ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এমপিওভুক্তির দাবিরত শিক্ষকরা মন্ত্রীর আশ্বাস প্রত্যাখ্যান করলেন

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৩ জানুয়ারি ২০১৮

এমপিওভুক্তির দাবিরত শিক্ষকরা মন্ত্রীর আশ্বাস প্রত্যাখ্যান করলেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনার পর আন্দোলনরত নন-এমপিও শিক্ষকদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলনরত নন-এমপিও শিক্ষকরা। তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে এই মুহূর্তেই ৫ হাজারেরও বেশি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার দাবি তুলেছেন। শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির ব্যবস্থা নিতে অর্থমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়ার কথা জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ মঙ্গলবার সকালেই জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করতে যান। শীঘ্রই এমপিওর ঘোষণা দিয়ে মন্ত্রী তাদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানালেও শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করে কর্মসূচী অব্যাহত রাখেন। এ সময় ‘নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের নেতারা এরপর বলেন, এমপিওভুক্তির সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন চলবে। এমপিওভুক্তির দাবিতে গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করে আসা দেশের বিভিন্ন এলাকার কয়েক শ’ শিক্ষক গত রবিবার সকাল থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন। তাদের অনশন ভাঙ্গাতেই জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনশনস্থলে যান শিক্ষামন্ত্রী। এ সময় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ আলমগীর ছাড়াও অর্থমন্ত্রীর একজন প্রতিনিধি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর, পরিদর্শন ও নীরিক্ষা অধিদফতরের (ডিআইএ) উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মন্ত্রীর গাড়ি বহর দেখে তাকে স্বাগত জানিয়ে সেøাগান দিতে থাকেন শিক্ষকরা। এ সময় মন্ত্রী ভিড় ঠেলে ঠেলে অসুস্থ কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের খোঁজখবর নেন। পরে শিক্ষক নেতাদের পাশে দাঁড়িয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অনেক চেষ্টার পর তিনি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছ থেকে সম্মতি আদায় করতে পেরেছেন। মন্ত্রী বলেন, ‘আমি কথা দিচ্ছি এমপিওভুক্তির দাবি পূরণ করে দেব। টাকা, পয়সা, অর্থের ব্যাপার আছে। অর্থমন্ত্রী রাজি হয়েছেন, আমরা কাজ এগিয়ে রেখেছি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, গত কয়েক মাস ধরে আমি অর্থমন্ত্রীকে কনভিন্স করার চেষ্টা করছি, বলেছি নীতিমালা করে দেন ওটা মেনেই কাজ করব। রোজ চাপ দিচ্ছি, রোজ দেখা করছি। সোমবার নীতিমালা করে দিয়ে বলেছি এটা দিলাম, আপনারা দেখেন। আপনারা কষ্টে আছেন, আমিও কষ্ট পাচ্ছি। গত রাতে আমি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি সম্মতি দিয়েছেন, এমপিওভুক্ত যারা হননি তাদের এমপিওর ব্যবস্থা করা হবে। এটা আমাদের বিজয়, প্রথম স্বীকৃতি। নীতিমালা বাস্তবায়ন করার ব্যবস্থা নেব। কাজ শুরু করেছি। আন্দোলনরত শিক্ষকরা এ সময় মন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন ‘কবে, কবে’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। কেউ কেউ সেøাগান দেন- ‘এমপিও না নিয়ে ঘরে ফিরে যাব না’, শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা- মানি না মানব না। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী নীতিমালা করে এমপিওভুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত করার জন্য সময় লাগবে উল্লেখ করে বলেন, আপনারা আর এভাবে কষ্ট না করে বাড়িতে ফিরে যান। আপনারা শিক্ষা পরিবারের সদস্য, আমি একজন কর্মী। আপনারা খুবই কষ্ট করছেন, দুঃখিত। আপনারা কয়েক দিন ধরে এখানে আছেন। শিক্ষকরা আমাদের মাথার মনি, সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি, নিয়ামক শক্তি। শিক্ষকদের প্রতি অবেহলা কেউ গ্রহণ করে না। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দেশের বাইরে গেছেন জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তবে যাওয়ার আগে তিনি এমপিওভুক্তির বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করছি। মন্ত্রীর বক্তবের এক পর্যায়ে শিক্ষকরা হট্টগোল শুরু করলে সচিব সোহরাব সোহাইন বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী বাছাই করে এমপিও দেয়া হবে, শীঘ্রই হবে। তারা শিক্ষকদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে চলে যাওয়ার পর শিক্ষক নেতা বিনয় ভূষণ মাইকে বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য আমরা প্রত্যাখ্যান করলাম। মন্ত্রী আমাদের সুনির্দিষ্ট কোন আশ্বাস দিতে পারেননি। বহুবার আমাদের আশ্বাস দেয়া হয়েছে, কিন্তু কাজ হয়নি। এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত আমরা আমরণ অনশন চালিয়ে যাব। উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১০ সালে এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করে সরকার।
×