ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টি ইসলাম তারিক

বিদায়ী বছরে আলোচিত অবসর

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ৩ জানুয়ারি ২০১৮

বিদায়ী বছরে আলোচিত অবসর

কালের গর্ভে বিলীন হয়েছে আরও একটি ইংরেজী বছর ্র বছরের দিনলিপি ফুরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই আলোচনায় উঠে এসেছে গেল বছরের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ ্র এক্ষেত্রে দেশীয় ও বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি, তথ্যপ্রযুক্তি, বিনোদন প্রভৃতি বিষয়ের সঙ্গে আলোচনায় আছে ক্রীড়াঙ্গনও ্র ২০১৭ সালে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনও আলোচনায় থেকেছে সব সময় ্র এর মধ্যে অন্যতম আলোচিত ঘটনা বেশ কয়েকজন তারকা ফুটবলারের অবসর ্র গেল বছর আন্তর্জাতিক ফুটবল কিংবা সবধরনের ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছেন জিয়ানলুইজি বুফন, আন্দ্রে পিরলো, কাকা, ফ্রান্সেসকো টট্টি, ফিলিপ লাম, জাবি এ্যালানসো, ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড, ওয়েন রুনির মতো তারকারা ্র বিদায়ী এসব তারকাকে নিয়ে লিখেছেন টি ইসলাম তারিক জিয়ানলুইজি বুফন ॥ গেল বছর কান্নার সাগরে হাবুডুবু খেয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানান ইতালিয়ান কিংবদন্তী জিয়ানলুইজি বুফন। বিশ্বকাপের ইতিহাসে টানা ছয়টি আসরে খেলা একমাত্র ফুটবলার হওয়ার হাতছানি ছিল তার। ঘোষণাও দিয়ে রেখেছিলেন ২০১৮ বিশ্বকাপ খেলেই অবসর নিবেন। কিন্তু মানুষের সব চাওয়া তো আর পূরণ হয় না। ইতালির ইতিহাসের তো বটেই বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম কিংবদন্তী বুফনের শেষ ইচ্ছেটাও পূরণ হয়নি। কারণ তার দেশ ইতালি বিশ্বকাপের মূলপর্বের আগেই বাদ পড়েছে। আর ব্যর্থতার দায় কাধে নিয়ে নবেম্বরে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেন ৩৯ বছর বয়সী কিংবদন্তী গোলরক্ষক। অবসরের পর বুফন বলেন, এটা খুবই হতাশার যে আমার শেষ ম্যাচটা ছিল ইতালির বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার ম্যাচ। এটাই আমার একমাত্র আফসোস। কারণ সময় খুবই নির্দয়। কিন্তু এটা দ্রুত কেটেও যাবে। মজার ব্যাপার হলো, ১৯৯৭ সালে বুফনের অভিষেকও হয়েছিল এমনই এক প্লে-অফ ম্যাচে। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপের টিকেট পাওয়ার জন্য রাশিয়ার মুখোমুখি হতে হয়েছিল ইতালিকে। সেই ম্যাচে ২-১ ব্যবধানের জয় দিয়ে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছিল আজ্জুরিরা। কাকা ॥ ব্রাজিলের ২০০২ বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সেরা তারকা কাকা। তারকা এই এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার দেশ ও ক্লাবের হয়ে অসংখ্য সাফল্য পেয়েছেন। তবে আফসোসও কম নয়, ঘাতক ইনজুরির কারণে ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে তাকে মুখ থুবড়ে পড়তে হয়। এ কারণে শেষদিকে খেলা হয়নি বড় ক্লাবে। বাদ পড়েছেন জাতীয় দল থেকেও। এই অবস্থার মধ্যেই গত অক্টোবরে ফুটবলকে বিদায় জানান ৩৫ বছর বয়সী সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ, এসি মিলান তারকা। মাস দুই পর আরেকবার একই ঘোষণা দেন। এবার কাকা সব ধরনের ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। প্রিয় বুটজোড়া তুলে রাখার পর এসি মিলানের কোচ হওয়ার ইচ্ছার কথাও জানিয়েছেন। ‘রিকার্ডো আইজ্যাকসন দস সান্টোস লেইটে’ তার পুরো নাম। সবার