ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শপথ গ্রহণকারীরা হচ্ছেন নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, শাহজাহান কামাল, মোস্তাফা জব্বার ও কাজী কেরামত আলী;###;আজ দফতর বণ্টন

শপথ তিন মন্ত্রী ও এক প্রতিমন্ত্রীর ॥ মন্ত্রিসভা বাড়ল

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৩ জানুয়ারি ২০১৮

শপথ তিন মন্ত্রী ও এক প্রতিমন্ত্রীর ॥ মন্ত্রিসভা বাড়ল

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সরকারের মেয়াদের চার বছরের মাথায় শপথ নিলেন আরও তিন মন্ত্রী এবং একজন প্রতিমন্ত্রী। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে এক আড়ম্বর অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রিসভায় যোগ হওয়া এই চারজনের মধ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা নারায়ণ চন্দ্র চন্দ পদোন্নতি পেয়ে মন্ত্রী হয়েছেন। এছাড়া খ্যাতনামা তথ্যপ্রযুক্তিবিদ এবং বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি মোস্তাফা জব্বার এবং লক্ষ্মীপুরের সংসদ সদস্য একেএম শাহজাহান কামাল মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। রাজবাড়ীর এমপি কাজী কেরামত আলী প্রতিমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নেন। তিন মন্ত্রী ও এক প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে কে কোন্ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন, তা পরে স্পষ্ট হবে। বিজয় বাংলা কি-বোর্ডের উদ্ভাবক মোস্তাফা জব্বার (৬৮) যেহেতু সংসদ সদস্য নন, তাকে মন্ত্রিসভায় আনা হয়েছে টেকনোক্র্যাট হিসেবে। বর্তমানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে কোন মন্ত্রী নেই। সদ্য প্রয়াত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক মারা যাওয়ায় এ পদটিও শূন্য হয়েছে। এই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। তবে সচিবালয়সহ বিভিন্ন সূত্র বলছে, মোস্তাফা জব্বারকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, একেএম শাহজাহান কামাল সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় পেতে পারেন আর নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে তার মন্ত্রণালয়েরই মন্ত্রী করা হতে পারে। অন্যদিকে প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলীকে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের জানান, আজ বুধবার নতুন চার মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দফতর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। মন্ত্রিসভার নতুন এই সদস্যদের বঙ্গভবনে নিয়ে যেতে বিকেলে সচিবালয় থেকে পাঠানো হয় চারটি গাড়ি। শপথের জন্য বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে তারা সবাই বঙ্গভবনে পৌঁছে যান। সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে গেলে রাষ্ট্রপতি তাঁকে স্বাগত জানান। সেখান থেকে তাঁরা দু’জন সরাসরি শপথ গ্রহণের স্থল বঙ্গভবনের দরবার হলে আসেন। সাড়ে ছয়টায় শুরু হয় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান। মাত্র ১৮ মিনিটেই শপথ গ্রহণের সকল অনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীসহ মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্যগণ, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পবিত্র কোরান থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে শপথ গ্রহণের মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। নিয়মানুযায়ী প্রথমে তিন মন্ত্রীকে শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। পরে পড়ানো হয় কাজী কেরামত আলীকে প্রতিমন্ত্রীর শপথ। শপথ নেয়ার পর তিন মন্ত্রী টেবিলে বসে শপথবাক্যে স্বাক্ষর করেন। পরে প্রতিমন্ত্রী শপথ নিয়ে একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। শপথ গ্রহণ শেষে তিন মন্ত্রী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে করমর্দন করেন এবং প্রতিমন্ত্রী কেরামত আলী করমর্দন ছাড়াও রাষ্ট্রপতিকে কদমবুচি করে দোয়া চান। নবনিযুক্ত তিন মন্ত্রী ও এক প্রতিমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেন এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। কাজী কেরামত আলী প্রধানমন্ত্রীকেও কদমবুচি করেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে রাষ্ট্রপতি আমন্ত্রিত সকল অতিথিকে চা-চক্রে আপ্যায়িত করেন। ৭২ বছর বয়সী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ খুলনা-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনবার। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় দফায় সরকার গঠন করলে নারায়ণ চন্দ্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। নতুন মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের পরিচিত উদ্যোক্তা। আনন্দ প্রিন্টার্স এবং আনন্দ মুদ্রায়ণের প্রতিষ্ঠাতাও এই তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। ৬৮ বছর বয়সী মোস্তাফা জব্বার ২০০৭ সালের ২৬ মার্চ ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা নিয়ে একটি নিবন্ধ লেখেন। পরের বছর আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার যুক্ত করে নেয়া হয়। শুধু বাংলা বর্ণমালায় নয়; তিনি কম্পিউটারে চাকমা লিপিমালাও তৈরি করেছেন। মন্ত্রিসভার আরেক নতুন মুখ একেএম শাহজাহান কামাল (৭২) লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তিনি দীর্ঘদিন লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর ভাই অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি। আর ৬৩ বছর বয়সী কাজী কেরামত আলী গত নির্বাচনে রাজবাড়ী-১ আসন থেকে চতুর্থবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য এবং সরকারী প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত কমিটি সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এই চারজনকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা হলো ৫৪ জন। তাদের মধ্যে ৩৩ জন মন্ত্রী, ১৮ জন প্রতিমন্ত্রী এবং দুইজন উপমন্ত্রী। এছাড়া মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্বে আছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে আছেন আরও পাঁচজন। গত চার বছরে মন্ত্রিসভার রদবদল ॥ মন্ত্রিসভায় যত রদবদল গত দুই বছরে বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রিসভায় রদবদলের সম্ভাবনা নিয়ে গুঞ্জন শোনা গেলেও তবে শেষ পর্যন্ত ব্যাপক কোন পরিবর্তন আনেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি ৪৯ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন করে এ সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছিল; যার মধ্যে ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী ও দুইজন উপমন্ত্রী। এর দেড় মাসের মাথায় এএইচ মাহমুদ আলী মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরু পান প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব আর হজ নিয়ে মন্তব্যের কারণে অক্টোবরে মন্ত্রিত্ব খোয়ান আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। ২০১৫ সালের ৯ জুলাই আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হয়। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে দেয়া হয় স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব। পরের সপ্তাহে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসিকে মন্ত্রী এবং তারানা হালিম ও নুরুজ্জামান আহমেদকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়। ওই দিন মন্ত্রী হিসেবে পদোন্নতি পান আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। এর দুই দিন পর ২০১৫ সালের ১৬ জুলাই সৈয়দ আশরাফকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ওই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ২০১৬ সালের ১১ মে। এরপর ২০১৬ সালের ১৯ জুন খাদ্য থেকে প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদকে পাঠানো হয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। গত বছরের শেষ দিকে এসে ১৬ ডিসেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হকের মৃত্যু হয়।
×