ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুদিনে এসেছে আরও ১৩৬

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষণগণনাকালে ফের অনুপ্রবেশ

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ৩ জানুয়ারি ২০১৮

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষণগণনাকালে ফের অনুপ্রবেশ

মোয়াজ্জেমুল হক/ এইচএম এরশাদ ॥ নতুন বছর ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ শুরু হয়েছে। এ নতুন বছরেও বিদায়ী বছরের ন্যায় রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। গত সোম ও মঙ্গলবার দু’দিনে এসেছে ১৩৬ জন। আর বছরের শেষ সপ্তাহে এসেছে প্রায় ৬৫০ রোহিঙ্গা। এছাড়া সীমান্তের ওপারে মংডুর দংখালি এলাকায় এখনও দশ সহস্রাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। ওপারের এসব রোহিঙ্গাদের কাছে ত্রাণ সহায়তা যাচ্ছে এপার থেকে। বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে রোহিঙ্গাদের একটি গ্রুপ প্রতিনিয়ত এদের কাছে ত্রাণসহ বিভিন্ন সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে মিয়ানমার রাজি হওয়ার পর এখন স্থানীয়দের মাঝে এ নিয়ে চলছে ক্ষণ গণনা। অনুরূপ পরিস্থিতিতে নতুন বছরের শুরুতেও রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত থাকার চিত্র সর্বত্র বিস্ময় নেমে এসেছে। কেননা, বিশ্ব চাপের মুখে মিয়ানমার যেখানে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে সেখানে নতুন নতুন রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে চলে আসার ঘটনা মেনে নেয়ার মতো নয়। আগে ছিল মানবতার খাতিরে। এখন রাখাইন রাজ্যে অস্বাভাবিক তেমন কোন চিত্র নেই যে, রেহিঙ্গারা চলে আসতে থাকবে। মূলত আগে যারা চলে এসেছে তাদের আহ্বানেই নতুনরা চলে আসছে। এক্ষেত্রে সীমান্ত প্রহরায় নিয়োজিত এবং আইনশৃঙ্খলায় জড়িত সকলের কড়া মনোভাবে অনুপ্রবেশ বন্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখার সময় এসেছে বলে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে মত ব্যক্ত করা হয়েছে। এদিকে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে দিন যতই গড়িয়ে যাচ্ছে উখিয়া টেকনাফ অঞ্চলের স্থানীয় মানুষের মাঝে ব্যাপক আশার সঞ্চার হচ্ছে। কেননা রাখাইন রাজ্য থেকে এ পর্যন্ত ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা টেকনাফ থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশের পর সীমান্ত সংলগ্ন এসব এলাকা রোহিঙ্গাভারে জর্জরিত হয়ে আছে। পাহাড় ও বন জঙ্গল কেটে পরিবেশের যে ক্ষতি করেছে তা সহজে পূরণ হবার নয়। মঙ্গলবার পর্যন্ত ৯ লাখ ৩৪ হাজার রাহিঙ্গাকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়েছে। নিবন্ধনের প্রক্রিয়া দিন দিন বেড়েই চলেছে। কেননা, রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ কোনভাবেই থামছে না। টেকনাফ উখিয়া অঞ্চলের পাহাড়ি ও শস্য ফলনের মাঠগুলো রোহিঙ্গাদের দখলে চলে গিয়ে এলাকাবাসীর জন্য যেমন ক্ষতি ডেকে এনেছে তেমনি পরিবেশও হয়ে গেছে ল-ভ-। কক্সবাজার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (দক্ষিণ) মোঃ আলী কবির জানান, পাহাড়ে বসতি স্থাপনের ফলে যে ক্ষতি হয়েছে তাতে প্ররিবেশগত ভারসাম্য এখন হুমকির মুখে। আন্তর্জাতিক প্রত্যাবাসন সংস্থা আইওএম -এর পক্ষ থেকে সর্বশেষ জানানো হয়েছে, গত ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা ৮ লাখ ৬৭ হাজর। এর আগে এসেছে আরও ৫ লক্ষাধিক। তবে বেসরকারী পরিসংখ্যানে এ সংখ্যা আরও বহু বেশি। বৃষ্টিতে দুর্ভোগ ॥ কক্সবাজার জেলায় অকালে বর্ষণের কারণে সোমবার রাত এবং মঙ্গলবার দিনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ব্যাপক দুর্ভোগ নেমে এসেছে। মূলত রবিবার থেকে উখিয়া টেকনাফ অঞ্চল ও সন্নিহিত এলাকাগুলো মেঘাচ্ছন্ন ছিল। সন্ধ্যার পর থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বর্ষণ শুরু হয়। মঙ্গলবার সকালে চলে মাঝারি বর্ষণ। এতে জনজীবনে যেমন দুর্ভোগ নেমে আসে, তেমনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পাগুলোতে ছিল এর ব্যাপকতা। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান জানিয়েছেন, বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাট চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আশ্রয় ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গাদের ঠাসাঠাসি। এতে তাদের জীবনযাপন আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আর্থসামাজিক ক্ষতির শিকার স্থানীয়রা ॥ রোহিঙ্গার ঢল নামার কারণে উখিয়া টেকনাফের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্থানীয়দের উন্নয়নে কাজ করা বেশিরভাগ এনজিও’র কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের কাছে এখন বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প। এতে নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকাবাসী। গ্রাম-গঞ্জে উন্নয়ন করার কাজ ছাড়াও স্থানীয়ভাবে যেসব স্কুলে এনজিও দ্বারা পরিচালিত হতো, সেসব স্কুলগুলো বন্ধ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনে বেশি মনযোগী হয়েছে এনজিওগুলো। স্থানীয়দের প্রতি কোন দায়বদ্ধতার তোয়াক্কা না করে স্থানীয় এনজিওগুলো ছুটছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে। হঠাৎ করে এ চলমান এই প্রকল্পগুলো বন্ধ করে দেয়াই আর্থসামাজিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন এসব এলাকার মানুষ। শুধু তাই নয় স্কুল ছাড়াও সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পে যেসব প্রকল্প চলমান ছিল সেগুলো মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে গত তিন মাস আগে একে একে অঘোষিতভাবে বন্ধ করে দেয় তারা। স্থানীয়দের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গরিব-নিরীহ মানুষ দেখে তাদের ঋণ দেয়া এবং বিভিন্ন এনজিও সংস্থা গরিব অসহায় শিশুদের জন্য পড়াশুনার জন্য যে ব্যবস্থা করেছিল, রোহিঙ্গাদের সেবা করার জন্য তারা ওই কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে স্থানীয় মানুষের সমস্যা নিয়ে দাতা সংস্থা ও এনজিওগুলোকে বলা হলেও তাতে তারা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। বিভিন্ন এনজিও এবং প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলো মনে করেন মিয়ানমার লোকজনকে সাহায্য করলেও তাদের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হবে।
×