ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে ফের ধাওয়া, পাল্টাধাওয়া

জাল ডকুমেন্ট তৈরি করে মামলা সাজানো হয়েছে ॥ খালেদার আইনজীবী

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৪ জানুয়ারি ২০১৮

জাল ডকুমেন্ট তৈরি করে মামলা সাজানো হয়েছে ॥ খালেদার আইনজীবী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ষষ্ঠ দিনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। যুক্তি উপস্থাপনকালে খালেদা জিয়ার সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতে বলেন, জাল ডকুমেন্ট (দলিল) তৈরি করে এ মামলা সাজানো হয়েছে। ডকুমেন্ট ঘষামাজা করে তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, জাল দলিল তৈরি করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদ। আর এই জাল নথির সপক্ষে আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন হারুন-অর-রশিদসহ পাঁচজন সাক্ষী। মিথ্যা বানোয়াট ও কাল্পনিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এ মামলা সাজানো হয়েছে। মামলার এজাহারের তারিখ, অনুসন্ধানের তারিখ ও অভিযোগপত্র দেয়ার সময় উল্লেখ করে বলেন, আইনের বিধান অনুযায়ী ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ করার কথা। অথচ ৩৯৫ কার্যদিবস সময় নেয়া হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে জাল দলিল তৈরি করা হয়। বুধবার পুরান ঢাকার বকশিবাজারের কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ জজ ড. মোঃ আকতারুজ্জামানের আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে এ জে মোহাম্মদ আলী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। যুক্তি উপস্থাপন শেষে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। এদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় হাজিরা শেষে গুলশানের বাসায় ফেরার পথে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীদের পুলিশ ধাওয়া দিলে এর জবাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, পুরো মামলাটি কাল্পনিক। ঘষামাঝা করে মিথ্যা ডকুমেন্ট তৈরি করে এ মামলা তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, তারা (তদন্ত কর্মকর্তা) মামলার মূল নথি না পাওয়ায় সিজন করে কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছে। মামলটি যে ভুয়া আমরা আদালতে তা উপস্থাপন করেছি। তিনি বলেন, যারা মিথ্যা তথ্য দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আবেদন করব। তিনি বলেন, আদালতে আজ পর্যন্ত মূল নথি পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু ফটোকপি ঘষামাজা করে প্রসিকিউশন এই মামলাটি দায়ের করেছে। ১৯৯৩ সালের ঘটনা জালিয়াতি করে ২০০৮ সালে মামলাটি সৃজন করা হয়। এর আগে আদালতে হাজিরা দিতে বেলা ১১টা ৩৮ মিনিটে আদালতে পৌঁছান খালেদা জিয়া। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন- প্রবীণ আইনবিদ জমির উদ্দিন সরকার, খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মেহাম্মদ আলী, আবদুর রেজ্জাক খান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, জয়নুল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, কায়সার কামাল, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, জাকির হোসেন ভূঁইয়া, রাগীব রউফ চৌধুরী প্রমুখ। শুনানিকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রমুখ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় আরও একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (পলাতক), হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর সাবেক নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। খালেদা জিয়া, সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ এ মামলায় জামিনে আছেন। খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান গত নয় বছর ধরে দেশের বাইরে, তার বিরুদ্ধে এ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। এছাড়া কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় হাজিরা শেষে গুলশানের বাসায় ফেরার পথে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীদের পুলিশ ধাওয়া দিলে এর জবাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এর আগেও আদালতে হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার বেলা তিনটার পর বকশিবাজারের ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে হাজিরা শেষে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরছিলেন খালেদা জিয়া। অন্যদিনের মতো এ সময় খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা যোগ দেয়। তার গাড়িবহর হাইকোর্ট মাজার গেট অতিক্রম করার সময় পেছন থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া করে পুলিশ। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।পরে হাইকোর্টের সামনে অবস্থিত কদম ফোয়ারা, মৎস্য ভবন মোড়, দিয়ে রূপসী বাংলা হোটেলের দিক দিয়ে গুলশানের উদ্দেশে চলে যান খালেদা জিয়া।
×