ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা;###;বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা চর স্থায়ী রূপ পাবে ;###;গড়ে তোলা হবে সবুজ বেষ্টনী ;###;একনেকে বনায়নসহ ১৬ প্রকল্প অনুমোদন

নতুন চরে আবাসন

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৩ জানুয়ারি ২০১৮

নতুন চরে আবাসন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করতে বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা বিভিন্ন চরকে স্থায়ী রূপ দিতে চায় সরকার। ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাস ঠেকাতে এসব চরে সবুজ বেষ্টনী তৈরি, কার্বন মজুদ বৃদ্ধি, আবাসস্থল এবং সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্রাণী এবং জীববৈচিত্র্য বাড়ানো হবে। এ লক্ষ্যে ৯টি উপকূলীয় জেলার ৬৭টি উপজেলার চর এলাকায় বনায়ন করা হবে। এ সংক্রান্ত ‘বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা নতুন চরসহ উপকূলীয় এলাকায় বনায়ন’ শীর্ষক প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এটিসহ মোট ১৬টি প্রকল্পে অনুমোদন দেয়া হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ২২০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রকল্পগুলো সম্পর্কে ব্রিফ করেন। বঙ্গোপসাগরে জেগে উঠা নতুন চর উন্নয়নসহ ১৬ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ২২০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে ৪ হাজার ৭৪৪ কোটি ১২ লাখ টাকা। বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৪৬২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ১৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বঙ্গোপসাগরের জেগে ওঠা নতুন চরে বনায়নের সময় অন্যান্য গাছের সঙ্গে নিম গাছ ও বিভিন্ন ফলের গাছ এবং বট গাছ লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যাতে পাখিদের খাদ্যের যোগান সৃষ্টি হয়। মন্ত্রী জানান, ডিপিডিসির বিদ্যুতের লাইন মাটির নিচে (আন্ডারগ্রাউন্ড) নেয়া সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা শিথিল হয়েছে। যৌক্তিক কারণে রাজধানীর সব এলাকায় মাটির নিচে বিদ্যুতের অবকাঠামো করা যাবে না। তাই যেখানে সম্ভব, শুধু সেখানেই বিদ্যুতের আন্ডারগ্রাউন্ড স্থাপনা করা হবে। এছাড়া একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী দেশেই প্রি-পেইড মিটার তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে বিদেশ থেকে আমদানি করতে না হয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর বরাতে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দেশের ভবিষ্যত অর্থনীতির ভিত্তি হবে নদী শাসন। যদি ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হয়, তাহলে দেশের নদীগুলো সত্যিকারের অর্থনৈতিক কাজে লাগবে। নদী ভাঙ্গন কমে আসবে। সরকার সে পথেই এগুচ্ছে। একনেক সভায় অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- চট্টগ্রামের পারকি ও পতেঙ্গায় পর্যটন সুবিধাদি প্রবর্তন প্রকল্প ॥ এ প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হলো কর্ণফুলী নদীর মোহনায় চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলায় অবস্থিত পারকি সমুদ্র সৈকত পর্যটন অবকাঠামো সৃষ্টির মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন করা। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ৬২ কোটি টাকা। এর পুরোটাই জিওবি। এটি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন (বাপক) বাস্তবায়ন করবে। ময়মনসিংহ বিভাগ এবং ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ জেলায় ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন প্রকল্প ॥ ৬টি জেলার ৫৬ উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্প এলাকায় খাল পুনঃখনন, সেচ অবকাঠামো উন্নয়ন এবং আধুনিক সেচ প্রযুক্তি সুবিধা দেয়া হবে। ফলে এসব উপজেলার প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর জমি ভূ-উপরিস্থ পানি নির্ভর সেচ সুবিধার আওতায় আসবে। এতে প্রতি বছর ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগে অতিরিক্ত ৭৭ হাজার ৪৯০ মেট্রিকটন খাদ্য শস্য উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৯ কোটি টাকা। চলতি জানুয়ারি মাস থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি। মিরপুর ডিওএইচএস গেট-২ হতে মিরপুর-১২ বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প ॥ রাজধানীতে মোট্রোরেল যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হতে যাচ্ছে। মাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (এমআরটি) লাইন ৬ এর এলাইনমেন্ট উত্তরার ৩য় পর্ব ডিপো এলাকা থেকে শুরু হয়ে মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট, পল্লবী রোকেয়া সরণি, ফার্মগেট, শাহবাগ, টিএসসি, প্রেসক্লাব হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক মতিঝিল পর্যন্ত বিস্তৃত। এমআরটি লাইন-৬ এর ভায়াডাক্টের প্রিকাস্ট গার্ডার পরিবহনের জন্য এই রাস্তাটিই একমাত্র পথ। এছাড়াও এটি মিরপুর ডিওএইচএস, মিরপুর-১২ এবং কালশী মোড়ের মধ্যে একমাত্র সংযোগ সড়ক বিধায় এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া এই সড়কটিতে মেট্রোরেলের স্টেশন থাকবে বলে ভবিষ্যতে এ সড়কে ট্রাফিক চাহিদা অধিক হারে বৃদ্ধি পাবে। প্রেক্ষিতে এ প্রকল্পটি অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিদ্যমান রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৪০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ১ হাজার ৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ের শরিয়ত জেলার জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলায় পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা প্রকল্প। দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বাড়ানো সংক্রান্ত প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২০ কোটি টাকা। মৃত্তিকা গবেষণা ও গবেষণা সুবিধা জোরদারকরণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৩ কোটি টাকা। শেখ রাসেল এভিয়ারি ও ইকো-পার্ক স্থাপন, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম (২য় পর্যায়) প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। চট্টাগ্রামের পারকি ও পতেঙ্গায় পর্যটন সুবিধাদি প্রবর্তন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২ কোটি টাকা। সালনা (রাজেন্দ্রপুর)-কাপাসিয়া-টোক-মঠখোলা মহাসড়ক (আর-৩১২) প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২২৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। পাগলা-জগন্নাথপুর-রানীগঞ্জ-আউশাকান্দি সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত বেইলি সেতুর স্থলে ৭টি সেতু এবং নিয়ামতপুর-তাহিরপুর সড়কের আবুয়া নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪১ কোটি টাকা। এছাড়া পুলিশ বিভাগের আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এনকম ভবনের উর্ধমুখী সম্প্রসারণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৬ কোটি ২ লাখ টাকা। বানৌজো শেরে-ই-বাংলা পটুয়াখালী স্থাপন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম আর্টিলারি সেন্টার ও স্কলে মুজিব ব্যাটারি কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮০ কোটি টাকা। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. এলাকার জন্য স্মার্ট-প্রি-পেমেন্ট মিটারিং প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা এবং শেখ লুৎফর রহমান ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন গোপালগঞ্জ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১১২ কোটি ৮২ লাখ টাকা। মন্ত্রী জানান, মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে দেয়া হবে ৪ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। এছাড়া বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৪৬৩ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার তহবিল হতে প্রায় ১৪ কোটি টাকা জোগান দেয়া হবে।
×