ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কলাপাড়ায় ফ্রিস্টাইলে নদী-খাল দখল

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৪ জানুয়ারি ২০১৮

কলাপাড়ায় ফ্রিস্টাইলে নদী-খাল দখল

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ৩ জানুয়ারি ॥ যেন প্রাকৃতিক জলাধার দখলের হিড়িক চলছে। নদী-খাল-পুকুর থেকে ডোবা পর্যন্ত কোন কিছুই রক্ষা পাচ্ছে না। কেউ বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের কিংবা জমি বানাচ্ছে। কেউ বা আবার বহুতল ভবনসহ বাড়ি-ঘর তৈরি করছে। উপজেলা ভূমি প্রশাসন এসব উদ্ধারে কখনও কখনও অভিযান করলেও থেমে নেই দখল সন্ত্রাস। আর এই দখল এখন আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণেœর অন্যতম কারণ হয়েছে। এসব রোধে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নেয়া না হলে একদিকে সরকারী খাল-পুকুর-নদী ভরাট হয়ে বেহাতের পাশাপাশি পরিবেশ প্রতিবেশ নষ্ট হচ্ছে। অপরদিকে ব্যবহারের পানির সঙ্কট ছাড়াও কৃষিকাজেও চরম বিপর্যয় নেমে আসছে। সরকারের নদী-খাল-ডোবা নিয়ন্ত্রণহারা হয়ে যাচ্ছে প্রশাসনের। উপকূলীয় সাগরপাড়ের কলাপাড়ার জনপদে এখন এই দখল সন্ত্রাস মানবসৃষ্ট ভয়াবহ বিপর্যয় শঙ্কায় পরিণত হয়েছে। সরেজমিনে না দেখলে বোঝার উপায় নেই দখলের কারণে পরিবেশ-প্রতিবেশসহ কৃষিব্যবস্থা বিপর্যয়ের হাল-হকিকত। নিশানবাড়িয়া-চাকামইয়া দোন নদীর তীরসহ দখল করে বহুতল ভবনসহ স্থাপনা তোলা হচ্ছে। একই দশা কলাপাড়া পৌরশহরের আন্ধারমানিক নদীর। শিববাড়িয়া নদীর দীর্ঘ এলাকা উচ্চ আদালতের নির্দেশে এখনও টিকে আছে। তবে তীরের বহু এলাকা দখল হয়ে গেছে। বালিয়াতলীতে টিয়াখালী নদীর তীর দখল শুরু হয়েছে। কলাপাড়া পৌরশহরের মাঝখান দিয়ে তিন দিকে বহমান খালটির অর্ধেকটা দখল করে তোলা হয়েছে হাজারও স্থাপনা। সমানতালে বাড়ি-ঘর দোকানপাট তোলা হয়েছে। বাদুরতলীর দীর্ঘ খালটির দুই পাড়ের অন্তত ১০ কোটি টাকার ভরাট এলাকা দখল করে নেয়া হয়েছে। বাবলা তলা বাজারের স্লুইস সংযুক্ত বড়-বালিয়াতলীর দীর্ঘ খালটিতে অসংখ্য বাঁধ দিয়ে দখল করে মাছের ঘের করা হয়েছে। এমন কোন ইউনিয়ন নেই যে খালটিতে বাঁধ দিয়ে দখল কিংবা ভরাট করা না হয়েছে। পানি উন্নয়নবোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়সূত্রে অন্তত তিন শ স্লুইস সংযুক্ত ছোট-বড় খাল রয়েছে। যার শতাধিক ভরাট ও দখল সন্ত্রাসে মৃতপ্রায়। আবার স্থানীয় ভূমি অফিস বহু খালকে চাষযোগ্য কৃষিজমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত দেয়ার কারণেও খাল দখল হয়ে গেছে। আর এখন যেসব খাল রয়েছে তাও বাঁধ দিয়ে এক শ্রেণীর প্রভাবশালী মাছের চাষ করায় সাধারণ মানুষ থাকছে সুবিধা বঞ্চিত। বাদুরতলী খালের দুই পাড়ের বাসিন্দারা এক লিখিত অভিযোগে বলেছেন স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল দীর্ঘ খালে একাধিক বঁাঁধ দিয়েছে। এমনকী বড় শিকদার বাড়ি এলাকায় কালভার্ট এর নিচে পানি চলাচলের পথ পর্যন্ত মাটি ভরাট করে আটকে দিয়েছে। এখন সাধারণ মানুষের খালে ঝাকি জাল দিয়েও মাছ ধরার সুযোগ নেই। আর বাঁধ দেয়ায় খালের পানির প্রবাহ বন্ধ রয়েছে। স্লুইস সংযুক্ত এখালটির পানির প্রবাহ সচল রাখতে তারা প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বাবলাতলা বাজার থেকে অনন্তপাড়া যেতে দক্ষিণ পাশের একটি সরকারী জলাধার দখল করে একাধিক প্রভাবশালীমহল বহুতল ভবন করছে। মহিপুর ইউনিয়নে নিজামপুরে একাধিক খালে বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ আটকে দেয়া হয়েছে। মিঠাগঞ্জের তেগাছিয়া, চরপাড়া, আজিমদ্দিন, ময়ুরের, আবগঞ্জের খাল দখল করে অসংখ্য মাছের ঘের করা হয়েছে। নীলগঞ্জের গামইরতলা গ্রামের কৃষক মঞ্জু হাওলাদার, আব্দুর রব ঘরামী জানান, খাল ভরাটের কারণে সম্প্রতি মাত্র তিন দিনের বৃষ্টিতে জমানো পানিতে কোটি কোটি টাকার পাকা ধান নষ্ট হয়ে গেছে। পর্যটনপল্লী গঙ্গামতির পাশে বেড়িবাঁধের বাইরে সাগরের সঙ্গে সংযুক্ত তিন কিমি একটি খালে বাঁধ দিয়ে দখল করে ধুলাসার আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতা। ফলে চরের তিন শতাধিক জেলে পরিবারের দূুর্যোগকালীন আশ্রয়স্থল হারানোর শঙ্কা দেখা দেয়। এমনকী ওই এলাকার প্রাকৃতিক খালে কাউকে মাছ পর্যন্ত ধরতে দিচ্ছেন না ওই মহলটি। চাপলী বাজার থেকে কাউয়ারচর বটতলা যেতে সড়কের দক্ষিণ দিকে খালটি দখল করে এক আওয়ামী লীগ নেতা বাড়িঘর করেছেন। এমন দখলদারিত্ব ঠেকাতে কাউয়ার চরের খালের বঁাঁধ কেটে দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) খন্দকার রবিউল ইসলাম। তিনি আরও জানান যখন যেখানে খাল-ডোবা দখল করে স্থাপনা তোলার অভিযোগ পাওয়া যায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হয়।
×