ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আত্মহননে প্ররোচিত করা হয়েছে ১৮ জনকে

’১৭ সালে দেশে চার শ’ নারীর আত্মহত্যা, চেষ্টাকারী ১৮

প্রকাশিত: ০৪:২১, ৪ জানুয়ারি ২০১৮

’১৭ সালে দেশে চার শ’ নারীর আত্মহত্যা, চেষ্টাকারী ১৮

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নেপালী নাগরিক বিনিশা গত ১৯ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে টার্ম-২ পরীক্ষার কক্ষ থেকে বেরিয়ে হোস্টেলে গিয়ে আত্মহত্যা করেন। পরে পুলিশ গিয়ে হোস্টেল কক্ষ থেকে বিনিশার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে জানা যায়, পরীক্ষা অসুদপায় অবলম্বনে ধরা পড়ায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হওয়ায় তিনি আত্মহত্যা করেন। এর আগে ২৫ নবেম্বর সাভার মডেল থানায় কর্মরত এক নারী পুলিশ কর্মকর্তা এসআই তাহমিনা বেগমের (৩৩) ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই পুলিশ অফিসার মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকা অবস্থায় আত্মহননে যান। মৃতের বাবা আব্দুস সালাম অভিযোগ করে জানান, ‘স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে আমার মেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।’ ঠিক এভাবেই প্রতিদিন দেশে কোন না কোন নারী মানসিক বিষণœতা কিংবা নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন। ঝরে যাচ্ছে হাজারো তাজা প্রাণ। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল এইড উপপরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির ২০১৭ সালের নারী ও শিশুর আত্মহত্যার এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, ৪শ’ নারী আত্মহত্যা করেছে, ১৮ জন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে এবং ২৩ জনকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পারিবারিক, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, দাম্পত্য কলহ ইত্যাদি কারণেই বেশিরভাগ নারী ও পুরুষ আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপে দেখা গেছে, আত্মহত্যার প্রবণতার দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। ২০১১ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৩৪তম। বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতরের দেয়া তথ্যানুযায়ী সারাদেশে বিগত চার বছরে আত্মহত্যা করেছে ৪ হাজার জন। এর মধ্যে ২০১৪ সালে ১০ হাজার ২শ’, ২০১৫ সালে ১০ হাজার ৫শ’, ২০১৬ সালে ১০ হাজার ৬শ’ ও ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৮ হাজার ২শ’ জন আত্মহত্যা করেছে। পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী ২০১৪ সালে গলায় ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে ৬ হাজার ৭শ’ জন ও বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন ৩ হাজার ৫শ’, ২০১৫ সালে গলায় ফাঁসি দিয়ে ৭ হাজার ১শ’ ও বিষ খেয়ে ৩ হাজার ৪শ’, ২০১৬ সালে গলায় ফাঁসি দিয়ে ৭ হাজার ২শ’ ও বিষ খেয়ে ৩ হাজার ৪শ’ এবং ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত গলায় ফাঁসি দিয়ে ৫ হাজার ৬শ’ ও বিষ খেয়ে ২ হাজার ৬শ’ নারী-পুরুষ আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যা প্রতিরোধে সক্রিয় সোসাইটি ফর ভলান্টারি এ্যাক্টিভিটিজের (শোভা) সাম্প্রতিক একটি জরিপে আত্মহত্যার ২৪ কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে পারিবারিক ও দাম্পত্য কলহ, চরম দারিদ্র্য, অন্যের কষ্টদায়ক মন্তব্য, প্রেমে ব্যর্থতা, ঋণগ্রস্ত থাকা, ব্যবসায় ক্ষতি, বাল্যবিয়েজনিত সমস্যা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, জটিল রোগ, যৌতুক চেয়ে নির্যাতন, অন্যায় তালাক, যৌন নির্যাতন, মিথ্যা অপবাদ বা সন্দেহ, পরীক্ষায় অকৃতকার্য, প্ররোচনা, অবমাননা ও অবহেলা, উপহাসের পাত্র হওয়া, পরকীয়া, স্বামী-স্ত্রীতে অনৈক্য, বহু বিয়ে, উল্লেখযোগ্য। সংস্থাটি বলছে, আত্মহত্যার আগে প্রত্যেকেই নিজের মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে। চরম সিদ্ধান্তহীনতায় যে ব্যক্তি পরাজিত হয়, সে-ই আত্মহত্যা করে।
×