ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আশঙ্কা গোয়েন্দা সংস্থার

বিএনপি ৫ জানুয়ারি সহিংস নাশকতা চালাতে পারে

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৪ জানুয়ারি ২০১৮

বিএনপি ৫ জানুয়ারি সহিংস নাশকতা চালাতে পারে

শংকর কুমার দে ॥ বিএনপি-জামায়াত জোট ৫ জানুয়ারি সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পরস্পর বিরোধী কর্মসূচী ঘিরে ব্যাপক সহিংসতা ও নাশকতা চালাতে পারে বলে গোয়েন্দা সংস্থার আশঙ্কা। এ জন্য বিএনপিকে কোন ধরনের সভা সমাবেশের অনুমতি না দেয়ার জন্য সুপারিশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। বিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে রক্তক্ষয়ী সহিংস ও নাশকতা চালিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটায়। এর প্রতিবাদে আগামী ৭ জানুয়ারিতে শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সভা করবে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে উপস্থিত থাকতে পারেন। বিএনপি-জামায়াত জোটের রক্তক্ষয়ী সহিংসতা ও নাশকতায় যারা হতাহত হয়েছেন তাদের তালিকা তৈরি করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। হতাহতদের হাতে ক্ষতিপূরণ হিসাবে নগদ টাকা সাহায্য করার যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তার জন্য সারাদেশের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করছে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশ সদর দফতর ও গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারিকে সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াত জোটের নাশকতা ও নৈরাজ্য ঘটানোর প্রস্তুতি বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রতিবেদন দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে রাজধানীতে কোন সমাবেশ করার এখনও অনুমতি দেয়নি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গী গোষ্ঠীগুলো ৫ জানুয়ারির সমাবেশের আড়ালে মাঠে নামার জন্য তৎপরতা শুরু করেছে। এ জন্য বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের যুদ্ধাপরাধীর পক্ষের দল ও উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ দলগুলোর পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ সমর্থন ও সহযোগিতা পাচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, বুধবার পর্যন্ত বিএনপিকে ঢাকা মহানগরীতে কোন সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতর। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, আওয়ামী লীগ আগামী ৭ জানুয়ারি শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোট যে সহিংসতা চালিয়ে হতাহত করেছে তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হতাহতদের পরিবারবর্গের হাতে ক্ষতিপূরণ হিসাবে আর্থিক সাহায্য তুলে দিতে দিতে পারনে। এ জন্য সারাদেশে সেই সময়ে যারা হতাহত হয়েছিলেন তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তালিকা তৈরি করে তাদের শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ক্ষতিগ্রস্ত ও তাদের পরিবারের হাতে ক্ষতিপূরণ তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত জোটের রাজনৈতিক সহিংসতায় ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে সারাদেশে ৩৯ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১৩ পুলিশ, ২ জন নির্বাচন কমিশনের অফিসার, আওয়ামী লীগ সমর্থক ও ১৮ দলীয় জোট সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং পেট্রোল বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন সহস্রাধিক। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে তখন দুই জন নির্বাচন কমিশনের নিহত দুই অফিসারের পরিবারকে ও আহত তিন শতাধিক কর্মকর্তাকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছিল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও বিএনপি-জামায়াত জোটের ১৮ দলীয় জোট নির্বাচন বয়কট করে প্রতিরোধের ডাক দিয়ে সহিংসতা শুরু করে। ২০১৩ সালের ২৫ নবেম্বর নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরপরই বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট লাগাতার অবরোধ ও হরতালের ডাক দেয়। ওইদিন থেকে ১০ জানুয়ারি দুর্বৃত্তদের ককটেল ও পেট্রোল বোমা হামলায় ২১ জন নিহত ও ৬৫ জন আহত হন। পরে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে আরও ১৮ জন মারা যান। সারাদেশে নির্বাচন-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযানে অনেক সাধারণ মানুষ গণগ্রেফতারের শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্বাচন-পরবর্তী ধর্মীয় সংখ্যালঘু নাগরিকদের ওপর হামলা করা হয়। নির্বাচনের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাগরিকদের ওপর হামলা হয়। এ সময় তাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে আক্রমণ করা হয়। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে প্রতিটি নির্বাচনের পরই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা লাভের জন্য পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হয়েছে। এ হামলা ঘটনায় বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। যেসব দুর্বৃত্ত এসব অপরাধ করেছে, তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার দাবি জানানো হলেও এ পর্যন্ত দুর্বৃত্তদের বিচারের কাঠ গড়ায় দাঁড় করানো সম্ভবপর হয়নি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে দশম সংসদ নির্বাচনের দিনটিকে সামনে রেখে প্রতিবছরই আওয়ামী লীগ তার জোট নৈরাজ্য ও সহিংসতা দিবস এবং বিএনপি-জামায়াত জোট গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করে আসছে। এই দিনটিকে সামনে রেখে প্রতিবছরের মতো এবারও প্রতিবেদন দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা।
×