ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

নন্দনমঞ্চে দশদিনের জাতীয় যন্ত্রসঙ্গীত উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২ জানুয়ারি ২০১৮

নন্দনমঞ্চে দশদিনের জাতীয় যন্ত্রসঙ্গীত উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিকেল গড়িয়ে ঘনিয়ে আসে সন্ধ্যা। সেই গোধূলি লগ্নে হলদে আভাময় ফানুসগুলো উড়তে থাকে আকাশে। মুহুর্মুহু শব্দের গর্জন তোলা বর্ণবহুল আতশবাজির দেখা মেলে অন্তরীক্ষে। অতিথিসহ অনুষ্ঠানের দর্শক-শ্রোতার হাতে থাকা রঙিন বেলুনগুলোও ছেড়ে দেয়া হয় আসমানের পানে। আর আকাশে যখন চলছিল আলোর খেলা তখন মঞ্চ থেকে ভেসে বেড়িয়েছে সুরসুধা। একতারা, সারেঙ্গি, বাঁশি, করতালসহ নানা বাদ্যযন্ত্রে সুখময় শব্দনিনাদ তুলেছে বাদ্যযন্ত্রীরা। এমন সুন্দরতম দৃশ্যকল্পের মাধ্যমে সূচনা হয় জাতীয় যন্ত্রসঙ্গীত উৎসব। শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে সোমবার থেকে শুরু হলো দশ দিনের এই জাতীয় যন্ত্রসঙ্গীত উৎসব। আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল থেকে একাডেমির নন্দন মঞ্চে সুরের মূর্ছনা ছড়াবেন সারাদেশের যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীরা। ঢাকাসহ ৬৪ জেলার ১২০০ বাদ্যযন্ত্রী অংশ নিচ্ছেন এ উৎসবের। স্বদেশের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের হারানো গৌরবের পুনরুজ্জীবনের প্রত্যাশায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ উৎসব। পৌষের সন্ধ্যায় প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসব উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন গিটারবাদক এনামুল কবির। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সরকারী সঙ্গীত কলেজের শিক্ষক ও উৎসবের সমন্বয়ক কমল খালিদ। সভাপতিত্ব করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। উদ্বোধনী বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, যন্ত্রসঙ্গীত নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। বাদ্যযন্ত্র যেমন একদিকে হারিয়ে যাচ্ছে; তেমনি ক্রমশ যন্ত্রশিল্পীদের সংখ্যাও কমে আসছে। এমন সময় এত বড় আয়োজন এ শিল্পকে সমৃদ্ধ করবে। স্বাধীনতার পর যন্ত্রসঙ্গীত নিয়ে এমন বৃহৎ কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি। এই উৎসব যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীদের মাঝে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করবে। এনামুল কবির বলেন, এখন বেশিরভাগ যন্ত্রীই অল্প কয়েকদিন অনুশীলন করে রেডিও-টেলিভিশনের যাওয়ার জন্য উতলা হয়ে যায়। এ প্রবণতা থেকে সরে আসতে হবে। আমার সঙ্গীত জীবনের ৬০ বছর পূর্ণ হয়েছে। আমি আশা করব, এ উৎসবে অংশ নেয়া শিল্পীরা আমার চেয়েও বেশিদিন এ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন, এটাই প্রত্যাশা। লিয়াকত আলী লাকী বলেন, যন্ত্রসঙ্গীতের আশ্রয়েই আমরা গান শুনি। একসময় আমাদের নিজস্ব প্রায় ৬০০ প্রকারের বাদ্যযন্ত্র ছিল। ক্রমশই হারিয়ে যাচ্ছে সেসব বাদ্যযন্ত্র। আমরা যন্ত্রসঙ্গীতের সেই ঐতিহ্যকে পুনররুদ্ধার করতে চাই। ইলেক্ট্রনিক সম্প্রচার মাধ্যম কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি টেলিভিশন চ্যানেলেই যন্ত্রসঙ্গীত ও উচ্চাঙ্গসঙ্গীত পরিবেশনার নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ থাকা উচিত। