ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা

আওয়ামী লীগকে তিনবার ক্ষমতায় আনার বিনিময়ে কিছুই পাইনি ॥ এরশাদ

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২ জানুয়ারি ২০১৮

আওয়ামী লীগকে তিনবার ক্ষমতায় আনার বিনিময়ে কিছুই পাইনি ॥ এরশাদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ তিনবার আমাদের সহযোগিতায় ক্ষমতায় এসেছে। বিনিময়ে কিছুই পাইনি। ১৯৯৬ সালে বিএনপির দেয়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেয়ার বিনিময়ে তারা আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে দিয়ে দল ভাঙ্গালেন। আমাদের ১৪ এমপিকে কিনে নিল। আমাকে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানাসহ নির্বাচনে অযোগ্য করা হলো। ২০০৮ সালে মহাজোট করা হলো। কথা ছিল ৪৮ আসন দেবে। কিন্তু দেয়া হলো মাত্র ৩৩। জয়ী হলাম ২৯টিতে। বিএনপি পেল ৩০। আমাদের কাছ থেকে যদি সেই ১৭ আসন কেড়ে না নিত তাহলে আমরা তখনই প্রধান বিরোধীদল হই। কিন্তু আওয়ামী লীগ তা হতে দিল না। আর ২০১৪ সালে জাপা যদি নির্বাচনে না যেত তাহলে হয়ত বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতো। সোমবার দলের ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে র‌্যালিপূর্বক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতারা আগামীতে একক নির্বাচনের তাগিদ দেন। তারা বলেন, একক নির্বাচনে অংশ নিলে জাতীয় পার্টির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ দেশের মানুষ এখন জাপাকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। এরশাদ বলেন, আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ। তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি বিগ ফ্যাক্টর। জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে কেউ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। জাতীয় পার্টি ছাড়া নির্বাচন হবে না। তাই জাতীয় পার্টিকে নিয়ে এখন আলোচনা সর্বত্র। বিএনপি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ এই দূত বলেন, সীমাহীন অত্যাচারের মাধ্যমে বিএনপি আমাদের নিঃশেষ করে দিতে চেয়েছিল। আল্লাহ আছেন, বিচার আছে। আমাকে এবং আমার পরিবারকে বিনা দোষে কারাগারে নিক্ষেপ করেছিলেন। আজ (বেগম জিয়া) কারাগার আপনার অতি সন্নিকটে। আমার প্রতি অনেক অন্যায় কাজ করেছেন, আজ তার প্রতিফল পাচ্ছেন। দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, এসএম ফয়সল চিশতী, সাহিদুর রহমান টেপা, নাসির উদ্দিন মামুন, ইসহাক ভূঁইয়া, একেএম আসরাফুজ্জামান খান প্রমুখ। জাপা চেয়ারম্যান বলেন, মানুষের মধ্যে প্রতিনিয়ত খুন আর গুমের ভীতি, অস্থির রাজনীতি। কিন্তু আমাদের আর হতাশা নেই। বিজয়ের মাসে রংপুরে অভূতপূর্ব বিজয় প্রমাণ করেছে জাতীয় পার্টি আছে এবং থাকবে। রাষ্ট্রপ্রধান হতে চাইনি। তৎকালীন বিএনপির সরকারের মন্ত্রিসভা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়লে সাত্তার সাহেবের অনুরোধে ক্ষমতা নিয়ে ছিলাম। ক্ষমতা নিয়ে নির্বাচন দিয়ে ছিলাম। কেউ আসলেন না। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারিতে জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করে সামরিক শাসন বিলুপ্ত করি। তার চার মাস পর নির্বাচন হলো। সে নির্বাচনে আওয়ালী লীগ, জামায়াত, সিপিবি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ ২৮টি দল অংশ নিল। চার মাসের এই দল ১৭৪টি আসন পেয়ে জয়ী হলো। তিনি বলেন, আমাদের শাসনামলকে কেউ অবৈধ বলতে পারবে না। কারণ হাইকোর্ট ১৯৮৬ সাল থেকে জাতীয় পার্টির শাসনামল বৈধ ঘোষণা করেছে। সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি দেশের জন্য অনেক কিছু করেছি। আমার হাতে রক্তের দাগ নেই। ডাঃ মিলনকে কে হত্যা করেছে আমি জানি না। হত্যাকারীদের গ্রেফতারও করা হলো না। নূর হোসেনকে পিছন থেকে গুলি করা হলো, তার হত্যারও বিচার কোন সরকার করল না। আমি ক্ষমতায় আসতে পারলে এ হত্যার বিচার করে প্রমাণ করব আসলে এ হত্যার পিছনে কারা দায়ী। আর কেন তাদের হত্যা করা হলো। নিজ দলের ভবিষ্যত উত্তরাধিকারী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাপার ভবিষ্যত দায়িত্ব কে পাবেন তা একটি বিরাট প্রশ্ন। এ বিষয়ে আমি সিদ্ধান্ত দিব। আর যদি কোন কারণে আমি ঘোষণা না করে যেতে পারি, তাহলে প্রেসিডিয়াম সিদ্ধান্ত নেবে কে হবে জাপার ভবিষ্যত চেয়ারম্যান। সভায় সভাপতির বক্তব্যে দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ বলেছেন, জনগণ এখন সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। জাতীয় পার্টিও চায়। রংপুরে এর প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন হলেও ভাগ্যের কোন উন্নয়ন হচ্ছে না। রাজধানী ঢাকায় উন্নয়ন দেখা গেলেও ঢাকার বাইরে তা হচ্ছে না। তিনি নিজ দল প্রসঙ্গে বলেন, আমরা কারও দাবার ঘুঁটি হতে চাই না। আমরা রাজা হতে চাই। দেশবাসীর ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটাতে চাই। জাপার শোডাউন দলের ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত র‌্যালির নামে রাজধানীতে শোডাউন করেছে জাতীয় পার্টি। র‌্যালিতে অংশ নিতে সোমবার সকাল থেকেই রাজধানীর প্রায় সকল থানা ও ওয়ার্ড থেকে খ- খ- মিছিল নিয়ে জাপার নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-৪ আসনের এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার নির্বাচনী এলাকা শ্যামপুর কদমতলি থানা জাতীয় পার্টির চার থেকে পাঁচ হাজার নেতাকর্মীর একটি বিশাল মিছিল মৎস্য ভবনের সামনে আসলে পুরো সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সৃষ্টি হয় যানজটের। নেতাকর্মীদের হাতে হাতে লাঙ্গল, এরশাদ, রওশন ও বাবলার বিশাল আকৃতির ছবি, শত শত ব্যানার ফেস্টুন দেখা যায়। ব্যান্ড পার্টির তালে তালে নান্দনিক সাজে সজ্জিত এই মিছিল নগরবাসীর দৃষ্টি কাড়ে। মিছিলের নেতৃত্ব দেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সুজন দে, শেখ মাসুক রহমান, কাওসার আহমেদ ও ইব্রাহিম মোল্লা। আবু হোসেন বাবলার পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সেন্টু, লিয়াকত হোসেন খোকা এমপির অনুসারী নেতাকর্মীরাও বিশাল মিছিল নিয়ে র‌্যালিতে অংশ নেন। এছাড়া র‌্যালিতে জাতীয় ছাত্র সমাজ, জাতীয় যুব সংহতির ও জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টি, কৃষক পার্টি, মহিলা পার্টির নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
×