ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীর বাঘা পৌর নির্বাচন

তিনদিন পর কেন্দ্রে ভোটবাক্স ॥ বিক্ষোভ, নির্বাচন অফিস ঘেরাও

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ১ জানুয়ারি ২০১৮

তিনদিন পর কেন্দ্রে ভোটবাক্স ॥ বিক্ষোভ, নির্বাচন অফিস ঘেরাও

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ বাঘা পৌরসভা নির্বাচনের তিনদিন পর একটি কেন্দ্রে অব্যহৃত ফাকা ব্যালটবাক্স নিয়ে হুলুস্থুল কান্ড ঘটেছে। এ নির্বাচনে পরাজিত আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী আক্কাস আলী পক্ষের নেতাকর্মীরা কারচুপির অভিযোগ তুলে এলাকায় ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে। এ সময় সরকারী অফিসের এক কর্মচারীকে মারপিটের ঘটনাও ঘটে। এ নিয়ে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হলে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এর আগে উপজেলা নির্বাচন অফিসে তালা ঝুলিয়েও দেয়া হয়। রবিবার দুপুরে জেলার বাঘা উপজেলা পরিষদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, গত ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় বাঘা পৌরসভার নির্বাচন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী আক্কাস আলী পরাজিত হন। ভোটের তিনদিন পর রবিবার পৌর এলাকার ৯ নম্বর মশিদপুর কেন্দ্রে অতিরিক্ত একটি ব্যালেট বাক্স (ফাঁকা) ভুল করে রেখে আসার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে এলাকায় বিক্ষোভ বের করলে এলাকায় চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ভয়ে স্থানীয় দোকানপাটও বন্ধ হয়ে যায়। ঘেরাওয়ের মুখে সকাল থেকেই বন্ধ রাখা হয় উপজেলা নির্বাচন অফিসও। উপজেলা নির্বাচন অফিসের ভাষ্য, গত ২৮ ডিসেম্বর পৌরসভায় শন্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন শেষে কেন্দ্র ভিত্তিক ফল প্রকাশের পর মশিদপুর কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং কর্মকর্তা রেজাউল করিম ভুলবসত অতিরিক্ত একটি অব্যবহৃত ব্যালেটবাক্স কেন্দ্রের অফিস কক্ষে রেখে চলে আসেন। এরপর তিনি মৌখিকভাবে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করেন। রবিবার সকালে সেই বাক্সটি নির্বাচন অফিসের অপারেটর তসলিম উদ্দিনের কাছে জমা দেন। এদিকে সকালে ওই কেন্দ্র থেকে ব্যালটবাক্সটি মোটরসাইকেলে করে উপজেলায় নিয়ে আসতে দেখেন স্থানী লোকজন। তারা তাৎক্ষনাত বিষয়টি পরাজিত মেয়রপার্থী আক্কাছ আলীসহ দলীয় লোকজনকে অবগত করেন। ফলে মুহূর্তের মধ্যে শত-শত লোকজন জড় হয় উপজেলা পরিষদ চত্বরে। তারা এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রশ্ন ছুড়েন এবং ঘটনার এক পর্যায় প্রকল্প অফিসের এক কর্মচারী (সেন্টুকে) বেধড়ক মারপিট করে তার মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। পরে তারা উপজেলা নির্বাচন অফিস ঘেরাও করে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ সময় উপজেলা পরিষদ চত্বরে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে মেয়র প্রার্থী আক্কাছ আলী তার লোকজন নিয়ে উপজেলা চত্বরে এসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন। ঘটনার এক পর্যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও থানার ওসিসহ উপজেলা কর্মকর্তারা নির্বাচন অফিসে ছুটে যান। তারা মশিদপুর কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ব্যাংক অফিসার) রেজাউল করিমের সঙ্গেও কথা বলেন। প্রিজাইডিং অফিসার রেজাইল করিম জানান, তার কেন্দ্রে ৭ টি বুথের বিপরীতে ৮ টি ব্যালট বাক্স নির্বাচন অফিস থেকে দেয়া হয়েছিল। এরমধ্যে ১টি (অতিরিক্ত)বাক্স ৯ নম্বর মশিদপুর স্কুলের অফিস কক্ষে রাখা ছিল। কিন্তু ভোট গণনা হয়েছিল বড় একটি কক্ষে। সেখান থেকে ফল প্রকাশের পর তিনি ওই অতিরিক্ত বাক্সটি ভুলকরে রেখে আসেন। পরে নির্বাচন অফিসারকে জানালে তিনি সেটি পরে জমা দিতে বলেন। প্রেক্ষিতে রবিবার সকালে স্কুল খোলার পর তিনি ওই বাক্সটি স্কুল থেকে নিয়ে নির্বাচন অফিসে জমা দেন। এ নিয়েই ঘটে হুলুস্থুল কা-। আক্কাস আলী অভিযোগ করে বলেন, ভোট শেষে ব্যালটবাক্স কেন্দ্রে রেখে আসার কোন বিধান নেই। এর আগেও ওই কেন্দ্রে বিতর্কিত ঘটনা ঘটেছিল। এ কারণে বিষয়টি সহজভাবে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তিনি এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করবেন বলে জানান। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিন রেজা ও নির্বাচন অফিসার মজিবুল আলম বলেন, অব্যবহৃত ও অতিরিক্ত ব্যালটবাক্সটি ভুলক্রমেই কেন্দ্রে থেকে যায়। এটিকে এত বড় করে দেখার কিছু নেই। এখানে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে। অনিয়মের কোন ঘটনা ঘটেনি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে বলেও জানান ইউএনও শাহিন রেজা।
×