ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘নিখোঁজের’ পর আটক বিএনপি নেতা সাদাত ৩ দিনের রিমান্ডে

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১ জানুয়ারি ২০১৮

‘নিখোঁজের’ পর আটক বিএনপি নেতা সাদাত ৩ দিনের রিমান্ডে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ১২৮ দিন আগে ‘নিখোঁজ’ ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা সৈয়দ সাদাত আহমেদের ৩ দিনের রিমান্ড- নিয়েছে ডিবি পুলিশ। রবিবার তাকে আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড- আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই সাইফুল ইসলাম। এ সময় ঢাকা মহানগর হাকিম প্রণব কুমার হুই জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে ৩ দিনের রিমান্ড- আবেদন মঞ্জুর করেন। এবিএন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদাত আহমেদ চট্রগ্রাম দক্ষিণ বিএনপির সহ-সভাপতি। বিএনপির বিগত কমিটিতে নির্বাহী সদস্য ছিলেন তিনি। ডিবি দক্ষিণের সহকারী কমিশনার (এসি) শামসুল আরেফিন জানান, ২০১৫ সালের রমনা থানায় নাশকতার (জ্বালাও-পোড়াও) একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তার নামে অপহরণের মামলা রয়েছে থানায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসি জানান, তিনি নিজেই পলাতক ছিলেন কিনা বিষয়টি জানার চেষ্টা চলছে। নিখোঁজ স্বজনরা জানিয়েছেন, গত ২২ আগস্ট বিকেলে বনানী ওভারপাসের নিচে নিজ গাড়ি থেকে নামিয়ে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়া হয় সাদাতকে। গাড়িতে থাকা সাদাতের ছেলেকে অপহরণকারীরা জানায়, সাদাত ১৫ মিনিট পর ফিরে আসবেন। পরে তাকে না পেয়ে থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন তার স্ত্রী। তার ১২৮ দিন পর শনিবার রাত ১০টার দিকে রামপুরা ব্রিজ এলাকা থেকে নিখোঁজ ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা সৈয়দ সাদাত আহমেদকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। রবিবার সাদাতকে আদালতে হাজির করে ২০১৫ সালের একটি নাশকতার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে দশ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম খান। যে মামলায় গ্রেফতার ॥ ওই মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের ৯ জানুয়ারি মগবাজার আউটার সার্কুলার রোডে সেলিব্রেশন কমিউনিটি সেন্টারের সামনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের অবরোধ কর্মসূচীর সময় একটি প্রাইভেট কারে আগুন দেয়া হলে চালক গুরুতর দগ্ধ হন। ১৫ জানুয়ারি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই চালকের মৃত্যু হয়। পুলিশের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়- দীর্ঘ চেষ্টার পর তদন্তে এই আসামির নাম প্রকাশ পায়। আসামি পলাতক ছিলেন। মোবাইল ট্র্যাকিং করে তাকে শনিবার গ্রেফতার করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সাইফুল ইসলাম আদালতকে জানান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির এই নেতার বিরুদ্ধে নাশকতায় অর্থায়নের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তার কাছ থেকে অনেক ব্যাংক চেক ও তিনটি আইফোন উদ্ধার করা হয়েছে। ওই নাশকতার ঘটনায় তিনি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অন্যদের নামও পাওয়া যাবে। অন্যদিকে রিমান্ডের বিরোধিতা করে সাদাতের আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান জানান, এটি পুলিশের থার্টি ফার্স্ট নাইটের একটি উপহার। সাড়ে চার মাস আগে বাচ্চাকে স্কুল থেকে নিয়ে আসার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে তুলে নিয়ে যায়। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল সাড়ে চার মাস আগে। ক্যান্টনমেন্ট থানায় অপহরণের বিষয়ে একটি মামলা করা আছে। যেটা পুলিশ অস্বীকার করে না। কাঠগড়ায় দাঁড়ানো সাদাত এ সময় কোন কথা বলেননি। রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউশন পুলিশের জেষ্ঠ্য সহকারী কমিশনার মিরাশ উদ্দিনও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান, বিএনপি নেতা সাদাত নেতা নিখোঁজ হওয়ার পাঁচ দিন পর কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এ এম এম আমিনুর রহমানও নিখোঁজ হয়েছিলেন। গত সপ্তাহে তাকে উদ্ধারের কথা জানানোর পর তাকেও নাশকতার মামলায় গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। সাদাতকে ‘তুলে নেয়ার পর’ তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল সৈয়দ শাহাবুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছিলেন, ২২ আগস্ট বিকেলে ছেলে মেহেদী জামান ও বাসার কেয়ারটেকারকে গাড়িতে নিয়ে বেরিয়েছিলেন সাদাত আহমেদ। বনানী ফ্লাইওভারের নিচে একটি মাইক্রোবাস তাদের পথরোধ করে। মাইক্রোবাস থেকে কয়েকজন এসে সাদাতকে জোর করে নামিয়ে তাদের গাড়িতে তুলে নেয়। এরপর ওই মাইক্রোবাসের একজন এসে সাদাতের গাড়ির চালকের আসনে বসেন। দুটি গাড়িই কুড়িল বিশ্বরোডের তিন শ’ ফুট রাস্তা দিয়ে পূর্বাচলে গিয়ে থামে। সাদাতের গাড়িতে ওই সময়ও তার ছেলে মেহেদী ও কেয়ারটেকার ছিল। পূর্বাচলে সাদাতের গাড়ি থেকে ওই ব্যক্তি নেমে যায়। সাদাত ১৫ মিনিট পর ফিরে আসবেন বলে তার ছেলেকে বলে যান ওই ব্যক্তি। অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল সৈয়দ শাহাবুদ্দিন জানান, নাতি বলেছিল, পরে ওই মাইক্রোবাস নারায়ণগঞ্জের দিকে চলে যায়। সূত্রগুলো জানায়, ধানমণ্ডি ২৭ নম্বরে ২৭৫/জি নম্বর ভবন কনকর্ড রয়েল কোর্টের চতুর্থ তলায় সাদাতের এবিএন গ্রুপের কর্পোরেট কার্যালয়। এই গ্রুপের অধীনে এশিয়ান বিজনেস নেটওয়ার্ক, এবিএন এভিয়েশন, এবিএন ট্রাভেলস, এবিএন কার্গো, এবিএন প্রোপার্টিজ লিমিটেড, এশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও কফি চেইন সুগার এন স্পাইস পরিচালিত হয়।
×