ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশে নতুন বাজার ॥ ওষুধবর্ষ

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ৪ জানুয়ারি ২০১৮

বিদেশে নতুন বাজার ॥ ওষুধবর্ষ

প্রতি বছরের মতো এবারও ইংরেজী নববর্ষের প্রথম দিনটিতে রাজধানীর সেরে বাংলা নগরে শুরু হয়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই যে, দিনে দিনে মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলা ব্যাপক জনসমাগমে ধন্য হয়ে উঠছে। বিদেশী দেশের অংশগ্রহণের পাশাপাশি বেচাবিক্রিও বাড়ছে। বাড়ছে বিভিন্ন দেশে বিবিধ পণ্যদ্রব্য রফতানির অর্ডার। এটি নিঃসন্দেহে বাণিজ্যমেলার একটি অন্যতম অর্জন। ইতোমধ্যে দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। তারা নিত্যনতুন ভোগ্য ও সেবাপণ্যের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। উৎপাদকরাও ক্রমশ ঝুঁকে পড়ছেন নতুন বিনিয়োগসহ পণ্যদ্রব্য উৎপাদনের দিকে। এতে করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি বাড়ছে। পাশাপাশি বাড়ছে কর্মসংস্থান। এটা তো নিশ্চয়ই শ্লাঘার বিষয় যে, শুধু বাণিজ্যমেলা উপলক্ষেই বেশ কয়েক হাজার তরুণ-তরুণীর সাময়িক কর্মস্থানের সুব্যবস্থা হয়ে থাকে। যাদের অধিকাংশই উচ্চশিক্ষার্থী ও মেধাবী। তবে গত কয়েক বছর ধরে উচ্চারিত রাজধানীর পূর্বাচলে স্থায়ী আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা পিছিয়েছে আরও দু’বছর। সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় এটির দ্রুত বাস্তবায়ন আবশ্যক। বর্তমানে বিশ্বের ১৯৯টি দেশে ৭৫০টি বাংলাদেশী পণ্যদ্রব্য রফতানি করা হচ্ছে। দেশের অর্থনীতি এখন বিশ্বের ৪৬তম বৃহত্তম অর্থনীতি। এরপরও স্বীকার করতে হবে যে, দেশে উৎপাদিত পণ্যের বৈচিত্র্য কম, মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর সময়োচিত আহ্বানটি তাৎপর্যপূর্ণ বৈকি। তিনি বলেছেন, বহির্বিশ্বে আমাদের পণ্যের নতুন দেশে নতুন বাজার খুঁজতে হবে। সে দেশের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য দেশে তৈরি করে রফতানি করতে হবে। দেশের মানব সম্পদের তাতে যথাযথ কর্মসংস্থান হবে। অন্যদিকে বাড়বে রফতানি। তবে একই সঙ্গে পণ্যের মান, গুণাগুণ ও ব্র্যান্ডিং নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে বিদেশের বাজার ধরে রাখা যাবে না। এ বছর দেশের ওষুধশিল্পকে প্রধানমন্ত্রী ‘প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার’ বলে ঘোষণা করেছেন। গত বছর এটি ছিল চামড়াখাত। তবে শুধু বছর ঘোষণা করলেই হবে না, এ খাতে যথাযথ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, চামড়া খাত এ শিল্প অদ্যাবধি কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। সাভারে চামড়া শিল্প নগরী হাজারীবাগ থেকে স্থানান্তরসহ নানা সমস্যা রয়ে গেছে এখনও। ওষুধ শিল্পের ক্ষেত্রে যেন অনুরূপ না ঘটে। কেননা, এটি একটি অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তির মানসম্পন্ন সূক্ষ্ম মানবিক শিল্পদ্রব্য। মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে ব্যর্থ হওয়ায় গত বছর হাইকোর্ট ২৮টি কোম্পানিকে এ্যান্টিবায়োটিকসহ তিন রকম ওষুধের উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। অথচ বাংলাদেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে যে কয়েকটি খাত নিয়ে গর্ববোধ করতে পারে ওষুধ শিল্প তার অন্যতম। বর্তমানে এই শিল্প খাতটি প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চলেছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ ওষুধ উৎপাদিত হয় দেশেই। আরও যা শ্লাঘার বিষয় তা হলো, বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশে উৎপাদিত ওষুধ রফতানিও হচ্ছে। তবে এ কথাও সত্যি যে, বেশ কয়েকটি নামী-দামী ওষুধ কোম্পানির পাশাপাশি কিছু অখ্যাত কোম্পানিও আছে, যারা তৈরি করছে মানহীন ওষুধ, এমনকি এ্যান্টিবায়োটিক। কোন কোন কোম্পানির ভেজাল ওষুধ খেয়ে শিশুসহ বয়স্কদের মৃত্যুর অভিযোগও আছে। অভিযুক্ত কোম্পানির মালিকদের জেল-জরিমানাসহ কারখানা বন্ধ করেও দেয়া হয়েছে। দুঃখজনক হলো, এর পরও মানহীন ওষুধ তৈরি ও বাজারজাতকরণের অভিযোগ উঠেছে কয়েকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে। ওষুধ শিল্প একটি স্পর্শকাতর বিষয়। মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্নটি এর সঙ্গে জড়িত ওতপ্রোতভাবে। পাশাপাশি খাদ্য ও পথ্যের বিষয়টিও প্রসঙ্গত উঠতে পারে। ভেজাল খাদ্য যেমন মানুষের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে; অনুরূপ ভেজাল, নকল বা মানহীন ওষুধ বিপন্ন করে তুলতে পারে মানুষের জীবনকে। আর তাই ওষুধের মান নিয়ে হেলাফেলা তথা শৈথিল্য প্রদর্শনের বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। এ বিষয়ে ওষুধ কোম্পানিগুলোকে আরও দায়িত্বশীল ও সচেতন হতে হবে।
×