ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশই ফেবারিট ॥ তামিম

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১ জানুয়ারি ২০১৮

ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশই ফেবারিট ॥ তামিম

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আজ শুরু হয়ে যাচ্ছে নতুন বছর ২০১৮ সাল। এই বছরে বাংলাদেশ দলের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দেশের বাইরে যে বেশিরভাগ খেলা। তবে চ্যালেঞ্জটি শুরু হবে দেশের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলা দিয়ে। যে সিরিজে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুইয়ে। এই ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশকে ফেবারিট মানছেন ওপেনার তামিম ইকবাল। দেশের মাটিতে খেলা বলে বাংলাদেশই ফেবারিট। তামিম বলেছেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, খুবই আকর্ষণীয় একটা সিরিজ হবে। অন্য যে দুইটা দল আছে, দু’দলই ভাল। শ্রীলঙ্কা ভাল দল। এ ছাড়া জিম্বাবুইয়েও তাদের দিনে ভয়ঙ্কর হতে পারে। বাংলাদেশে খেলা, আমাদের হোমগ্রাউন্ড। সুতরাং আমাদেরই ফেবারিট হওয়া উচিত। আমার কাছে মনে হয়, গত দুই তিন বছরে আমরা যে রকম সিরিজ খেলে এসেছি, বিশেষ করে দেশের মাটিতে; আমাদের আসলে ফেবারিট হওয়া উচিত।’ ত্রিদেশীয় সিরিজটি শুরু হবে ১৫ জানুয়ারি। জানুয়ারির ১৫ তারিখ বাংলাদেশ-জিম্বাবুইয়ের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে তিন জাতি ওয়ানডে সিরিজটি শুরু হবে। এরপর এক এক করে ১৭ জানুয়ারি শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুইয়ে, ১৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা, ২১ জানুয়ারি শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুইয়ে, ২৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ-জিম্বাবুইয়ে ও ২৫ জানুয়ারি শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুইয়ের মধ্যকার ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। যে দুই দল পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে থাকবে ২৭ জানুয়ারি সেই দুই দল ফাইনালে লড়াই করবে। তিন জাতি সিরিজের সবকটি ম্যাচ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। দিবারাত্রিতে হবে ম্যাচ। গত বছর দেশের মাটিতে বাংলাদেশ কোন ওয়ানডে ম্যাচ খেলেনি। ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে ১৫ মাস পর দেশের মাটিতে ওয়ানডে খেলবে বাংলাদেশ। এ বছরটি শুরুই হচ্ছে দেশের মাটিতে খেলা দিয়ে। দেশের মাটিতেই বছরের শুরুতে ওয়ানডে খেলবে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের অক্টোবরের পর আবার দেশের মাটিতে ওয়ানডে খেলবে বাংলাদেশ। অবশ্য সিরিজটি হচ্ছে ত্রিদেশীয়। বাংলাদেশ ত্রিদেশীয় সিরিজই খেলেছে কম। ১০টি তিন জাতি সিরিজ খেলে। কোন কোন টুর্নামেন্টেও তিন দেশকে নিয়ে খেলা হয়। ১৯৯০ সালে ভারতে যেমন ভারত, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে এশিয়া কাপে বাংলাদেশও ছিল। সেটিই বাংলাদেশের প্রথম ত্রিদেশীয় সিরিজ। পাকিস্তান না খেলাতেই চার দেশের এশিয়া কাপ হয়নি। তিন জাতির এশিয়া কাপ হয়ে গেছে। এরপর ১৯৯৭ সালে কেনিয়ায় জিম্বাবুইয়ে ও কেনিয়ার সঙ্গে প্রেসিডেন্টস কাপ, ১৯৯৮ সালে দেশের মাটিতে ভারত, পাকিস্তানের সঙ্গে সিলভার জুবিলি ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপ, একইবছর ভারতে ভারত ও কেনিয়ার সঙ্গে কোকা-কোলা ট্রায়াঙ্গুলার সিরিজ, ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশে কেনিয়া, জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে মেরিল ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, ২০০৩ সালে বাংলাদেশে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে টিভিএস কাপ, ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের সঙ্গে নেটওয়েস্ট সিরিজ, ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে বারমুডা ও কানাডার সঙ্গে এ্যাসোসিয়েটস ট্রাই সিরিজ, ২০০৮ সালে বাংলাদেশে ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে কিটপ্লাই কাপ, ২০০৯ সালে বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে ট্রাইনেশন টুর্নামেন্ট, গত বছর আয়ারল্যান্ডে নিউজিল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ট্রাই-নেশন সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালের পর আবার দেশের মাটিতে তিনজাতি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। সেই সিরিজটিতেও ছিল শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুইয়ে প্রতিপক্ষ। এবারও এই দুই দলই বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ। ২০০৭ সালে বারমুডা ও কানাডার সঙ্গে খেলা তিন জাতি সিরিজটি ছাড়া আর কোন সিরিজেই জিততে পারেনি বাংলাদেশ। তবে ২০০৯ সালে যে দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে সর্বশেষ তিন জাতি সিরিজ খেলেছিল বাংলাদেশ। সেটিতে লঙ্কানদের বিপক্ষে ফাইনাল খেলেছিল। এবার জেতার আশা করছে বাংলাদেশ। তামিমই যেমন বলেছেন, ‘অবশ্যই (জেতার আশা করছি)। আমরা অবশ্য খুব বেশি ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলেনি। তবে একবার ফাইনাল খেলেছিলাম। এটা একটা দারুণ সুযোগ হয়ে আসছে। যে দুই প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলা হবে, তাদের আমরা ভালভাবে চিনি। ওদের শক্তি ও দুর্বলতা সম্পর্কে জানি। ওরাও আমাদের জানে অবশ্য। আমরা আরও যে কদিন অনুশীলনের সুযোগ পাব, এই দিনগুলো আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করব এই কদিনে আমরা দারুণ একটা প্রস্তুতি নিতে পারব।’ শ্রীলঙ্কার কোচ এখন চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহে। তিনি সদ্য সাবেক হওয়া বাংলাদেশ কোচ। বাংলাদেশে কাজ করা সফল কোচদের মধ্যে অন্যতম। জিম্বাবুইয়ের কোচ এখন হিথ স্ট্রিক। তিনি ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের বোলিং কোচ ছিলেন। তিনিও সফল কোচ। এ দুই কোচই বাংলাদেশের সাবেক কোচ। তারাই এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজ নিজ দলকে তত্ত্বাবধান করছেন। এ নিয়ে তামিম জানান, ‘এটা নিয়ে যদি ভাবি, তাহলে এটা হয় তো একটা বড় বিষয়। তারা তিন-চার বছর বাংলাদেশে ছিল। তবে আমরা যদি না ভাবি, আমার মনে হয় না এটা কোন বড় ব্যাপার। কারণ দিন শেষে আপনি পরিকল্পনা দিতে পারেন, কিন্তু মাঠে তা প্রয়োগ না করতে পারলে তাতে কোন লাভ নেই। তা কাজে আসবে না। আমরা যদি কোচের পরিকল্পনা প্রয়োগ করতে পারি, তাহলে অবশ্যই আমরা ভাল করব।’ বাংলাদেশ ওপেনার গত বছরের স্মৃতিগুলোও তুলে ধরলেন। বললেন, ‘গত বছর আমাদের সফলতা একটু ছিল। তবে আরও ভাল করতে পারতাম। শ্রীলঙ্কায় আমরা সিরিজ ড্র করেছি। ওইটা জিততেও পারতাম। ছোট ছোট ভুল ছিল, ভাল কিছু ফলাফল ছিল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডকে হারানো, ত্রিদেশীয় সিরিজেও (আয়ারল্যান্ডে) নিউজিল্যান্ডকে হারানো। শ্রীলঙ্কা সফরটা সব মিলিয়ে ভাল ছিল। ইতিবাচক ছিল।’ সঙ্গে নতুন বছরে আরও ভাল খেলার প্রত্যাশার কথাই জানালেন, ‘নতুন বছরে আমরা গত বছরের চেয়ে ভাল ক্রিকেট খেলার আশা ও প্রত্যাশা থাকবে।’ ব্যক্তিগত লক্ষ্যের কথা জানাতে গিয়ে তামিম বলেন, ‘২০১৭ সালটা আমার জন্য ভাল ছিল। বিশেষ করে ওয়ানডেতে। চেষ্টা থাকবে এটাকে আরও দীর্ঘ করার। সামনের সিরিজগুলোতেও একই মানসকিতা ও আত্মনিবেদন নিয়ে চেষ্টা করব আরও ভাল করতে।’ হাতুরাসিংহে বলেছে সেরাটা দিয়ে বাংলাদেশের দায়িত্ব শেষ করেছে। তামিম মনে করছেন, দায়িত্ব এখনও শেষ করেননি। তামিম জানান, ‘দায়িত্ব শেষ করেছে, এটা বলতে পারি না। তবে চার বছর তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে ছিলেন। অবশ্যই তিনি আমাদের জন্য ভাল কিছু করেছেন। এই কৃতিত্ব তাকে দিতেই হবে। ব্যক্তিগত পর্যায়েও তিনি ভাল কিছু করেছেন। তিনি এখন শ্রীলঙ্কার কোচ। তার জন্য শুভ কামনা।’ নতুন বছরে ফ্যানদের কাছ থেকে দোয়া চান তামিম, ‘ফ্যানদের জন্য বলব, আমার জন্য দোয়া করবেন যাতে আমি নতুন বছরে আরও সফল হই এবং বাংলাদেশকে যাতে আরও ম্যাচ জেতাতে পারি।’ এ বছর ম্যাচ জেতানোর পালা ১৫ জানুয়ারি থেকেই শুরু হয়ে যাবে। এদিন ত্রিদেশীয় সিরিজ শুরু হবে। যে সিরিজে নিজেদেরই ফেবারিট মানছেন বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবাল।
×