ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে ২শ’ ৭৬ রাইস মিল কালো তালিকায়

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৩ জানুয়ারি ২০১৮

যশোরে ২শ’ ৭৬ রাইস মিল কালো তালিকায়

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ দুঃসময়ে সরকারকে অসহযোগিতা করার খেসারত দিতে হচ্ছে ২শ’ ৭৬ রাইস মিলকে। সরকার এই রাইস মিলগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শাস্তি হিসেবে চলতি আমন মৌসুমে তাদের কাছ থেকে কোন চাল নিচ্ছে না সরকার। জানা গেছে, গত বোরো মৌসুমে সারাদেশে চালের বাজার ছিল উর্ধমুখী। এ অবস্থায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত রাইস মিলগুলোর বেশিরভাগ চাল দেয়ার জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেনি। আবার যেসব রাইস মিল চুক্তি করেছিল তাদের অনেকে শেষ পর্যন্ত চাল সরবরাহ করেনি। ফলে, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি সরকার। এ কারণে বেকায়দায় পড়তে হয়। দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় দেশীয় বাজার থেকে সরকার চাল সংগ্রহ করতে নানা কৌশল অবলম্বন করে। উর্ধমুখী বাজারে যারা সরকারকে চাল দিয়ে সহযোগিতা করে গোপনে তাদের তালিকা তৈরি করা হয়। একইসঙ্গে যারা চাল সরবরাহ করেনি তৈরি করা হয় তাদের তালিকাও। অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলায় সর্বমোট ৩শ’ ৬২টি লাইসেন্সকৃত রাইসমিল রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে সদর উপজেলায় ৫৮, অভয়নগরে ৩৫, মণিরামপুরে ৪৭, কেশবপুরে ৩৯, বাঘারপাড়ায় ৬০, ঝিকরগাছায় ৩১, শার্শায় ৪১ ও চৌগাছায় ৫১টি। গত বোরো মৌসুমে ৩শ’ ৬২টি রাইস মিলের মধ্যে মাত্র ৯৯টি চাল সরবরাহ করতে সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। চুক্তি মোতাবেক বোরো মৌসুমে ৯৯টি রাইস মিল থেকে ১৩ হাজার ২শ’ ৯৯ মেট্রিকটন চাল সরবরাহ করার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লোকসানের অজুহাত তুলে ১৩টি রাইসমিল কোন চাল সরবরাহ করেনি। বাকি ৮৬টি রাইসমিল থেকে মাত্র ২ হাজার ১শ’৩৮ মেট্রিকটন চাল পাওয়া যায়। ঘাটতি পড়ে ১১ হাজার ১শ’৬১ মেট্রিকটন চাল। জেলার এই ঘাটতি বাইরে থেকে এনে মেটাতে হয়। এ অবস্থায় সরকার ২শ’৭৬টি রাইসমিল কালো তালিকাভুক্ত করেছে। সরকারী নির্দেশনা দেয়া হয়েছে চলতি আমন মৌসুমে যেন তাদের কাছ থেকে কোন চাল নেয়া না হয়। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন লোকসানের অজুহাত তোলা ২শ’ ৭৬টি রাইস মিল কর্তৃপক্ষ। কতদিন তাদের এই কালো তালিকায় থাকতে হবে তা নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তারা। এদিকে, জেলা খাদ্য বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি আমন মৌসুমে জেলার আট উপজেলা থেকে মোট ২ হাজার ২শ’ মেট্রিকটন চাল কেনা হবে। যেসব মিল থেকে এ চাল নেয়া হবে তার মধ্যে রয়েছে কেশবপুরে ২৪, বাঘারপাড়ায় ১, সদরে ১৪, অভয়নগরে ১০, মণিরামপুরে ১৫, ঝিকরগাছায় ৯, শার্শায় ১০ ও চৌগাছায় ৩টি। জেলায় লাইসেন্সকৃত রাইস মিলের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বাঘারপাড়ায় ৬০টি। অথচ চলতি আমন মৌসুমে এ উপজেলায় সবচেয়ে কম, মাত্র একটি রাইস মিল থেকে চাল নেয়া হচ্ছে। আরও জানা গেছে, গত বোরো মৌসুমে সঙ্কটের সময় দেশের উত্তরাঞ্চলের মিল মালিকরা সরকারকে বেশিরভাগ চাল সরবরাহ করেছিল। এ কারণে চলতি আমন মৌসুমে সরকার তাদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। আমন মৌসুমে বেশিরভাগ চাল তাদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে। সরকারী কর্মকর্তাদের বক্তব্য, ‘দুঃসময়ে যারা সহযোগিতা করেছে, বর্তমানে তাদের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে জেলা খাদ্য কর্মকর্তা নকিব সাদ সাইফুল ইসলাম বলেন, সঙ্কটের সময় যারা এগিয়ে আসেনি তাদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সরকারী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত এদের কাছ থেকে কোন কিছু নেয়া হবে না।
×