ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ছিনতাইয়ে সেঞ্চুরি!

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৪ জানুয়ারি ২০১৮

ছিনতাইয়ে সেঞ্চুরি!

আজাদ সুলায়মান ॥ বয়স তার ত্রিশ। এই বয়সেই সেঞ্চুরি করে ফেলেছে ছিনতাইয়ের। একশটি ছিনতাইয়ের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এই দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারীর নাম ফয়সাল রহমান সোহেল। এত ছিনতাই করার পরও সে ছিল ধরা ছোঁয়ার বাইরে। চোরের দশ দিন, সাধুর একদিন প্রবাদের মতোই শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ল গত সোমবার নববর্ষের দিন। মিরপুরের বিআরটিএ’র সামনে হঠাৎ এক রিক্সাযাত্রীর ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনতাইয়ের সময় হাতেনাতে আটক। তারপর গণপিটুনি, থানা পুলিশে সোপর্দ। প্রচ- জেরার মুখে স্বীকারোক্তি- এই ক্ষুুদ্র জীবনেই ১০০টি ছিনতাই করার রেকর্ড করা হয়ে গেছে। তার সরল স্বীকারোক্তিতে পুলিশের তল্লাশি চলে বাসায়। অভিযানের সময় পুলিশ বিস্মিত। তার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় ৬০টি ভ্যানিটি ব্যাগ, পার্স ও অন্যান্য মালামাল। এ সবই অবৈধ। ছিনতাইয়ে সংগ্রহ করা এই ব্যাগগুলো সে বাসায় রেখেছিল। কিছু ব্যাগ সে বিক্রি করেছে, কিছু স্বজনদের মাঝে বিতরণ করেছে। দুর্ধর্ষ এই ছিনতাইকারীর গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর থানার বসনিটোলায়। পিতার নাম মজিবর রহমান। অবশ্য তার নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রে রাজশাহীর ঠিকানাও রয়েছে। কাফরুলের বাসায় সে স্ত্রীসহ ভাড়ায় থাকত। স্ত্রী প্রেগন্যান্ট হওয়ায় তাকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে মাস খানেক আগেই। কাফরুল থানার পুলিশ জানিয়েছে, তার বিরুদ্বে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। সে পেশাদার ছিনতাইকারী হলেও মূলত সে টানা পার্টির সদস্য। চলন্ত রিক্সা ও মোটর সাইকেল আরোহীদের কাছ থেকে ব্যাগ টেনে চম্পট দেয়াই তার মূল পেশা। সে সাধারণত মিরপুর ১০ থেকে মিরপুর ১৪ নম্বর পর্যন্ত সড়কে ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার কাজ করে। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত চলতো তার ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার অভিযান। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিনতাইয়ের কাজে জড়িত বলেও সন্দেহ করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এসআই ওয়াহিদুল হাসান সুমন জানান, তারা সোহেলকে আটক করার পর থানায় এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু প্রথম দিকে সে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকারই করছিল না। এ সময় তার ব্যাগের ভেতরে একটি স্কুলে ভর্তির কাগজপত্র পাওয়া যায়। ওই কাগজপত্রে থাকা ঠিকানায় গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, কয়েকদিন আগে এই কাগজসহ ব্যাগটি টানা পার্টির এক সদস্য ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, সোহেলকে নিয়ে তার মিতালী হাউজিংয়ের ১৬ নম্বর বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানেই পাওয়া যায়- ৬০টি ভ্যানিটি ব্যাগ ও পার্স। এগুলোর মধ্যে স্বর্ণালঙ্কার, ২৫০টি চাবি, নগদ প্রায় ২৪ হাজার টাকা, বিভিন্ন মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র, অনেকগুলো ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড, ৫০-৬০টি সিম পাওয়া যায়। এসবই ছিনতাইয়ের। গত কয়েক বছরের ছিনতাইয়ের জমাকৃত এসব মালামাল। পুলিশ বলছে, গত ৩ বছর ধরে পেশাদার ছিনতাইকারী হিসেবে কাজ করছে সে। এখনও পর্যন্ত সে সহযোগীদের নাম বলতে গড়িমসি করছে। তবে ওই মহল্লাতেই তার এক ঘনিষ্ঠ ছিনতাইকারীর সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। উল্লেখ্য, গত ১৮ ডিসেম্বর যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জে এক রিক্সা আরোহী দম্পতির ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় আরাফাত নামে তাদের কোলের শিশু ছিটকে রাস্তায় পড়ে গিয়ে মারা যায়। এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হলে ছিনতাইকারী ও টানা পার্টির সদস্যদের ধরতে বিশেষ অভিযানের নামে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীতে সাঁড়াশি অভিযানের মুখে টানা অভিযানে অন্তত দেড় শতাধিক ছিনতাইকারী ও টানা পার্টির সদস্য ধরা পড়ে।
×