ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জঙ্গী দমনে ব্যর্থতা ও ধোঁকাবাজির অভিযোগ ট্রাম্পের

পাকিস্তানকে সাহায্য বন্ধের হুমকি

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ৩ জানুয়ারি ২০১৮

পাকিস্তানকে সাহায্য বন্ধের হুমকি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘদিনের মিত্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ধোঁকাবাজি এবং জঙ্গী দমনে ব্যর্থতার অভিযোগে সাহায্য বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। বছরের প্রথম টুইটে তিনি বলেন, পাকিস্তান বৈদেশিক সাহায্য হিসেবে প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে শত শত কোটি ডলার অর্থ নিলেও জঙ্গীদের আশ্রয় দিয়ে এসেছে। জবাবে পাকিস্তান বলেছে ট্রাম্প আফগানিস্তানে হেরে গিয়ে ক্ষেপে গেছেন। এএফপি, বিবিসি ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউন। পাকিস্তানকে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২৫ কোটি ডলার না পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ অর্থ সাহায্য পাঠাতে দেরি হবে বলে আগস্টে ওয়াশিংটন ইসলামাবাদকে জানিয়েছিল। বলা হচ্ছে, জঙ্গী ব্যর্থতার জন্য এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ট্রাম্প টুইট বার্তায় লেখেন যে, ‘যুক্তরাষ্ট্র ১৫ বছর ধরে বোকার মতো পাকিস্তানকে তিন হাজার ৩শ’ কোটি ডলার দিয়েছে, বিনিময়ে কিছুই পায়নি। বরং আমাদের নেতৃবৃন্দকে বোকা ভেবে দেশটি মিথ্যা বলে ও প্রতারণা করে।’ তিনি আরও লেখেন যে, আফগানিস্তানে মার্কিন সেনারা যাদের খুঁজছে, পাকিস্তান তাদের নিরাপদ আশ্রয় দিচ্ছে। যথেষ্ট হয়েছে, আর না।’ ট্রাম্পের টুইটের প্রতিবাদে পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড হেইলকে তলব করে ইসলামাবাদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছে মঙ্গলবার মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে। তাকে সোমবার রাতে ডেকে পাঠানো হয়। পাকিস্তানে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস বা পাক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি। এদিকে ট্রাম্পের টুইটের জবাবে পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে ইতোমধ্যে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে তাদের আর সহযোগিতা করবে না পাকিস্তান। ফলে ট্রাম্পের এই টুইটকে গুরুত্ব দিচ্ছে না ইসলামাবাদ। তিনি আরও জানিয়েছেন, পাকিস্তান এ যাবত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কি পরিমাণ অর্থ সহায়তা নিয়েছে তার ব্যয়সহ যাবতীয় তথ্য প্রকাশ করতে তারা প্রস্তত আছেন। তিনি বলেন, পাকিস্তান সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সম্মুখ সারিতে রয়েছে। দেশটিতে সন্ত্রাসীদের কোন অভয়ারণ্য নেই এবং কোন সন্ত্রাসী গ্রুপকে তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহায়তা করেন না। প্রতিরক্ষামন্ত্রী খুররম দস্তগীর তার টুইটে জানিয়েছেন, সন্ত্রাস বিরোধী জোটের অংশ হিসেবে পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রকে বিনা খরচে স্থল ও আকাশসীমা এবং দেশের ভেতরের সামরিক ঘাঁটিগুলো ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে। গত ১৬ বছর ধরে আল-কায়েদাকে ধ্বংস করতে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করেছে। কিন্তু এর বিনিময়ে তারা ‘প্রতারণা ও অবিশ্বাস’ ছাড়া কিছুই পায়নি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনও আফগানিস্তানে তালেবানকে সমর্থন প্রশ্নে পাকিস্তানের ওপর চাপ বাড়িয়েছেন। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে পাকিস্তান যদি কোন ব্যবস্থা না নেয় তবে ভবিষ্যতে আর্থিক সহায়তা আর দেয়া হবে না। তালেবান সমর্থিত হাক্কানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ না নিতে পারায় এরই মধ্যে পাকিস্তানের আর্থিক সহায়তা বন্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের এই টুইটকে স্বাগত জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত আফগান রাষ্ট্রদূত হামদুল্লাহ মোহিব এবং সাবেক আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই। পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের বহু পুরনো মিত্র। এই বন্ধুত্বের কারণেই পাকিস্তান ন্যাটো সদস্য না হয়েও বিশেষ মর্যাদা ভোগ করে আসছে। এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন করার কথা বলেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তান সম্প্রতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নির্ভরশীলতা কমিয়ে এনেছে। চীন, রাশিয়া ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক এবং কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়িয়েছে। সূত্র জানায় ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে কোন গুরুত্বপূর্ণ দেশই যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সমর্থন করেনি। এরপর থেকেই ট্রাম্প প্রশাসন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চাপ বাড়াতে শুরু করেছে।
×