ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকার্স সভায় ব্যাংক দখলে আতঙ্কিত এমডিরা

আগ্রাসী ঋণ বন্ধের নির্দেশ গবর্নরের

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৪ জানুয়ারি ২০১৮

আগ্রাসী ঋণ বন্ধের নির্দেশ গবর্নরের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গত বছরে দুটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে আকস্মিকভাবে বড় পরিবর্তন হয়েছে। ওই পরিবর্তনের ফলে চাকরি হারাতে হয়েছে শীর্ষ নির্বাহীদেরও। তাই ব্যাংকিং খাতে আকস্মিক পরিবর্তনের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি)। অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতা চেয়েছেন এমডিরা। বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় গবর্নর ফজলে কবিরের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এমডিদের সংগঠন এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)। গবর্নর সভাপতিত্বে বুধবারের সভায় সব ব্যাংকের এমডিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত ঋণ বিতরণ, আমদানি-রফতানি, ডলারের বিনিময় মূল্য, রেমিটেন্স পাঠানোর খরচ কমানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সূত্র জানায়, গত বছরের শুরুতে ইসলামী ব্যাংকের মালিকানায় বড় পরিবর্তন হয়। আকস্মিকভাবে রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় চেয়ারম্যানÑভাইস চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পদে বড় পরিবর্তন আসে। সোসাল ইসলামী ব্যাংকেও একই প্রক্রিয়া চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য পদে বড় পরিবর্তন আসে। সংশ্লিষ্টরা এটাকে ‘ব্যাংক দখল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। ওই দুই ঘটনায় এমডিরাও চাকরি হারিয়েছেন। আরও কয়েকটি ব্যাংকে এ ধরনের পরিবর্তনের গুজব রয়েছে। ব্যাংকার্স সভা শেষে এবিবির চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, গত বছর কয়েকটি ব্যাংকের আকস্মিক পরিবর্তন হয়েছে। এতে ম্যানেজমেন্ট ও আমানতকারীরা ভীত হয়ে পড়েছেন। পরিবর্তন অবশ্যই কাম্য। তবে আকস্মিকভাবে কোন পরিবর্তন হওয়া উচিত নয়। গবর্নরের কাছে আমরা বলেছি। গবর্নর বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। সভা সূত্র জানায়, সাধারণ ব্যাংকগুলো সংগৃহীত আমানতের সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকগুলো সংগৃহীত আমানতের সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে পারে। কোন কোন ব্যাংক এর চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে। যার ফলে ঋণের প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি হচ্ছে। এই আগ্রাসীভাবে ঋণ বিতরণ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন গবর্নর। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এসকে সুর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, অর্থনৈতিক উন্নতির স্বার্থে ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ ঋণ বিতরণ বাড়তে পারে। কিন্তু বর্তমানে ঋণ বিতরণ বৃদ্ধি ১৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এতে তারল্য সঙ্কট হতে পারে। এজন্য ঋণ আমানতের অনুপাত (এডিআর) কমানো হতে পারে। আগামী মুদ্রানীতি ঘোষণা এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়া হবে। সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, অনুমোদিত মাত্রার তুলনায় বেশি হারে ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। ঋণ যেহারে বাড়ছে সেই হারে আমানত বাড়ছে না। এজন্য তারল্য কমে যাচ্ছে। এটি প্রতিরোধে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন গবর্নর। ঋণ বিতরণের অনুমোদিত মাত্রা কমিয়ে আনা হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তিনি আরও বলেন, আমদানি ব্যয় অনেক বেশি হচ্ছে। সেই তুলনায় রফতানি ও রেমিটেন্স বাড়ছে না। এজন্য চলতি হিসাব ভারসাম্যে বড় অঙ্কের ঘাটতি রয়েছে। ঘাটতি পূরণে রফতানি ও রেমিটেন্স বাড়ানোর বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। মালয়েশিয়ায় এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর সার্ভিস চার্জ কমিয়ে প্রতি লেনদেনে সর্বোচ্চ ২০ টাকা করতে বলা হয়েছে। এছাড়া ডলারের বিক্রয় মূল্য সমহারে নির্ধারণের জন্য ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে। এসকে সুর চৌধুরী জানান, ডলারের বিনিময় মূল্য নির্র্ধারণে সব ব্যাংকে সতর্ক করা হয়েছে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানি না প্রয়োজনী পণ্য আমদানিতে অর্থায়ন করতে বলা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকের কর্মী নিয়োগে আবেদনের ক্ষেত্রে ফি নেয়ার জন্য ব্যাংকগুলো দাবি করেছিল। সেই দাবি নাকোচ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মুদ্রানীতি নিয়ে পর্যালোচনা এবং আগামী মুদ্রানীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সাইবার হামলার বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে।
×