ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এফটিএ হলে দেশটির সঙ্গে সরাসরি পোশাক রফতানি করতে পারবেন এ খাতের উদ্যোক্তারা

রাশিয়ার সঙ্গে ব্যাংকিং লেনদেন চালু করার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ৩ জানুয়ারি ২০১৮

রাশিয়ার সঙ্গে ব্যাংকিং লেনদেন চালু করার উদ্যোগ

এম শাহজাহান ॥ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধিতে রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি ব্যাংকিং লেনদেন চালু করা হবে। পণ্য রফতানি ও আমদানির ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনে বর্তমান যেসব সমস্যা রয়েছে তা চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শীঘ্রই এ সংক্রান্ত সমস্যা চিহ্নিত ও তা সমাধানে রাশিয়া সরকারের সহযোগিতা চাবে বাংলাদেশ। ব্যাংকিং লেনদেন চালুর লক্ষ্যে ইতোমধ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। এছাড়া বাণিজ্য সম্প্রসারণে রাশিয়ার সঙ্গে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) দাবি করেছে কমনওয়েলথ অব ইন্ডিপেনডেন্ট স্টেটস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিআইএস)। সংগঠনটির মতে, এফটিএ হলে রাশিয়ায় সরাসরি পোশাক রফতানি করতে পারবেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। এছাড়া ব্যাংকিং লেনদেন চালু হলে পোশাকের সঙ্গে অন্যান্য পণ্যের রফতানিও বাড়বে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, পণ্য রফতানিতে জিএসপি সুবিধা না থাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ব্র্যান্ড হিসেবে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি হয় রাশিয়ায়। বিশেষ করে তৈরি পোশাক ইইউ হয়ে যায়। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ার বাজারে জিএসপি বা শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা চেয়ে আসছে বাংলাদেশ। এ সুবিধা পেতে ইউরেশিয়ান ইকোনমিক কমিশনের সঙ্গে যে সমঝোতা চুক্তির প্রয়োজন সেটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মস্কোর বাংলাদেশ দূতাবাস। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছরে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের মোট আমদানি-রফতানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে এবং তা এক বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। এ পর্যায়ে রাশিয়াতে বাংলাদেশী পণ্যের রফতানি আরও বাড়ানোর জন্য কাজ চলছে। শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাওয়ার লক্ষ্যে ইউরেশিয়ান ইকোনমিক কমিশনের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের কাজ চূড়ান্ত করা হয়েছে। জানা গেছে, রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ব্যাংকিং লেনদেন, দ্বৈতকরসহ বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। চীনের পর বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ। আর তৃতীয় বৃহত্তম পোশাকের বাজার রাশিয়া। বর্তমান প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের পোশাকের বাজার রয়েছে দেশটিতে। এছাড়া রাশিয়ার মাধ্যমে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ১১ দেশের জোট কমনওয়লেথ অব ইনডিপেনডেন্ট স্টেটসের বাজারে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের। সূত্রমতে, সিআইএস জোটে ১৪ হাজার কোটি ডলারের রফতানি বাজার রয়েছে। সুযোগ রয়েছে আরমেনিয়া, বেলারুশ, কাজাকিস্তান, কিরঘিজিস্তানকে নিয়ে রাশিয়ান নেতৃত্বাধীন ইউরেশিয়ান কাস্টমস ইউনিয়নের বাজার সুবিধা নেয়ার। সেই সুযোগটি নিশ্চিত করতে চায় সরকার। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সরাসরি ব্যাংকিং লেনদেনের কোন সুযোগ নেই। পণ্য রফতানি হয় টেলিগ্রাফিক ট্রান্সফারের (টিটি) মাধ্যমে। এ কারণে সরাসরি ব্যাংকিং লেনদেন চালু করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আশা করছি, এ বছরের মধ্যে এ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, জিএসপি সুবিধাসহ সরাসরি ব্যাংকিং লেনদেন চালু হলে দেশটিতে রফতানির পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়বে। জানা গেছে, জিএসপি বা শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রাপ্তির জন্য বাংলাদেশের রফতানিযোগ্য ৭১টি ট্যারিফ লাইনের পণ্যের তালিকাও রাশিয়ান ফেডারেশনের নেতৃত্বে গঠিত ইউরেশিয়ান কাস্টমস ইউনিয়নে পাঠানো হয়েছে। এখন তারা সম্মতি দিলে চুক্তির উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়া রাশিয়ান মুদ্রা ‘রুবল’র সঙ্গে সরাসারি বিনিময় হবে বাংলাদেশী টাকা। এরই মধ্যে বিনিময় হার নির্ধারণের জন্য সম্মত হয়েছে দুই দেশ। এতে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বহুলাংশে বাড়বে। একইসঙ্গে প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা ডলার, পাউন্ড ও ইউরোর ওপর চাপ কমবে। বাংলাদেশী টাকা ও রাশিয়ান রুবলের মধ্যে সরাসরি বিনিময় হার নির্ধারণ এবং দুই দেশের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং সুবিধা সৃষ্টির বিষয়ে ইতোমধ্যে কয়েক দফা আন্তঃমন্ত্রণালয় করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে যারা নিয়মিত ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন তাদের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কমনওয়েলথ অব ইন্ডিপেনডেন্ট স্টেটস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিআইএস) সিনিয়র সহ-সভাপতি লোকমান হোসেন আকাশ জনকণ্ঠকে বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে বড় অঙ্কের বাণিজ্য করার সুযোগ রয়েছে। বাণিজ্য সুবিধা নিতে হলে প্রথমেই দেশটির সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএ করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, গ্লোবাল বিজনেসের পলিসি এখন পরিবর্তন হয়েছে। রফতানি বাণিজ্যে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা। রাশিয়ার মতো বড় বাজারে বাংলাদেশী পণ্য ইইউ ব্র্যান্ড হিসেব বিক্রি হচ্ছে। অথচ জিএসপি সুবিধা নিশ্চিত ও এফটিএ হলে এদেশীয় পণ্য বাংলাদেশী ব্র্যান্ড হিসেবে বিক্রি হতো। বিশ্ব প্রেক্ষাপটে যেটা সবচেয়ে বেশি জরুরী। তিনি বলেন, সরাসরি ব্যাংকিং লেনদেন চালু হলে বড় সমস্যা দূর হয়। এটা দ্রুত হওয়া প্রয়োজন। জানা গেছে, বিশ্বের তৃতীয় প্রধান ভোক্তা বাজার হওয়া সত্ত্বেও রাশিয়ায় রফতানি অনেক কম। পোশাকের বাইরে অন্যান্য পণ্য রফতানিতেও প্রধান বাধা উচ্চ শুল্ক। অন্যান্য বাধার মধ্যে রয়েছে ব্যাংকিং চ্যানেল না থাকা, ভাষা, যোগাযোগ ও বিপণন কৌশলের দুর্বলতা। ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, রাশিয়া বাংলাদেশকে ৭৬টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে। তবে উল্লেখ করার মতো কোন পণ্য নেই এ তালিকায়। বেশিরভাগ বাংলাদেশী পণ্যে অন্য অনেক দেশের তুলনায় রাশিয়া বেশি হারে শুল্ক আদায় করছে।
×