ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চিনে নিন চন্দ্রমল্লিকা

কোন্টা যে চন্দ্রমল্লিকা ফুল... বার বার দেখেও ভুল হয়ে যায়

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ৩ জানুয়ারি ২০১৮

কোন্টা যে চন্দ্রমল্লিকা ফুল... বার বার দেখেও ভুল হয়ে যায়

মোরসালিন মিজান যথার্থই লিখেছিলেন তারাপদ রায়। কবির ভাষায় কোনটা যে চন্দ্রমল্লিকার ফুল/ আর কোনটা যে সূর্যমুখী বার বার দেখেও/ আমার ভুল হয়ে যায়,/ আমি আলাদা করতে পারি না...। চন্দ্রমল্লিকা ফুলটিকে চেনা আসলেই মুশকিল। কেউ কেউ বলবেন, শীতকাল এখন। ফুলের দোকানে ঢুঁ মেরে দেখুন। কত চন্দ্রমল্লিকা চাই আপনার? চাই। পাওয়াও যায়। তবে সমস্যা অন্য জায়গায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চন্দ্রমল্লিকা নাম করে অন্য ফুল ধরিয়ে দেন দোকানিরা। মঙ্গলবারের কথাই ধরা যাক, শাহবাগের ফুলের দোকানগুলো কয়েক দফা ঘুরেও প্রকৃত ফুলটি পাওয়া গেল না। মাসুম বিল্লাহ নামের এক দোকানি বললেন, চন্দ্রমল্লিকা সবে ফুটছে। বাজারে আসতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। আবার যা বিক্রি হচ্ছে, তা-ই চন্দ্রমল্লিকা বলে রীতিমতো বাজি ধরলেন কেউ কেউ। ফুলটির জাতপাতও অনেক। একেকটি একেক রঙের। গঠনের দিক থেকেও কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এসব কারণে চন্দ্রমল্লিকা চিনে নেয়া সহজ কাজ নয়। বাইরের দেশগুলোতে এই ফুল ক্রিসানথেমাম নামে পরিচিত। বাংলাদেশে চন্দ্রমল্লিকা। চন্দ্র বা চাঁদ থেকে চন্দ্রমল্লিকা নাম। চাঁদের মতোই সুন্দর ও আকর্ষণীয়। ডাকা হয় চন্দ্রমুখী নামেও। কুঁড়ি আসা শুরু হয় অক্টোবরে। নবেম্বর থেকে ফুল। এখন জানুয়ারি। সৌন্দর্যের সবটুকু নিয়ে ফুটেছে চন্দ্রমল্লিকা। কোনটি ছোট টেনিস বলের মতো দেখতে। পাপড়ি ভেতরের দিকে মোড়ানো। কোনটির পাপড়ি বাইরের দিকে। ঝুলন্ত। কিছু ফুলের মাঝখানটা আবার চাকতির মতো। চন্দ্রমল্লিকার অনেক রং। সাদা, হলুদ, মেরুন, হালকা গোলাপী, কালচে লালÑ সবই গায়ে মেখে আছে। সাদা রং চন্দ্রমল্লিকা শুদ্ধতার প্রতীক। পবিত্র একটি আবহ তৈরি করে। এ বিবেচনায় প্রিয়জনের কফিনে, সমাধির ওপর ছড়িয়ে দেয়া হয় সফেদ চন্দ্রমল্লিকা। বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলোতে এ দৃশ্য বেশি চোখে পড়ে। ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, ক্রোয়েশিয়ায় সাদা চন্দ্রমল্লিকায় শেষ বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। মৃত ব্যক্তির স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বা প্রার্থনাসভায়ও সাদা ফুলটি অপরিহার্য। এইটুকুন জেনে কেউ কেউ ভেবে বসতে পারেন, সাদা চন্দ্রমল্লিকা গভীর শোক বেদনা আর পরিতাপের কালেই প্রাসঙ্গিক। আদতে তা নয়। বিয়ের অনুষ্ঠানেও চন্দ্রমল্লিকার বিশেষ ব্যবহার হয়ে আসছে। নবদম্পতির শুভ কামনায় সাদা চন্দ্রমল্লিকা উপহার দেয়া হয়। জন্মদিনসহ আনন্দঘন উৎসব অনুষ্ঠানে অনিবার্য হয়ে ওঠে ফুলটি। জাপানে শুধু এই ফুলে বড় একটি উৎসব হয়। উৎসবের নামÑ ফ্যাস্টিভ্যাল অব হ্যাপিনেস। এবার পেছনের ইতিহাসটি জেনে নেয়া যাক। জাপানে অষ্টম শতকে চাষ শুরু হয় চন্দ্রমল্লিকার। দেশের এটি জাতীয় ফুল। জাপান থেকে ধীরে ধীরে ফুলটি ছড়িয়ে পড়তে থাকে। প্রবেশ করে আশপাশের দেশগুলোতে। পনেরো শতকে চাষ শুরু হয় চীনে। চীন ও কোরিয়া ফুলটিকে বিশেষভাবে আপন করে নিয়েছে। দেশগুলোর মানুষ ফুলটিকে নিজেদের জ্ঞান করে। চন্দ্রমল্লিকা ১৭ শতকে আসে ইউরোপে। বর্তমানে প্রায় সব দেশেই হয়। প্রয়াত উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মার বর্ণনা থেকে জানা যায়, ইউরোপ ও ইংল্যান্ডের প্রজাতিটির নাম ক্রিসানথেমাম সেগেটাম। এই গাছ ৩০ থেকে ৬০ সেমি লম্বা। ফুল চওড়ায় ৫ সেমি পর্যন্ত হয়। পাপড়িতে সাদা ও হলুদ রঙের মিশেল। কখনও আবার মাঝখানে বাদামী। পাপড়িতে হালকা হলুদ রং দেখা যায়। মেক্সিকোর প্রজাতিটির নাম ক্রিসানথেমাম কারিনেটাম। গাছ প্রায় ৬০ সেমি উঁচু। ফুলের পাপড়িতে সাদা হলুদ লাল গোলাপী কমলা ও বেগুনী রঙের মিশেল। পাপড়ির গোড়া ও মাঝখানে গাঢ় রং। চীন ও জাপানের প্রজাতি চন্দ্রমল্লিকা সংকরণ ও নির্বাচনের মাধ্যমে ইউরোপ ও আমেরিকায় শ্রীবৃদ্ধি ঘটানো হয়। পাপড়ির গঠন ও ফুলের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী চন্দ্রমল্লিকা কয়েকটি শ্রেণীর হয়ে থাকে। হেয়ারি, কেয়ারি, জাপানীজ, ইনকারভড, পমপরা ইত্যাদি এ ফুলের উন্নত জাত। বর্তমানে শুধু থাইল্যান্ডে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার জাতের চন্দ্রমল্লিকা হয়। বাংলাদেশে অতো নেই। তবে যা আছে, নেহাৎ কম নয়। অন্য অনেক ফুলের তুলনায় বেশি। শীতের পুরোটা জুড়ে উপভোগ যাবে প্রিয় ফুলের সৌন্দর্য। চিনে নিন চন্দ্রমল্লিকা। সৌন্দর্য উপভোগ করুন।
×