ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মোহামেডানের অধিনায়ক, তারকা ফরোয়ার্ড জাহিদ হাসান এমিলি

অবসরের আগে লীগে শততম গোল করতে চাই

প্রকাশিত: ০৬:২১, ৪ জানুয়ারি ২০১৮

অবসরের আগে লীগে শততম গোল করতে চাই

রুমেল খান ॥ ভারতীয় উপমহাদেশের ফুটবল খেলা প্রথম চালু করে ইংরেজরা। ১৮২১ সালে মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত মিলিটারি বনাম মুম্বাই আইল্যান্ডের খেলাটিকে উপমহাদেশের প্রথম প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল ম্যাচ হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে অনেকের মতেÑ মুম্বাইয়ের আগে এলাহাবাদ, কলকাতা ও ঢাকায় ফুটবল প্রসার লাভ করে। ১৮৯৩ সাল থেকে ঢাকা ও কলকাতায় বাঙালীদের মধ্যে ফুটবল খেলার উদ্দীপনা ও উৎসাহ দেখা দেয়। ইংরেজ আমলে ১৯১৫ সাল থেকে ঢাকায় প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগ শুরু হয়। পাকিস্তান আমলে ঢাকায় প্রথম লীগ শুরু হয় (ঢাকা লীগ) ১৯৪৮ সাল থেকে। আর বাংলাদেশ আমলে প্রথম লীগ শুরু হয় ১৯৭২ সাল থেকে। ১৯৯৩ সালে নাম বদলে প্রিমিয়ার ডিভিশন লীগ এবং ২০০৭ সালে নাম বদলে ‘বি’ লীগ ২০০৯ সালে ‘বাংলাদেশ লীগ’ এবং ২০১২ সালে নতুন নামকরণ হয় ‘বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ’ (বিপিএল) নামে। ১৯১৫ থেকে ২০১৭। এই সময়ের মধ্যে যত লীগ অনুষ্ঠিত হয়েছে বা এই লীগগুলোতে যত ফুটবলার খেলেছেন, তাদের মধ্যে লীগে কমপক্ষে ১০০ গোল করেছেন মাত্র চারজন! এদের সবাই স্বাধীন বাংলাদেশ আমলের ফুটবলার। এই চারজনের নাম শুনে নিন: কাজী মোঃ সালাহ্উদ্দিন, শেখ মোঃ আসলাম, ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব এবং আলফাজ আহমেদ। ১৭৭ গোল করে শীর্ষে আছেন আসলাম। এদের কাউকে টপকানোর সাধ্য-সাহস না থাকলেও অন্তত এদের কাতারে নিজের নামটি লিপিবদ্ধ করে স্মরণীয় কীর্তি গড়তে চান যিনি, তিনি জাহিদ হাসান এমিলি। ২০০৩ সাল থেকে লীগ খেলে আসছেন পিরোজপুরে জন্ম নেয়া ৫ ফুট ৬ ইঞ্চির অধিকারী এমিলি। তার ভাষ্যমতেÑ বি লীগ, বাংলাদেশ লীগ এবং বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ... সব লীগ মিলিয়ে এ পর্যন্ত গোল করেছেন ৮৫টি। তার মানে লীগে ব্যক্তিগত শততম গোল করতে হলে আরও ১৫ গোল করতে হবে তাকে। এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘যদি আর কোন ইনজুরিতে না পড়ি, তাহলে অবশ্যই এই মাইলফলক স্থাপন করতে পারব।’ কিন্তু প্রশ্ন উঠতেই পারে, গত কয়েক বছর ধরে অফ ফর্মে ও গোলখরায় ভোগা এই স্ট্রাইকারের শততম গোলের স্বপ্নপূরণ আদৌ সম্ভব হবে কি না। তাছাড়া বয়সটাও তো আর থেমে নেই। গত ২৫ ডিসেম্বর পালন করেছেন নিজের ৩০-তম জন্মদিন। এমিলি বর্তমানে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের অধিনায়ক-ফরোয়ার্ড। অথচ চলতি বিপিএল ফুটবলে বিস্ময়করভাবে মাত্র একটি গোল করেছেন তিনি (১ ডিসেম্বর, বিপক্ষ আরামবাগ, ৪৯ মিনিটে ২-০ গোলে লিড নেয় মোহামেডান। ডিফেন্ডার মোহাম্মদ লিংকনের কর্নার বক্সের মধ্যে লাফিয়ে উঠে হেড করেন এমিলি। তার সেই হেড আরামবাগের ডিফেন্ডার রকির মাথায় লেগে বল ঢুকে যায় জালে। ম্যাচে অবশ্য দারুণ খেলে ২-২ গোলে ড্র করে আরামবাগ)। ১১ ম্যাচ খেলে (যদিও দল খেলেছে ২০ ম্যাচ)। এই ১১ ম্যাচে তিনি মাঠে ছিলেন ৮০৩ মিনিট। সত্যিই এমন হতাশাজনক পারফরমেন্স এমিলির নামের সঙ্গে বেমানান। সব মিলিয়ে লীগে এমিলির গোল পাওয়ার পরিসংখ্যান আরও করুণ। লীগে তিনি গোল করেন ৪১ ম্যাচ পর! ভাবা যায়? ২০১৫ সালের ১৬ আগস্ট রহমতগঞ্জের বিপক্ষে ৯১ মিনিটে গোল করে শেখ রাসেলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর থেকেই গোল পাচ্ছিলেন না তিনি। এর কারণটা ব্যাখ্যা করেন এমিলি, ‘আগের মৌসুমে আমার হাঁটুতে সার্জারি হয়েছিল, তাই সেবার মাঠেই নামতে পারিনি। সার্জারির আগে রাসেলের হয়ে ৩-৪টি ম্যাচ খেলি, তাও বদলি হিসেবে। ম্যাচগুলো খেলি নিজের আগ্রহেই এবং জোর করে। এর ফল শুভ হয়নি। পরে উপলব্ধি করি আনফিট হয়ে খেলাটা মোটেও ঠিক হয়নি। এরপর হাঁটুর ইনজুরি রিকভার করতে অনেক সময় লেগে যায় আমার। যাহোক এখন আমি পুরোপুরি ফিট।’ ফিট হলেও গোল পেতে এত দেরির কারণ কি? ‘দেখুন, আমাকে সবকিছু শুরু করতে হয়েছে একেবারে শূন্য থেকে। তাছাড়া ভাগ্য বলেও একটা কিছু আছে। সেটাই সহায় হচ্ছিল না আমার। অবশেষে গোল করে বুক থেকে যেন পাষাণ পাথরের বোঝা নেমে গেল! আত্মবিশ্বাসও বাড়ল। পয়েন্ট টেবিলে দলের অবস্থাও অনেক ভাল। সব মিলিয়ে আমি এখন অনেক নির্ভার।’ মোহামেডানের আরও দুই ম্যাচ বাকি (প্রতিপক্ষ মুক্তিযোদ্ধা ও ব্রাদার্স)। ওই দুই ম্যাচে দলীয় জয়ের পাশাপাশি নিজের গোল করাও অব্যাহত রাখতে মুখিয়ে এমিলি। তবে আক্ষেপে পুড়ছেন লীগে চতুর্থ স্থান নিশ্চিত করতে না পারায় এএফসি কাপে মোহামেডানের অংশ নেয়ার আশা ধূলিসাত হয়ে যাওয়ায়। এই হতাশা কাটাতে চান লীগ শেষে স্বাধীনতা কাপ ফুটবলে অংশ নিয়ে। এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘যতদূর জানি, স্বাধীনতা কাপে কোন বিদেশী খেলতে পারবে না। সেক্ষত্রে আমার গোল করা সুযোগ আরও অনেক বেড়ে যাবে। এই আসরে ভাল খেলে আবারও জাতীয় দলে ফিরতে চাই। এখানে ফেরার হয়তো আমার এটাই শেষ সুযোগ। এটা কাজে লাগাতে আপ্রাণ চেষ্টা করব।’ গোলখরার সময়টা কেমন ছিল? ‘মা-বাবা, স্ত্রী তারানা, সতীর্থ, সব ভাই ও কোচ রাশেদ পাপ্পু এই সময়টাতে আমাকে অনেক মেন্টালি সাপোর্ট দিয়েছে। কোচ পাপ্পু ভাই আমাকে আলাদাভাবে অনুশীলন করাতেন।’ এখন দেখার বিষয়, অবসর নেয়ার আগে লীগে নিজের শততম গোলটি করার স্বপ্নপূরণ করতে পারেন কি না এমিলি।
×