কাছে যিনি কাকা নামে পরিচিত। ব্রাজিলিয়ান ফুটবল দলের মাঝমাঠের এই ফুটবলারের ক্যারিয়ার বেশ সমৃদ্ধ। জাতীয় দলের হয়ে দেশকে বহু সাফল্য এনে দেয়ার পাশাপাশি ইউরোপের ঘরোয়া ফুটবলে খেলেছেন দীর্ঘ সময়। একুশ শতকের অন্যতম সেরা ফুটবলার অবশেষে বর্ণিল ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন। ২০০৭ সালের ব্যালন ডি’অর জয়ী কাকা স্থানীয় রিও ডি জেনেরিও টেলিভিশনে অবসরের ঘোষণা দিতে গিয়ে বলেন, আমি ফুটবলেই থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি, তবে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। তবে এটা নিশ্চিত যে পেশাদার ফুটবলার হিসেবে আর আমি থাকছি না। ওয়েন রুনি ॥ বয়স খুব বেশি নয়, মাত্র ৩১ বছর। রিয়াল মাদ্রিদের পর্তুগিজ সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর চেয়েও এক বছর কম। অথচ এই সময়েই আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় বলে দিয়েছেন ওয়েন রুনি। ইংল্যান্ডের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা গেল বছরের আগস্টে এক বিবৃতিতে জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। অনেকেই ইংল্যান্ডের হয়ে রুনির শেষ দেখে ফেলেছিলেন। কিন্তু প্রাণের ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউ-নাইটেড থেকে শৈশবের ক্লাব এভারটনে যোগ দিয়ে ফের জাতীয় দলে ফেরার স্বপ্ন বুনছিলেন। শৈশবের ক্লাব টানা দুই ম্যাচে গোল করে রুনি বুঝিয়েও দিয়েছিলেন তিনি ফুরিয়ে যাননি। এরপরও থামতেই হয়েছে তাকে। ইংল্যান্ডের বর্তমান কোচ গ্যারেথ সাউথগেট রুনিকে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দলেও ডেকেছিলেন। কিন্তু জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পরপরই আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত নেন ইংলিশ তারকা। ইংল্যান্ডের হয়ে ১১৯ ম্যাচে ৫৩ গোল করা রুনি মঙ্গলবার সাউথগেটের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে অবসরের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন। আন্দ্রে পিরলো ॥ নবেম্বরে সব ধরনের ফুটবল থেকে অবসর নেন ইতালির কিংবদন্তী ফুটবলার আন্দ্রে পিরলো। এর আগে ২০১৫ সালে ইতালি জাতীয় দল থেকে অবসর নেন ৩৮ বছর বয়সী পিরলো। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে পিরলো ইতালির হয়ে ২০০৬ সালের বিশ্বকাপের শিরোপা ছাড়াও দুটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ও ছয়টি ইতালিয়ান সিরি এ শিরোপা জয় করেছেন। লম্বা ক্যারিয়ারে জুভেন্টাস, ইন্টার মিলান, এসি মিলানে খেলা সাবেক এই মিডফিল্ডার নতুন ক্লাব নিউইয়র্ক সিটির হয়ে তার ক্যারিয়ার শেষ করলেন। ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে তিনি মাত্র পাঁচ মিনিট মাঠে ছিলেন। বদলী হিসেবে খেলেন কলম্বাস ক্রুর বিরুদ্ধে। এ সময় ভক্ত-সমর্থকরা তাকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানান। অবসর প্রসঙ্গে নিজের টুইটার এ্যাকাউন্টে পিরলো লিখেছেন, শুধুমাত্র নিউইয়র্কের অভিজ্ঞতাই এখানে শেষ হচ্ছে না, পুরো ফুটবল ক্যারিয়ার থেকেই আমি বিদায় নিচ্ছি। এই সময় আমাকে সমর্থন দেয়ার জন্য পরিবার, সন্তানদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, যারা আমাকে সবসময় ভালবেসেছে। অবশ্যই আমার দল যেখানে খেলতে পেরে আমি সত্যিই গর্বিত। রঙিন বিদায় লাম-এ্যালানসোর ॥ আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন। ২০১৬-১৭ মৌসুমে শেষবার খেলবেন, শেষ করবেন পেশাদার ক্যারিয়ার। অবশেষে সেটাই হয়। গত বছরের মে মাসে জার্মান বুন্দেসলীগায় বেয়ার্ন মিউনিখের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলেছেন ফিলিপ লাম ও জাবি এ্যালানসো। এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে বুটজোড়া পাকা-পাকিভাবে তুলে রেখেছেন এই দুই তারকা। শেষ ম্যাচে জিতে শেষটাও রাঙিয়ে যান লাম-এ্যালানসো। স্বাভাকিভাবেই মিউ-নিখের এ্যালিয়েঞ্জ এ্যারানায় বাভা-রিয়ানদের জন্য ছিল আবেগের সন্ধ্যা। শিরোপা আগেই নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় এই ম্যাচটি ছিল তাদের জন্য শুধুই আনুষ্ঠানিকতার। তবে সব ছাপিয়ে লাম ও এ্যালানসোর বিদায়টাই মুখ্য হয়ে উঠে। কারণ এ দু’জন এ রাতে শেষবারের মতো পেশাদার ফুটবল খেলেছেন। বয়স যে খুব বেশি তা নয়, মাত্র ৩৩ বছর। যে পারফরমেন্স তাতে হয়ত ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপও খেলতে পারতেন। কিন্তু নিজেকে কি দুর্দান্তভাবেই না নিয়ন্ত্রণ করেছেন লাম! ২০১৪ সালে জার্মানিকে দুই যুগ পর বিশ্বকাপ জেতানো এই অধিনায়ক ওই বছরের জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেন। অনেকটা আচমকাই জাতীয় দল থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন তারকা এই ফুলব্যাক। তখন বলেছিলেন চালিয়ে যাবেন ক্লাব ফুটবল। কথা অনুযায়ী এতদিন প্রাণের ক্লাব বেয়ার্ন মিউনিখের হয়ে খেলা চালিয়ে গেছেন। তবে এবার ক্লাবের মায়াও ছিন্ন করেছেন জার্মান তারকা। জাতীয় দল থেকে অবসরের তিন বছর পর এবার সব ধরনের ফুটবল থেকে অবসর নিলেন লাম। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে অসংখ্য সাফল্য পেয়েছেন তিনি। ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড ॥ চার বছর পর পর ফিরে আসে বিশ্বকাপ ফুটবল। বিশ্বকাপ শেষে ঝরে পড়তে অর্থাৎ অবসরে যেতে দেখা যায় অনেক ফুটবলারকেই। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপের পরও একই ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। সেবার যেন অবসরের হিড়িক পড়ে যায়। একঝাঁক তারকা ফুটবলার বিদায় জানান আন্তর্জাতিক ফুটবলকে। এর মধ্যে ছিলেন ইংলিশ তারকা ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডও। অর্থাৎ ২০১৪ সালের আগস্টে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছিলেন তারকা মিডফিল্ডার ল্যাম্পার্ড। এরপর ক্লাব ফুটবলে খেলেছেন ম্যানচেস্টার সিটি ও নিউইয়র্ক সিটিতে। গত বছরের ফ্রেব্রুয়ারিতে সে অধ্যায়ও শেষ করেছেন। ফ্রান্সেসকো টট্টি ॥ ইতালি জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার ফ্রান্সেসকো টট্টি সিনিয়র ক্লাব ক্যারিয়ারে শুরু থেকেই খেলেছেন এএস রোমার হয়ে। সেই ১৯৯২ সাল থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে সেবা দিয়েছেন ইতালিয়ান ক্লাবটির। বিশ্বের আরও অনেক প্রতিষ্ঠিত ক্লাব টট্টিকে দলে ভেড়াতে চাইলেও রোমা ছেড়ে যাননি। ভালবাসার বন্ধনে জড়িয়ে পড়া ক্লাবটি থেকেই নিতে চেয়েছিলেন অবসর। তার সেই ইচ্ছাটাই পূরণ হয়েছে গত জুলাইয়ে। রোমার হয়ে দীর্ঘ ২৫ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানেন টট্টি। গত ২৮ মে খেলেন নিজের শেষ ম্যাচ। বিদায় বেলায় নিজে কেঁদেছেন, সতীর্থ, সমর্থকদেরও কাঁদিয়েছেন। ইতালিয়ান সিরি এ লীগে জেনোয়ার বিরুদ্ধে শেষ ওই ম্যাচটির পর আবারও শুরু হয় নাটক। শোনা যায়, অন্য ক্লাবের হয়ে খেলতে পারেন ৪০ বছর বয়সী টট্টি। অবশেষে প্রায় দুই মাস পর নিজের অবসরের পাকা সিদ্ধান্ত জানান সাবেক ইতালিয়ান তারকা।
×