ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রিপোর্টারের ডায়েরি

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ৩ জানুয়ারি ২০১৮

রিপোর্টারের ডায়েরি

সিলেট থেকে শুরু সম্প্রতি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটে কাটিয়ে এলাম চার দিন। এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা বসেছিল সেখানে। পঁচিশ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছেড়ে আসি। এর পর থেকে প্রতিবছরই বিভিন্ন ব্যানারে চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলন ঘটে। কিন্তু এ ধরনের অনুষ্ঠানে আমার যাওয়া হয়নি। বছরখানেক আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পর পুরনো বন্ধুদের প্রতি আকর্ষণ আরও বাড়ে। কিন্তু এর পরও বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক বেশ ক’টি অনুষ্ঠান হয়ে যায়। কিন্তু আমার তাতে অংশ নেয়া হয়নি। এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পুনর্মিলনী সিলেটে হবে জানার পর থেকেই মনে মনে সিদ্ধান্ত নেই আর মিস করবো না। যেই কথা সেই কাজ। সিলেটে থেকেই শুরু করলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া। অবশ্য ঢাকার বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আগেই সিলেটের পুনর্মিলনীতে অংশ নেয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম। এ কাজে সহযোগিতা করেছে গৌতম পাল রঞ্জু এবং ফজল এ খুদা। ২১ ডিসেম্বর বিকেল ৪টার মধ্যে আমরা জড়ো হই সেগুনবাগিচায় নিয়ামুল বশিরের অফিসে। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুসারে বিকেল ৪টায় সিলেটের উদ্দেশে যাত্রা শুরুর কথা থাকলেও গাড়ি আসতে বিলম্ব হওয়ায় আমরা সেখানে বসেই আড্ডার পাশাপাশি বিকেলের নাস্তা সেরে নিলাম। ঘন্টা দেড়েক পর গাড়ি এলে আমরা লাগেসপত্র নিয়ে উঠে পড়ি। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে পর্যটন কোচটি আমাদের ২৪ জনকে নিয়ে সিলেটের পথে যাত্রা করে। রাজধানীর কোলাহল ছেড়ে গাড়ি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা সংলগ্ন ৩০০ ফুট রাস্তা দিয়ে সিলেটের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। আর আমরা সব বন্ধুরা মিলে পুরনো স্টাইলে হৈচৈ শুরু করি। নানান গপ্পবাজির ফাঁকে ফাঁকে চলে প্যারডি গানও। যে গানগুলো আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কিংবা শাটল ট্রেনেও করতাম। এ ছাড়া আলাপচারিতায় স্থান পায় আমাদের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শিক্ষার পরিবেশ, রাজনীতি, সংস্কৃতি ও প্রেমপ্রীতিসহ নানা বিষয়। আলাপচারিতার মাঝখানেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্মরণীয় কিছু ঘটনা নিয়ে শুরু হয় বিশ্লেষণ। বিশেষ করে কারও কারও রোমান্টিক স্মৃতির কথা স্মরণ করতে গিয়ে হাসির রোল পড়ে যায়। বি.বাড়িয়ার উজানভাটি রেস্টুরেন্টে ডিনার ও কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর আবার আমাদের বহনকারী কোচ সিলেটের পথে এগুতে থাকে। ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ১২টা। গাড়ি হবিগঞ্জ পেরিয়ে সিলেটের দিকে যেতেই বন্ধু সাহীদ হোসাইন সিট থেকে দাঁড়িয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে- ‘একটি সুখবর আছে। এখানে উপস্থিত আমাদের সবার প্রিয় বন্ধু জেসি রহমান এর আজ জন্মদিন।’ সঙ্গে সঙ্গে জেসি দাঁড়িয়ে যায়। আর আমরা সবাই সুর করে গাইতে খাকি ‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ জেসি...।’ এ সময় জেসি তাঁর ব্যাগ থেকে মিষ্টির প্যাকেট বের করে। মিষ্টি খেতে খেতেই জেসিকে নিয়ে আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠে বন্ধু নিয়ামুল বশির, গৌতম পাল রঞ্জু, শিল্পী রায়, সাহিদা রুবি, নুরী নাসরিন মিনু, মিজানুর রহমান, মাইনুল ইসলাম খান সাজু, নাসিরউদ্দিন মাতুববর, সোহেল রহমান, বেলি আঞ্জু, জাহাঙ্গীর, কচি ও সঙ্গীত শিল্পী আরিফুল ইসলাম মিঠুসহ সবাই। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে রাত ২টার দিকে গাড়ি থেকে নেমে আমরা হলিগেইট হোটেলে উঠি। এত রাতেও সিলেটের বন্ধুরা সেখানে উপস্থিত থেকে আমাদের বরণ করে। আমাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে তারা নিজেদের বাসায় ফিরে যায়। হোটেল কক্ষে প্রবেশের কিছুক্ষণ পর বন্ধু বশির সবাইকে তার কক্ষে ডাকেন। সেখানে ঘণ্টাখানেক আড্ডার পর আমরা যে যার কক্ষে ফিরে যাই। -শরীফুল ইসলাম নীল নদ ভ্রমণে একদিন নিরন্তর বয়ে চলেছে নীল নদ। গভীর নীল জলরাশী মরুর বুক চীরে নেমেছে ভূ-মধ্যসাগারে। এই বয়ে চলার মধ্য দিয়ে অনেক দেশের মানুষে অকৃপণভাবে বিলিয়ে যাচ্ছে জল এই নীল নদ। মরু অঞ্চলের প্রাণ নীল নদের তীর ধরেই গড়ে উঠেছে সভ্যতা। এটি সাদা নদের (নীল নদের মতো আরেকটি নদ) তীরে অবস্থিত, ভিক্টোরিয়া হ্রদ এবং নীল নদের পূর্বে অবস্থিত ইথিওপিয়া। ইথিওপিয়ার দক্ষিণে অবস্থিত খার্তুম। খার্তুম শহরটি নীল নদের দুই পাড়ের এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে। শহরটি অবস্থিত যেখানে সেখানে দুই নদ দ্বারা বিভক্ত। দুই নদের মিলনস্থল ‘আল মরগান’ নামে পরিচিত। প্রধান নদ মিশর ও ভূমধ্যসাগরের দিকে উত্তর প্রবাহের দিকে চলে গেছে। খার্তুমে আনুমানিক পাঁচ মিলিয়ন জনসংখ্যার বসবাস। খার্তুমের উত্তর আল খার্তুম বাহারি এবং উম্মে দুরমান সেতু দুটি পশ্চিম খার্তুমকে সংযুক্ত করেছে। দেশটিতে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষীদের ক্যাম্প পরিদর্শনে দেশ থেকে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সফরে গিয়েছিলেন। আমিও ওই প্রতিনিধিদলের একজন ছিলাম। আমরা এক বিকেলে নীল নদে নৌকা ভ্রমণে বের হয়েছিলাম। নীল জলের ওপর দিয়ে আমাদের নৌকা উজানে যাচ্ছে পরন্ত বিকেলে। আমরা নীলের জলে হাত রাখছি, একে অন্যের গায়ে জল ছিটিয়ে আনন্দ করেছি। আহা সেদিনের সেই আনন্দ মনে রাখার মতো। প্রতিনিধি দলের দল নেতা মেজর জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী আমাদের আনন্দের সঙ্গে একাত্ম হয়েছিলেন। পরে সূর্য্য ডুবে যাওয়ার কিছু আগে খার্তুম শহরে ফেরার পালা। তখন ভাটির দিকে নৌকা চলছে। আমরা যখন ঘাটে এলাম তখন সুদানের আকাশ থেকে সূর্য্য ডুবে যাচ্ছে। তখন নীল নদের বুকে এক অপূর্ব দৃশ্যে চকমক করছিল। আলো আঁধারের ঘেরা যেন নীল জলে অসংখ্য কথা মালার স্মৃতি তৈরি করে দিল। আমাদের মন ভারাক্রান্ত। আহা আর কিছু সময় যদি নীল নদের বুকের ওপর দিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারতাম তাহলে আরও আনন্দ নিয়ে দেশে ফিরতে পারতাম। আর নীল নদ ভ্রমণের গল্পটাও সমৃদ্ধ হতো। এর আগে আমি নীল নদ প্লেন থেকে দেখেছি। বাস্তবে এবারই প্রথম, দিনটি ২০১৭ সালের ২৯ নবেম্বর। স্মৃতির পাতায় লেখা থেকে যাবে নীল নদ ভ্রমণের স্মৃতি। নীল নদ ভ্রমণ যেমন আমাদের জন্য আনন্দের ছিল তেমনি সুদানের রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের গল্পগুলোও বেদনা জাগিয়েছে মনে। এখনও দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলছে। দেশটির একটি অঞ্চল নানা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দখলে। যে যাকে পারে তাকেই হত্যা করে। এমন ভয়ঙ্কর একটি গৃহযুদ্ধের দেশে নীল নদ ভ্রমন যতটা আনন্দের তারচেয়ে অনেক বেশি ভয়ংকর। যখন শোনা গেল অনেক মানুষের লাশ নীল নদ দিয়েই ভেসে গেছে সাগরে। তবু মুখ বন্ধ করে নিঃশব্দে অনন্ত বয়ে যাচ্ছে নীল নদ। -ফিরোজ মান্না
×