ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাথমিকে ফল বিপর্যয়

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ২ জানুয়ারি ২০১৮

প্রাথমিকে ফল বিপর্যয়

প্রাথমিক শিক্ষায় এবার ফল বিপর্যয় ঘটেছে। এর আগে প্রতি বছরই পাসের হারের ক্ষেত্রে মাইলফলক অতিক্রম করছিল পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা। এবার ঘটেছে ব্যতিক্রম। পাসের হার ও জিপিএ-৫সহ প্রায় সব সূচকেই এবার খারাপ ফল করেছে শিক্ষার্থীরা। অষ্টম শ্রেণীর জেএসসিতে পাসের হার গতবারের চেয়ে কমেছে ১০ শতাংশ, আর পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে পাসের হার কমেছে ৩ শতাংশ। অবনতি ঘটেছে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও। মোট কথা, শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে, বেড়েছে ফেলের সংখ্যা। অতীতের মতো এবারও বলা হচ্ছে ইংরেজী ও গণিতে খারাপ করায় ঘটেছে ফল বিপর্যয়। উল্লেখ্য, এ দুটো বিষয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকেরও অভাব আছে সারাদেশে। প্রধানমন্ত্রী ফল হাতে পেয়ে সারাদেশে স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য নিবিড় তদারকির নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি। সত্য বটে, এক্ষেত্রে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যথেষ্ট অবহেলা এবং ঘাটতি রয়েছে। অন্যদিকে, শিক্ষকরা ক্লাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেবেন কি? উল্টো জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নিয়মিত বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির দাবিতে ধর্মঘটসহ আমরণ অনশনে নেমেছেন কয়েকদিন ধরে। শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বান সত্ত্বে¡ও ঘরে ফিরে না গিয়ে তারা চালিয়ে যাচ্ছেন কর্মসূচী। অন্যদিকে প্রাথমিক শিক্ষার স্তর ও সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দ্বিমুখী নীতিও কম দায়ী নয় ফল বিপর্যয়ের জন্য। নতুন শিক্ষানীতিতে ২০১৮ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বাস্তবায়ন করার সরকারী ঘোষণা থাকলেও সর্বশেষ অবস্থা হয়েছে লেজেগোবরে। শিক্ষানীতির আলোকে প্রাথমিক শিক্ষা পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করা নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একদিকে পরীক্ষামূলকভাবে ৬২৭টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত চালু করে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বছরখানেক আগে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে মৌখিকভাবে ন্যস্ত করলেও প্রশাসনিক জটিলতা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কায় তা হস্তান্তর করতে পারছে না। ফলে তা বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রণালয়ে। সর্বোপরি অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদানের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, অভিজ্ঞ ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক এবং আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা নেই। রাতারাতি এসব গড়ে তোলাও সম্ভব নয়। বাজেট ঘাটতির বিষয়টিও সুবিদিত। মোট কথা, প্রাথমিক শিক্ষা সুনির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমলাতান্ত্রিক ও মনস্তাত্ত্বিক জটিলতায় জড়িয়ে পড়েছে সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রণালয়। ফলে স্বভাবতই প্রবল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছে সারাদেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষাবিদ, শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। কবে নাগাদ তা বাস্তবায়ন হবে অথবা আদৌ বাস্তবায়ন হতে পারবে কিনা তাও বলতে পারছে না কেউ। ফল বিপর্যয়ে এটি প্রভাব ফেলতে পারে বৈকি। জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে হলে সময় প্রয়োজন। কেননা, এর জন্য লাগবে অর্থ, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, উপযুক্ত শিক্ষক ও প্রশিক্ষণ, তাদের মর্যাদা, সর্বোপরি যথাযথ পাঠ্যপুস্তক এবং কারিকুলাম। এ পর্যন্ত ঠিকই আছে। তাহলে এত আগে কোন প্রস্তুতি ছাড়াই ঘোষণা করার দরকার কী ছিল? লাখ লাখ মাসুম শিশু ও অভিভাবককে কি নাকানি-চুবানি না খাওয়ালে চলত না? সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এটা তো বুঝতে হবে যে, প্রাথমিক শিক্ষা ও বইপুস্তক অবৈতনিক হলেও সমাপনী পরীক্ষার নামে শিশুদের কোচিং এবং সৃজনশীল প্রশ্নের নামে গাইড বইয়ের জন্য গুচ্ছের খরচ হয়ে থাকে অভিভাবকদের। এর ওপর পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ কেন্দ্র পরিবর্তনের দুশ্চিন্তা ও দৌড়ঝাঁপ তো আছেই। এই অসহায়ত্ব থেকে শিশু ও অভিভাবকদের মুক্তি দিতে হবে অনতিবিলম্বে।
×