ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন

সরকারের ব্যাংকঋণ কমেছে ১৪ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৩ জানুয়ারি ২০১৮

সরকারের ব্যাংকঋণ কমেছে ১৪ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে সরকারের ব্যাংক নির্ভরতা কমছে। ফলে গত বছরজুড়েও ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে কোন ঋণ করেনি সরকার; উল্টো আগের নেয়া ঋণ শোধ করেছে। ফলে এক বছরে সরকারের নিট ব্যাংকঋণ কমেছে প্রায় ১৪ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। প্রয়োজন না হওয়ায় এর আগের বছরও সরকার প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ব্যাংকঋণ শোধ করেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। মূলত সঞ্চয়পত্রের অস্বাভাবিক বিক্রি বৃদ্ধি ও বৈদেশিক উৎস থেকে প্রয়োজনীয় ঋণ পাওয়ায় সরকারের ব্যাংক নির্ভরতা কমেছে। একইসঙ্গে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) বাস্তবায়নে ধীরগতিও ব্যাংকঋণ কমার অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতি বছরই বড় অঙ্কের ঘাটতি রেখে বাজেট পেশ করে আসছে সরকার। এ ঘাটতি মেটানো হয় দুটি উৎস থেকে। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক খাত। বৈদেশিক খাত থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা পাওয়া না গেলে অভ্যন্তরীণ উৎসের ওপরই বেশি নির্ভর করতে হয় সরকারকে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে রয়েছে-ব্যাংক ব্যবস্থা ও সঞ্চয়পত্র খাত। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকিং খাত থেকে ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা ঋণ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ব্যাংকের বাইরে সঞ্চয়পত্রসহ অন্যান্য উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ৩২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসেই ১৭ হাজার ৩১৪ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বৈদেশিক সহায়তা এসেছে প্রায় ৫৮ কোটি ডলার; যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৮২ শতাংশ বেশি। এছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিদায়ী ২০১৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারকে কোন ঋণ করতে হয়নি। উল্টো আগের নেয়া রেকর্ড পরিমাণ ঋণ শোধ করা হয়েছে। এ সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে কোন ঋণ না নিয়ে উল্টো শোধ করেছে ১৫ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা। তবে এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১ হাজার ১১৮ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে সরকার। ফলে সরকারের নিট ব্যাংকঋণ দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক (-) ১৪ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। ২০১৬ সালেও ব্যাংকঋণ নেয়ার চেয়ে শোধের পরিমাণ বেশি ছিল। ঐ সময় ব্যাংকঋণ শোধের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩ হাজার ৩ কোটি টাকা। এদিকে চলতি অর্থবছরের ২৬ আগস্ট পর্যন্ত (প্রথম ৬ মাস) সরকারের নিট ব্যাংকঋণ দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক (-) ৭ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে কোন ঋণ করেনি। উল্টো আগের নেয়া ঋণের ৭ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা শোধ করেছে। এ সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে শোধ করেছে ৩ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। আর বাংলাদেশ ব্যাংকে শোধ করেছে ৪ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। গত অর্থবছরেও সরকারের ব্যাংকঋণ ঋণাত্মক ধারায় ছিল। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত অর্থবছরে মূল বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। তবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ চাহিদা কম হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবছরের শুরুতে সরকার কিছু ঋণ করলেও পরে তা শোধ করায় অর্থবছর শেষে তা ঋণাত্মক ধারায় নেমে আসে। এর পরিমাণ ঋণাত্মক ১৭ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা ছিল। যদিও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার প্রায় ৪ হাজার ৩২৬ কোটি টাকার ঋণ গ্রহণ করেছিল। তবে গেল অর্থবছরের ঘাটতি অর্থায়নের সিংহভাগ অর্থই এসেছে ব্যাংকবহির্ভূত উৎস থেকে। বিশেষ করে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকারের রেকর্ড পরিমাণ ঋণ আসে। এর পরিমাণ রেকর্ড ৫৩ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা। সরকারের ব্যাংক ঋণের তথ্য পর্যালোচনা আরও দেখা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ব্যাংক থেকে কোন ঋণ না নিয়ে উল্টো ৪ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়। এরপর টানা তিন অর্থবছর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার বড় অঙ্কের ঋণ করেছিল। ২০১০-১১ অর্থবছরে ব্যাংক থেকে সরকার নিট ১৯ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা ঋণ নেয়। পরবর্তী অর্থবছরে নেয়া হয় ১৮ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা আরও বেড়ে হয় ১৭ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। তবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ব্যাংকঋণ কমে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা ঋণাত্মক ধারায় নেমে আসে। ওই অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ঋণাত্মক ৭ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা।
×