ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জালনোট ঠেকাতে যৌথ টাস্কফোর্স

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৪ জানুয়ারি ২০১৮

জালনোট ঠেকাতে যৌথ টাস্কফোর্স

বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনৈতিক মেরুদ- ভেঙ্গে দিচ্ছে জালনোট ও জাল রুপী। তাই জালনোট এবং জালিয়াতচক্র ঠেকাতে এবং উভয় দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে যৌথ টাস্কফোর্স গঠনের মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ঐকমত্যে পৌঁছেছে দেশ দুটি। গোয়েন্দা সংস্থার মতে, জালনোট ও জাল রুপী তৈরি করে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে জাল রুপী আইএস রুপী নামেও সমধিক পরিচিত। সরকারী টাকশালে আইএসআই জালনোট ও জালরুপী তৈরি করে তা এজেন্টদের মাধ্যমে সীমান্ত এলাকায় ছড়িয়ে দেয় তাদের লক্ষ্য দুই দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করা। আইএসআইর পাশাপাশি দুই দেশের অভ্যন্তরেও গড়ে উঠেছে জালনোট ও জালরুপী তৈরির চক্র। এ চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে গ্রেফতার হলেও আবার সহজেই আদালতের ফাঁক গলিয়ে জামিনে বেরিয়ে গিয়ে আবার সে একই কাজে লিপ্ত হয়। এদের যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা যেত তাহলে এই ক্ষতিকর প্রবণতা থেকে তারা দূরে সরে যেত। আইএসআইর লক্ষ্য আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষতি করা এবং জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের সহায়তা করে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিনষ্ট করা যে জন্য তারা এজেন্টের মাধ্যমে সর্বত্র জালনোট ছড়িয়ে দিতে সচেষ্ট রয়েছে। কাজেই আমাদের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এ ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানো ও তথ্য অনুসন্ধানের বিষয়টি সবিশেষ ভাবতে হবে। বাংলাদেশ ও ভারত জালনোট সংক্রান্ত যৌথ টাস্কফোর্সের প্রতিনিধিরা যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেনÑ জালনোটের উৎস চিহ্নিত এবং জালনোট তৈরি ও বিতরণকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ কাজ করার এবং উভয় দেশের কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণ, কাজের অভিজ্ঞতা এবং তাৎক্ষণিক গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের ব্যাপারে, তা জালনোট নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়। সবচেয়ে বড় কথা উভয় দেশের মধ্যে যদি সহযোগিতার মনোভাব বৃদ্ধি পায় তাহলে আইএসআইর এ চক্রান্ত বন্ধ করা এমন কোন কঠিন কাজ নয়। জালনোট প্রতিবেশী দুটি দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে, তাই এ ব্যাপারে এখনই সাবধান হতে হবে। কাজ করতে হবে দ্রুতগতিতে। সীমান্তে এবং দেশের অভ্যন্তরে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি এবং আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে জালনোট চক্রের বিস্তার রোধ করতে হবে। টাকার ডিজাইন পরিবর্তন, বড় নোটগুলোর সিকিউরিটি আরও বৃদ্ধি ও কঠিন বা কঠোর করার মধ্য দিয়ে হয়ত সাময়িক সুফল লাভ সম্ভব কিন্তু এতে স্থায়ী সুফল কতটা লাভ করা সম্ভব তা ভেবে দেখতে হবে। জালিয়াতচক্র যা সহজেই নকল করতে পারবে তার প্রতিরোধের ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি ও কঠোর করাই যুক্তিযুক্ত। কেননা সব প্রতিবন্ধকতা দূর করার সহজ কৌশল তাদের রপ্ত করতে সময় লাগে না। আর যেখানে আইএসআইর মতো একটি শক্তিশালী সংস্থা এর পেছনে কাজ করছে, কাজেই এদের চক্রান্ত এবং উদ্দেশ্যের বিষয়টি সবিশেষ ভাবতে হবে। বরং আমরা সন্দেহভাজন চক্রান্তকারীদের ব্যাপারে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সাহায্য করতে এবং জালনোট ও জালরুপী প্রস্তুতকারী এবং বিতরণকারীদের নিয়মিত অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে তাদের চক্রান্ত গুঁড়িয়ে দিতে পারে। জাল টাকা ও জালরুপীর ঘটনায় অন্তত পাঁচ শতাধিক মামলা তদন্তনাধীন আছে। এ মামলাগুলো দ্রুত যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যাতে সহজে ছাড়া পেতে না পারে তার শাস্তি নিশ্চিতের ব্যবস্থা করতে হবে। ছগির মাস্টার, লিয়াকত আলী, জামান বিশ্বাস, জাহাঙ্গীর আলম এদের সমন্বয়ে যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে তা পুরোপুরি ধ্বংস এবং জালনোট ও জালরুপীর খুচরা এবং পাইকারি সরবরাহকারীদের রুট বন্ধ করে দিতে হবে। কাপড়ের মাধ্যমে জাল টাকা তৈরির কাজে জড়িত রয়েছে ৮ থেকে ১০টি চক্র। এদের ব্যাপারেও সবর্ত্র সর্তকতা অবলম্বন এবং দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আশ্রয়ে আনা জরুরী। জালনোট বিস্তার দেশের অর্থনীতির জন্য এক মারাত্মক অশনি সঙ্কেত। কাজেই এ ব্যাপারে এখনই সতর্কমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় এর ক্ষতিকর প্রভাব সমাজ ও অর্থনীতিতে সংক্রমিত হবে। সন্ত্রাস দমন ও নিয়ন্ত্রণে জালনোটের বিস্তার রোধ করা একান্তই প্রয়োজন। এখন ভারত-বাংলাদেশ এ ব্যাপারে যে যৌথ টাস্কফোর্স গঠনের মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে, তা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই জালনোট চক্রের দৌরাত্ম্য নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। আমরা আমাদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রাখার স্বার্থে সব চক্রান্তের মোকাবিলায় যদি একযোগে কাজ করতে পারি তাহলে সেটাই হবে আমাদের জন্য শান্তি ও স্বস্তির।
×