানে হারুন-ভগ্নি বলার উদ্দেশ্য মারইয়াম হযরত মূসা ‘আ.-এর ভাই হারুন-এর বংশোদ্ভূত ছিলেন) তোমার পিতা তো অসৎ লোক ছিলেন না এবং তোমার আম্মাও ব্যাভিচারিণী ছিলেন না। অতঃপর মারইয়াম সন্তানের দিকে ইঙ্গিত করল। তখন ওরা বলল : ঐ টুকু কোলের শিশুর সঙ্গে আমরা কি করে কথা বলব? সে (শিশু ঈসা) বলল। আমি তো আল্লাহ্র বান্দা, তিনি আমাকে কিতাবসহ নবী করেছেন। যেখানেই আমি থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন, তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যতদিন জীবিত থাকি সালাত ও যাকাত আদায় করতে। (সূরা মারইয়াম : আয়াত ২৭-৩১)। হযরত ঈসা আলায়হিস সালাম বনী ইসরাইলকে হিদায়াত দান করার জন্য আবির্ভূত হন। তিনি ৩০ বছর বয়সে উপনীত হয়ে আল্লাহর পথে আসার জন্য তাঁর সম্প্রদায়কে আহ্বান করা শুরু করেন। তিনি প্রথমত কয়েকজন জেলেকে তাঁর অনুসরণ করতে বলেন। তারা তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাঁর অনুগামী হয়। তিনি অনুধাবন করলেন যে, ইয়াহুদীরা তাঁর বিরোধিতা করবে। তাই তিনি তাঁর লোকজনের কাছে সাহায্য চাইলেন : কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : যখন ঈসা তাদের (ইয়াহুদীদের) অবিশ্বাস অনুধাবন করল তখন সে বলল : আল্লাহর পথে কেউ কী আমার সাহায্যকারী আছ? হাওয়ারীগণ (তাঁর বিশ্বস্ত অনুসারী) বলল, আমরাই আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহতে ইমান এনেছি, আমরা আত্মসমর্পণকারী। (সূরা-আলে ইমরান : আয়াত ৫২)। কুরআন মজিদে হযরত ঈসা (আ.) এর কয়েকটি মুজিযার উল্লেখ রয়েছে, যেমন শিশু ঈসার কথা বলা, কাদা-মাটির তৈরি পাখি-পুতুলকে জীবন্ত পাখিতে রূপান্তরিত করা, জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ ব্যাধিগ্রস্তকে হাতের পরশে আরোগ্য করা, মৃতকে জীবিত করা, খাঞ্চাভর্তি আসমানী খাদ্য আল্লাহর কাছ থেকে চেয়ে আনা ইত্যাদি। বাইবেলে বলা হয়েছে, তিনি আবির্ভূত হন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ইসরাইলী মেষ পালকে (Scattered Sheep of Israel) একত্র করার জন্য। তিনি বলেছেন, তোমরা শুনেছ, ব্যাভিচার কর না। আমি বলি, যখন কেউ লালসাপূর্ণ চোখে কোন মেয়ের দিকে তাকাল সে তার অন্তরে ব্যাভিচারী হলো। তিনি আরও বলেন, তোমার ডান চোখ যদি তোমার ক্ষতি সাধন করে তাহলে সেটা উপড়িয়ে ফেল, ডান হাত অপরাধ করলে তা কেটে ফেল কেন না সারা দেহ নরকে পোড়ার চেয়ে অঙ্গচ্ছেদ করা শ্রেয়। (মথি : ৫ : ২৭-৩০)। বারোজন ব্যক্তিকে তিনি তার শিষ্য হিসেবে মনোনীত করেন। কুরআন মজিদে এদেরকে হাওয়ারী বলা হয়েছে। হযরত ঈসা (আ.) কে মুষ্টিমেয় কিছু লোক বিশ্বাস করলেও ইয়াহুদী যাজক শ্রেণী এবং উচ্চ শ্রেণীর লোকেরা তাঁর বিরুদ্ধে উঠে-পড়ে লেগে যায়, এমনকি রোমান রাজশক্তিও তাঁর বিরুদ্ধে চলে যায়। রাজা তাঁকে শূলবিদ্ধ করে হত্যার নির্দেশ দেয়। কুরআন মজিদের বর্ণনা অনুযায়ী রাজা তাঁকে হত্যা করতে ব্যর্থ হয়। তাঁরই চেহারার অন্য একজনকে শূলবিদ্ধ করে তারা আত্মতৃপ্তি লাভ করে। কুরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে : তারা (ইয়াহুদীরা) লানতগ্রস্ত হয়েছে তাদের কুফরীর জন্য এবং র্মাইয়ামের বিরুদ্ধে গুরুতর অপবাদ আনয়নের জন্য এবং ‘আমরা আল্লাহ্্র রসূল ঈসা মসীহ ইবনে মারইয়ামকে হত্যা করেছি’ তাদের এই উক্তির জন্য। অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি, ক্রুশবিদ্ধও করেনি, কিন্তু তাদের এরূপ বিভ্রম হয়েছিল। যারা তার সম্বন্ধে মতভেদ করেছিল তারা নিশ্চয়ই এ সম্বন্ধে সংশয়ে ছিল। এ সম্পর্কে অনুমানের অনুসরণ ছাড়া তাদের কোন জ্ঞানই ছিল না। এটা নিশ্চিত যে, তারা তাকে হত্যা করেনি, বরং আল্লাহ্্ তাকে তাঁর নিকট তুলে নিয়েছেন এবং আল্লাহ্ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা : আয়াত ১৫৬-১৫৮)। ঐ সময় তাঁর বয়স ছিল ৩৩ বছর। (সমাপ্ত) লেখক : পীর সাহেব দ্বারিয়াপুর শরীফ উপদেষ্টা ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহাম্মদ (সা.)
×