ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কার চাই

বিক্ষোভ ইরানের ৪০ শহরে

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ৪ জানুয়ারি ২০১৮

বিক্ষোভ ইরানের ৪০ শহরে

ইরানে মঙ্গলবারও সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলে। এই বিক্ষোভে এ পর্যন্ত ২১ জন মারা গেছে। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা চলমান অস্থিরতার জন্য বিদেশী শত্রুদের দায়ী করেছেন। ছয়দিনে এ বিক্ষোভ ইরানের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। কট্টর ও সংস্কারপন্থীদের মধ্যকার দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব ও ক্ষমতা ভাগাভাগি সঠিকভাবে না হওয়ায় বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট শুরু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিউইয়র্ক টাইমস। ইরানের বর্তমান বিক্ষোভ কেবল বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে নয় বরং পুরো রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি তারা ক্ষুব্ধ। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য কর্তৃপক্ষের শোনা উচিত বলে বিশ্লেষকরা বলছেন। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এ বিক্ষোভের জন্য বিদেশী শত্রুদের দায়ী করলেও নির্দিষ্ট করে কারও নাম বলেননি। প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য শোনা হবে, এ অধিকার তাদের আছে। বিক্ষোভকারীদের প্রতি শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। রুহানি একজন মধ্যপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত। ২০০৯ সালের পর এটি দেশটিতে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। বর্তমান বিক্ষোভকে অনেকে ২০০৯ সালের গ্রিন মুভমেন্টের সঙ্গে তুলনা করছেন। ইরানে গত ৯ বছরে সরকার এই মাত্রায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হয়নি। ২০০৯ সালের বিক্ষোভের তুলনায় বর্তমান বিক্ষোভের কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন তখন বিক্ষোভ হয়েছিল কেবল রাজধানী তেহরানে। বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিল শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণী। বর্তমান বিক্ষোভের পুরোভাগে আছে মূলত পল্লী অঞ্চলের হতাশাগ্রস্ত মানুষ। তারা মনে করে সব রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে শহরের উচ্চবিত্ত শ্রেণী। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক তরুণ। এদের মধ্যে ৪০ শতাংশ কর্মহীন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরাক, সিরিয়া ও লেবাননে প্রভাব ধরে রাখতে তেহরান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শত শত কোটি ডলার ব্যয় করেছে। যে কারণে অর্থনেতিক সঙ্কটের মুখে পড়েছে ইরান। রুহানির প্রস্তাবিত বাজেটের একটি অংশ গত মাসে প্রকাশের পর থেকেই মূলত বিক্ষোভের সূচনা। ইরানের বাজেটের একটি অংশ সব সময়ই গোপন থাকে, সাধারণ মানুষ সেটি জানতে পারে না। কিন্তু এবারই প্রথমবারের মতো নিয়ম ভঙ্গ করে গোপন বাজেটের একটি প্রকাশ করা হয়। ইরানের জনগণ উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করে সেনাবাহিনী, রেভলুশ্যনারি গার্ড, কট্টরপন্থী ও ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সম্পর্কিত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বরাদ্দ অনেক বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের জন্য ভর্তুকি কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর বাজেট এক হাজার এক কোটি ডলার বা ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে এ বাজেটে। এই তথ্য প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেসেজ পাঠানোর এ্যাপ টেলিগ্রামের মতো মাধ্যমে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে তরুণ জনগোষ্ঠীর ক্ষোভ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্তৃপক্ষের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। প্রাদেশিক শহর ও পল্লী অঞ্চলে যুগ যুগ ধরে বাস করে আসা লোকজন এবার ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। ঐতিহ্যগতভাবে এরা ধার্মিক ও রক্ষণশীল। এছাড়া এদের ধর্মীয় শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতার মূল শক্তি বিবেচনা করা হয়। নিম্ন আয়ের এসব লোকজনও এখন ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে। তারা এখন পরিবর্তন চাইছে। মাশহাদ থেকে কোম পর্যন্ত প্রায় ৪০টি শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে রাজধানী তেহরান তুলনামূলক শান্ত রয়েছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি আঞ্চলিক ইস্যুগুলোকে ব্যস্ত না থেকে কর্তৃপক্ষ এখন অভ্যন্তরীণ সমস্যার দিকে নজর দিক।
×