ইরানের সরকারবিরোধী বিক্ষোভ আরও কয়েকটি শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। শনিবার রাজধানী তেহরানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়, এ সময় বিক্ষুব্ধরা কয়েকটি সরকারী ভবনে হামলা চালায়। এই প্রেক্ষাপটে সরকারবিরোধী আন্দোলন চলতে থাকলে বিক্ষোভকারীদের শক্ত হাতে দমন করা হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির বিপ্লবী বাহিনী। বিবিসি, গার্ডিয়ান ও ওয়াশিংটন পোস্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রা¤প ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন যে, কিভাবে ইরান সরকার এই বিক্ষোভের মোকাবেলা করছে তার ওপর সারা দুনিয়া নজর রাখছে। তবে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই মন্তব্যকে অপ্রাসঙ্গিক এবং সুযোগ সন্ধানী বলে নাকচ করে দেন। অবশ্য এই বিক্ষোভের পেছনে যে ইরানের ব্যাপক সামাজিক অসন্তোষও একটা কারণ হতে পারে, পরোক্ষভাবে তার কিছুটা স্বীকার করছেন সরকারের কেউ কেউ। প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির একজন উপদেষ্টা হিশামুদ্দিন আশেনা টুইটারে পোস্টে লিখেছেন, ইরানের সামনে বেকারত্ব, জিনিসপত্রের উচ্চমূল্য, দুর্নীতি, বৈষম্য এরকম অনেক গুরুতর চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও কথিত দুর্নীতির অভিযোগে সৃষ্ট অসন্তোষ থেকে দেশটির দ্বিতীয় জনবহুল শহর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় মাশহাদে বৃহ¯পতিবার বিক্ষোভ শুরু করেছিল বিক্ষুব্ধরা। পরে তা সরকারবিরোধী বিক্ষোভে রূপ নিয়ে ক্রমেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ বিতর্কিতভাবে দ্বিতীয়বারের মতো ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটে। তবে ২০০৯ সালের তুলনায় এবারের সরকারবিরোধী বিক্ষোভকেই জন অসন্তোষের সবচেয়ে গুরুতর ও ব্যাপক প্রকাশ হিসেবে দেখছেন পর্যবেক্ষকরা। ২০০৯ সালে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ওই অস্থিরতা কঠোর হাতে দমন করেছিল দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। শনিবার ইরানজুড়ে ওই অস্থিরতা দমনের বার্ষিকীও সরকারিভাবে পালন করা হয়। এতে দেশটির বিভিন্ন শহরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত মিছিলও দেখা যায়। ইরানের ১ হাজার ২শ’ শহরে সরকারপন্থি মিছিল হয়েছে বলে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। একই সময় সরকারবিরোধী বিক্ষোভও রাজধানী তেহরানে আরও বিস্তুত হয়েছে, পাশাপাশি বেশ কয়েকটি শহরে নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছে। তেহরানে প্রথমবারের মতো পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভকারীরা। শহরের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে অবস্থান নিয়ে তারা পুলিশের দিকে পাথর ছুড়ে মারে, এর অদূরেই সরকারপন্থি মিছিলকারীরা অবস্থান করছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা কয়েকটি ভিডিওতে পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর দোরুদে সারা শরীরে রক্ত মাখা দুই তরুণকে নিশ্চিলভাবে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। নেপথ্য বর্ণনায় ওই দুই তরুণ বিক্ষোভকারী লক্ষ্য করে দাঙ্গা পুলিশের ছোড়াগুলিতে তারা নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। ভিডিওটিতে অন্যান্য বিক্ষোভকারীদের যারা আমার ভাইকে খুন করেছে, আমি তাদের হত্যা করবো! সেøাগান দিতে দেখা গেছে। তবে এই ভিডিওগুলোর সত্যতা তাৎক্ষণিকভাবে নির্ধারণ করা যায়নি বলে জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। এর আগের ভিডিওগুলোতে দোরুদের মিছিলকারীদের একনায়কের মৃত্যু হোক স্লোগান দিতে দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাশহাদ থেকে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীরা দাঙ্গা পুলিশের একটি গাড়ি উল্টে ফেলছে ও পুলিশের একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। দেশটির আধা-সরকারী বার্তা সংস্থা ফারস জানিয়েছে, তেহরানের মূল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে ৭০ জনেরও বেশি ছাত্র পুলিশের দিকে পাথর ছুড়ে মেরেছে ও একনায়কের মৃত্যু হোক শ্লোগান দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা ফুটেজে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে মিছিল করতে থাকা অন্যান্য বিক্ষোভকারীকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠি পেটা করছে দাঙ্গা পুলিশ এবং কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। শিক্ষার্থীদের বার্তাসংস্থা আইএসএনএ জানিয়েছে, আরও প্রতিবাদকারীর আগমন বন্ধ করতে পুলিশ দুটি মেট্রো স্টেশন বন্ধ করে দিয়েছে। তেহরানে ও এর পশ্চিমের কারাজে বিক্ষোভকারীরা সরকারী ভবনগুলোর জানালা ভাংচুর করেছে ও রাস্তায় রাস্তায় আগুন জ্বালিয়েছে। অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: