ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহির্প্রকাশ

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২ জানুয়ারি ২০১৮

পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহির্প্রকাশ

ইরানের মাশহাদে বৃহস্পতিবার রাতে ব্যাপক সরকার বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। অর্থনীতির ভগ্নদশা, দুর্নীতির বিস্তার এবং খাদ্য ও জ্বালানির উচ্চমূল্য বিক্ষোভের কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এছাড়া রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধেও এটি জনগণের অনেক বছরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২০০৯ সালের পর এটি দেশটিতে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। সিএনএন। ইরানের জনগন আশা করেছিল অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো উঠে যাওয়ার পর তাদের জীবন যাত্রার অবস্থা ভাল হবে। কিন্তু তাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। ২০১৫ সালে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ছয়টি পশ্চিমা দেশের সঙ্গে ইরানের পরমাণু সমঝোতা চুক্তি হয়। চুক্তির পর ইরানের আর্থিক, জ্বালানি ও পরিবহন খাতের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। তবে কালো তালিকাভুক্ত হওয়া হাজার হাজার ইরানীর নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়নি। এছাড়া গত বছর একটি রকেট পরীক্ষার পর যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীদের আন্দোলন চলতে থাকলে, শক্ত হাতে তা দমন করা হবে বলে হুশিয়রি দিয়েছে দেশটির রেভলুশ্যনারি গার্ড। গার্ড কমান্ডার অভিযোগ করেছেন, বিক্ষোভকারীরা দ্রব্যমূল্যের বাইরে রাজনৈতিক ইস্যুতে শ্লোগান দিচ্ছে এবং তারা সরকারী সম্পত্তিতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, বিক্ষোভকারীরা যদি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদেই রাস্তায় নামত তারা সরকার বিরোধী শ্লোগান দিত না। ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জরিফ বলেছেন, আইন লঙ্ঘনকারী ও সরকারী সম্পদ ধংসকারীদের জবাবদিহি করতে হবে। বিক্ষোভের জন্য কঠিন মূল্য দিতে হবে বলেও তিনি সতর্ক করে দেন। ন্যাশনাল ইরানিয়ান আমেরিকান কাউন্সিলের প্রধান ত্রিতা পার্সির মতো অন্যান্য বিশ্লেসকরাও বলেছেন, ‘অর্থনৈতিক অব্যবস্থান, দুর্নীতি ও বেকারত্বের উর্ধমুখিতা জনমনে ক্ষোভ তৈরি করেছে। সরকারের নীতি দেশটি বেকারত্ব ও মুদ্রাস্ফীতিকে উর্ধমুখীক করেছে। বিদেশী বিনিয়োগও বন্ধ হয়ে আছে। বহু ইরানীই পরমাণু চুক্তি সমর্থন করেছিল। এর ফলে যে অর্থনৈতিক মুক্তি ঘটবে বলে তারা আশা করেছিল সেটি ঘটেনি। ফলে মানুষ এখন সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ। ওই কাউন্সিলের রিসার্চ ডিরেক্টর রেজা মারাশি বলেন, ‘চলমান বিক্ষোভ সরকারের বিরুদ্ধে অনেক বছরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ। সরকারের উচিত তাদের কথা শোনা এবং ক্ষোভের বিষয়গুলো সঠিকভাবে সামাল দেয়া।’ ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা র‌্যান্ড কর্পোরেশনের ইরান বিষয়ক গবেষক আলী রেজা নাদের বলেন, ‘ইরানের জনগণ প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির ওপর আস্থা হারিয়েছে।’ তিনি মনে করেন, ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর দেশ যে ধারায় চলে আসছিল তার প্রতিই এখন মানুষ হতাশ হয়ে পড়েছে। তারা কেবল দুর্নীতি নয়, সব রকম সামাজিক বৈষম্য ও অনাচারের প্রতিকার চায়। তারা এটাও চায় বিদ্যমান সামাজিক ব্যবস্থাগুলো যেন নারীদের আরও সহায়ক হয়। মধ্যপ্রাচ্যে অন্যসব দেশের চেয়ে ইরানের মেয়েরা শিক্ষাদীক্ষায় এগিয়ে, কিন্তু তারা সামাজিক বৈষম্যর শিকার হচ্ছে। বর্তমান বিক্ষোভকে অনেকে ২০০৯ সালের গ্রিন মুভমেন্টের সঙ্গে তুলনা করছেন। এরপর দেশটিতে বড় ধরনের সরকার বিরোধী বিক্ষোভ হয়নি। মারাশি মনে করেন ওই সময়ের তুলনায় বর্তমান বিক্ষোভের কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন তখন বিক্ষোভ হয়েছিল কেবল রাজধানী তেহরানে। কিন্তু এবার বিক্ষোভ মাশহাদ নগরীতে শুরু হয়ে কোম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। এই শহরগুলোতে ধর্মীয় প্রভাব অনেক বেশি। বর্তমান বিক্ষোভ সরাসরি সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির বিরুদ্ধে। সিএনএনের ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোম্যাটিক এডিটর নিক রবার্টসনও তাই মনে করেন।
×