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে অর্কেস্ট্রার সুরে শুরু হয় পরিবেশনা পর্বে। মোঃ মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে পরিবেশিত হয় ‘উড়ন্ত পাখি’ শীর্ষক অর্কেস্ট্রা। যাতে গতি, ছন্দ, লয় ও ধ্বনির মিশ্রণে কলরব করে পাখি। অর্কেস্ট্রার পরিচালক মোঃ মনিরুজ্জামান বৈদ্যুতিক বাঁশি, সিরভার বাঁশি, সেক্সোফোন, সুপ্রানো সেক্সোফোন ও বাঁশির বাঁশি পরিবেশন করেন। তার সঙ্গে সেতারে ছিলেন ফিরোজ খান, সরোদে ইউসুফ খান, গিটারে রিচার্ড কিশোর, পারকাশনে একরাম হোসেন, কি-বোর্ডে রবিনস্্ চৌধুরী, অক্টোপ্যাডে শেখ পুলক, পাখওয়াজে সুষেণ কুমার রায়, তবলায় ইফতেফার আলম ডলার, বেহালায় মোঃ নুরুজ্জামান এবং কণ্ঠে ছিলেন স্বরলিপি। অর্কেস্ট্রা পরিবেশনা শেষে এনামুল কবির পরিবেশন করেন হাওয়াইন গিটার। এরপর শুরু হয় বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শিল্পীদের পরিবেশনা। শুরুতেই ছিল চট্টগ্রাম জেলার তিন শিল্পীর একক পরিবেশনা। দোলন কানুনগো শুনিয়েছেন মোহনবীণার সুর। শ্যামল চন্দ্র দাশ বাজিয়েছেন বেহালা। তবলায় বোল তুলেছেন শাখাওয়াত হোসেন। রংপুর জেলার শিল্পীরা দলীয়ভাবে পরিবেশন করেন রাগ ইমন। শিল্পীদের মধ্যে সন্তুরে ছিলেন তমাল কান্তি লাহিড়ী, সেতারে আহসান হাবীব, সেতারে এখলাস মিয়া দুলু, বেহালায় ছিলেন শহিদুজ্জামান, এস্রাজে ছিলেন নারায়ণ চন্দ্র বর্মণ, তবলায় ছিলেন বিপ্লব চন্দ্র রায় এবং গিটারে ছিলের প্রত্যয়। একক পরিবেশনার শুরুতেই আহসান হাবীব সেতারে পরিবেশন করেন রাগ চারুকেশী। এর পর সন্তুরের যুগলবন্দীতে রাগ হংশধ্বনি উপস্থাপন করেন তমাল কান্তি লাহিড়ী, শহিদুজ্জামান ও পলক। তবলা ও বেহালার বাদন উপস্থাপন করেছেন নারায়ণগঞ্জের শিল্পীরা। তবলার বোলে রাগ চন্দ্রকোষ ও ধুন পরিবেশন করেন সবুজ আহমেদ। একই রাগ ও ধুনে বেহালায় পৃথক পরিবেশনা উপস্থাপন করেন শান্ত আহমেদ ও কামরুল আহমেদ। প্রথম দিনের উৎসবের শেষ পরিবেশনা উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মিউজিশিয়ান ফাউন্ডেশনের (বিএমএফ) শিল্পীরা। অর্কেস্ট্রার আশ্রয়ে দলটি উপস্থাপন করে ‘বায়ান্ন থেকে একাত্তর’ শিরোনামের পরিবেশনা। ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ সাল অব্দি যে সব গানগুলো ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা জুগিয়েছে এবং বঙ্গবন্ধুর উপর রচিত গানগুলো নিয়ে এ অর্কেস্ট্রাটি সাজানো হয়েছে। অর্কেস্ট্রার পরিচালনায় ছিলেন এ কে আজাদ মিন্টু ও বিশ্বজিৎ সরকার। নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরীর জন্মোৎসব ॥ বাংলাদেশের নৃত্যশিল্পের ভুবনে অনন্য এক নৃত্যশিল্পী বুলবুল চৌধুরী। সোমবার ছিল এই নৃত্যাচার্যের ৯৯তম জন্মদিন। আর জন্মদিনের পথিকৃৎ এই নৃত্যশিল্পীকে জানানো হলো ভালবাসা। এদিন সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় ‘বুলবুল জন্মোৎসব ২০১৮’ শীর্ষক আয়োজন। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে বুলবুল চৌধুরীকে নিবেদিত আলোচনাসভা, তার নামাঙ্কিত পদক প্রদান ও নৃত্য পরিবেশনায় সাজানো হয় অনুষ্ঠান। বুলবুল পদক প্রদান করা হয় প্রয়াত নৃত্যগুরু রামকান্ত সিংহকে। প্রয়াত এই শিল্পীর পক্ষে অতিথিদের কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন তার মেয়ে নমিতা চৌধুরী। যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা ও বাংলাদেশ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। অনুরাগ থিয়েটারের ‘গ্রাস’ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন ॥ বছরের প্রথম দিনেই ঢাকার মঞ্চে এলো নতুন নাটক। অনুরাগ থিয়েটারের দ্বিতীয় নাট্য প্রযোজনা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতা অবলম্বনে ‘গ্রাস’ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হলো সোমবার। সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয় নাটকটি। প্রযোজনাটি রচনা করেছেন শ্যামল দত্ত ও নির্দেশনা দিয়েছেন শিশির রহমান।
×