স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে সোমবার দারুণ একটি উত্তেজনাকর ম্যাচ উপভোগ করেছেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আসা দর্শকরা। এক দল দুই গোল করে ‘প্রায়’ জিতেই গিয়েছিল। কিন্তু খাদের কিনারায় চলে যাওয়া অপর দলটি লড়াকু খেলে দুটি গোলই শোধ করে এবং শেষ গোলটি করে ম্যাচের একেবারে অন্তিম মুহূর্তে! ২-২ স্কোরলাইনে ড্র হওয়া এই ম্যাচের স্কোরলাইন আসলে বোঝাতে পারবে না কতটা প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ খেলেছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড এবং আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ। দুটোই মতিঝিলের ক্লাব। শ^াসরুদ্ধকর এই মতিঝিল ডার্বি ড্র হলেও জয় কুড়ানোর মতোই আনন্দ পেয়েছে মারুফুল হকের আরামবাগ এবং হারার মতোই কষ্ট পেয়েছে রাশেদ পাপ্পুর মোহামেডান।
খেলার শুরুতে উভয় দলই খেলে ৪-৩-৩ ফর্মেশনে। নিজেদের ২০তম ম্যাচে এটা মোহামেডানের পঞ্চম ড্র। ২৯ পয়েন্ট নিয়ে তারা আছে পয়েন্ট টেবিলের আগের পঞ্চম স্থানেই। পক্ষান্তরে সমান ম্যাচে এটা আরামবাগেরও এটা পঞ্চম ড্র। ১৭ পয়েন্ট নিয়ে তারাও আছে আগের অষ্টম স্থানেই (এই পরিসংখ্যান ওই দিনই অনুষ্ঠিত ফরাশগঞ্জ-মুক্তিযোদ্ধা ম্যাচের আগ পর্যন্ত)।
প্রথম লেগেও আরামবাগকে ৩-১ গোলে হারের স্বাদ দিয়েছিল ‘সাদা-কালো’ খ্যাত মোহামেডান। দ্বিতীয় লেগের মোকাবেলায় সেই ফল পাল্টে দিল আরামবাগ।
৪ মিনিটেই প্রথম আক্রমণ করে মোহামেডান এবং প্রথমবারেই সফল। মূলত আরামবাগের ডিফেন্ডারদের ভুলেই গোলটি পেয়ে যায় সর্বাধিক ১৯ বারের লীগ চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান। আরামবাগের ডি-বক্সের ঠিক বাইরে (মাঝ প্রান্ত) বল পান মোহামেডানের ফরোয়ার্ড বিপলু আহমেদ। তিনি দেরি না করে বলটা থ্রু বাড়ান সতীর্থ নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড এনকোচা কিংসলে চিগুজি। তাকে অফসাইডের ফাঁদে ফেলতে চেয়েছিলেন আরামবাগের ডিফেন্ডাররা। কিন্তু সৌভাগ্যবশত অফসাইডে ছিলেন না এনকোচা। আর সেই সৌভাগ্যটা কাজে লাগাতে যা করা দরকার, ঠিক তাই করলেন তিনি। তড়িৎ গতিতে বল নিয়ে বক্সে ঢুক পড়েন এবং আগুয়ান গোলরক্ষক আজম খানকে কাটিয়ে বল ঠেলে দেন পোস্টে। আরামবাগের দুই ডিফেন্ডার বল ধাওয়া করে প্রাণপণে দৌড়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েও বলের নাগাল পাননি। বল জড়িয়ে যায় জালে এবং সতীর্থদের সঙ্গে এনকোচা মাতেন আনন্দে (১-০)। লীগে এটা তা ব্যক্তিগত একাদশ গোল, যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। এদিকে অফসাইডের আবেদন করে রেফারি জালাল উদ্দিনকে ঘিরে ধরেন আরামবাগের সব খেলোয়াড়। কিন্তু রেফারি গোলের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন।
২৭ মিনিটে সমতায় ফেরার সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করে ‘রাইজিং স্ট্রেন্থ’ আরামবাগ। ডি-বক্সের বাইরে আরামবাগের অধিনায়ক-ফরোয়ার্ড আবু সুফিয়ান সুফিল বল ঠেলে দেন অপর সতীর্থ-ফরোয়ার্ড রাজন মিয়ার উদ্দেশে। রাজন ডি-বক্সের ভেতর বল ক্রস করেন ফরোয়ার্ড সুমন আলীর দিকে। বল পেয়েই গোল রক্ষককের মুখোমুখি হয়ে যান সুমন। শট মারলেই নিশ্চিত গোল। শট তিনি নিলেনও। কিন্তু এ কি, বল কিনা গড়িয়ে গড়িয়ে চলে গেল সাইডেপাস্টের বাইরে দিয়ে! আক্ষেপের অনলে পোড়েন খেলা দেখতে আসা আরামবাগের সমর্থকরা।
৩৫ মিনিটে সুযোগ নষ্ট করে মোহামেডানও। ডি-বক্সের ঠিক মাথায় আবারও ডিফেন্ডারদের ভুলে বল পেয়ে যান এনকোচা কিংসলে। যদিও তার সামনে দ-ায়মান আরও দুই প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার। ওই অবস্থাতেই গোলপোস্ট লক্ষ্য করে ডান পায়ের জোরালো শট করেন এনকোচা। কিন্তু বল পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে চলে যায়।
প্রথমার্ধে ১-০ গোলের লিড নিয়েই বিরতিতে যায় মোহামেডান।
৪৯ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে মোহামেডান। ডিফেন্ডার মোহাম্মদ লিংকনের কর্নার বক্সের মধ্যে লাফিয়ে উঠে হেড করেন মোহামেডানের অধিনায়ক-ফরোয়ার্ড জাহিদ হাসান এমিলি। তার সেই হেড আরামবাগের ডিফেন্ডার রকির মাথায় লেগে বল ঢুকে যায় জালে (২-০)। বিস্ময়কর ব্যাপার, চলতি লীগে এটা জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার এমিলির ব্যক্তিগত প্রথম গোল!
৭৫ মিনিটে আবারও গোলের সুযোগ নষ্ট করে আরামবাগ। মাঝমাঠ থেকে সতীর্থর কাছ থেকে উঁচু লম্বা থ্রু পাস পেয়ে যান অরক্ষিত নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড বুকোলা ওলালেকা। বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন তিনি। বিপদ বুঝে সামনে এগিয়ে আসেন মোহামেডানের গোলরক্ষক মামুন খান। পোস্ট লক্ষ্য করে ডান পায়ের গড়ানো শট নেন বুকোলা। কিন্তু সেই শট মামুনের পায়ে লেগে ফিরে এলে বুকোলোর গোলপ্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
৮০ মিনিটে এক গোল শোধ করে আরামবাগ। কর্নার থেকে বল পেয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে বক্সের ভেতর উঁচু সেন্টার করেন ডিফেন্ডার রকি। সেই বল লাফিয়ে ওঠে, হেড করেন সুমন আলী। মামুন খান ঝাঁপিয়ে পড়েও শেষরক্ষা করতে পারেননি। বলটি সাইডপোস্টে লেগে ভেতরে ঢুকে যায়। গোল (১-২)!
৯০ মিনিটে অসাধ্য সাধন করে আরামবাগ। সমতায় ফেরে তারা, দারুণভাবে। ডি-বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ের দূরপাল্লার শট মারেন ইকাঙ্গা। মামুন খান সেই শটটি ঠিকমতো গ্রিপে নিতে পারেননি। সুযোগটা কড়ায়-গ-ায় কাজে লাগান ওতপেতে থাকা বুকোলা শুয়ে পড়ে ফিরতি শটে বল পাঠান জালে (২-২)। গোল হজম করে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে সাদা-কালো শিবির।
একটু পরেই রেফারি খেলা শেষের বাঁশি বাজালে জয়ের সমতুল্য ড্রয়ের চিত্তসুখ নিয়ে আরামবাগ এবং হারের সমতুল্য ড্রয়ের একরাশ হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়ে মোহামেডান।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: