ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নর্দার্ণ জুট ছাড়ছে আইডিবি

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১ জানুয়ারি ২০১৮

নর্দার্ণ জুট ছাড়ছে আইডিবি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নর্দার্ণ জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেডের পর্ষদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোক্তা-পরিচালক ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি)। সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) পাঠানো এক চিঠিতে নর্দার্ণ জুটের পর্ষদ থেকে ঐচ্ছিকভাবে পদত্যাগের কথা জানায় প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বড় শেয়ার ধারণ করা বিদেশী উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানটি। বৃহস্পতিবার ডিএসই জানিয়েছে, নর্দার্ণ জুটের ৩০ শতাংশ শেয়ারধারী উদ্যোক্তা-পরিচালক আইডিবি নিজ উদ্যোগে পর্ষদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইডিবিসহ পরিচালকদের হাতে বর্তমানে ৪৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশের মধ্যে ৩০ শতাংশ বাদ গেলে পর্ষদের হাতে থাকবে ১৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। এতে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে কোম্পানির ন্যূনতম শেয়ারধারণ সংক্রান্ত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটবে। ফলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে নর্দার্ণ জুটের পর্ষদ সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জানতে চাইলে নর্দার্ণ জুটের কোম্পানি সচিব শাহাদাত হোসাইন বলেন, আইডিবি আমাদের কিছু না জানিয়ে সরাসরি ডিএসইকে চিঠি পাঠিয়ে পর্ষদ ছাড়ার কথা জানিয়েছে। আইডিবি পর্ষদ ছেড়ে দিলে তাদের হাতে থাকা ৩০ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা-পরিচালকের বদলে বিদেশী বিনিয়োগকারীর শেয়ার হিসেবে বিবেচিত হবে বলেও জানান তিনি। এর আগে নর্দার্ণ জুটের শেয়ার বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছিল আইডিবি। ঘোষণা ছাড়া উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির সুযোগ না থাকায় সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে যায় প্রতিষ্ঠানটি। তবে এবার পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করে শেয়ার বিক্রির শর্তপূরণের বাধ্যবাধকতা থেকে সরে আসছে আইডিবি। জানা গেছে, আইডিবির পর্ষদ ছাড়ার ঘোষণায় বিপাকে পড়েছে নর্দার্ণ জুটের স্থানীয় উদ্যোক্তারা। এ ঘোষণায় উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে শর্তানুযায়ী ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার থাকছে না। ব্লক মার্কেটে লেনদেন হওয়া এসব শেয়ার অন্য প্রতিষ্ঠান কিনে নিলে কোম্পানিতে কর্তৃত্ব কমবে বর্তমান পর্ষদের। ফলে বর্তমান পর্ষদই এসব শেয়ার কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে চট্টগ্রামভিত্তিক একটি শিল্প গ্রুপ আইডিবির শেয়ার কিনে নিয়ে পর্ষদে কর্তৃত্ব নেয়ার গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে। ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৭ হিসাব বছরের জন্য ২০ শতাংশ নগদ ও ২০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে নর্দার্ণ জুট। সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৫ টাকা ১৩ পয়সা। আগের হিসাব বছরে তা ছিল ৭২ পয়সা। এদিকে চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৪ টাকা ৪ পয়সা লোকসান দেখিয়েছে কোম্পানিটি, যেখানে আগের বছর একই সময়ে লোকসান ছিল ৩ টাকা ২ পয়সা। ৩০ সেপ্টেম্বর এর এনএভিপিএস দাঁড়ায় ৮৬ টাকা ৯৯ পয়সায়। দেশী-বিদেশী উদ্যোগে ১৯৮৪ সালে যাত্রা করে নর্দার্ণ জুট। ব্যবসায় অংশীদার হিসেবে শুরু থেকেই তাদের সঙ্গে ছিল উন্নয়ন সহযোগী আইডিবি। কোম্পানিটি পাটের সুতা প্রস্তুত ও রফতানি করে থাকে। শুরু থেকেই একটি ইউনিটে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করে এলেও ২০১৬ সালের জুলাই থেকে দ্বিতীয় ইউনিটে পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায় কোম্পানিটি। ১৯৯৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নর্দার্ণ জুটের অনুমোদিত মূলধন ১০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ২ কোটি ১৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। রিজার্ভ ১৪ কোটি ১১ লাখ টাকা। ৩০ নবেম্বর পর্যন্ত কোম্পানির মোট শেয়ারের ৪৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ এর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে ও বাকি ৫৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। ডিএসইতে সর্বশেষ ৫৫৪ টাকা ৭০ পয়সায় নর্দার্ণ জুটের শেয়ার লেনদেন হয়। গত এক বছরে এ শেয়ারের সর্বোচ্চ দর ছিল ৭১৮ টাকা ৮০ পয়সা ও সর্বনিম্ন ২১৫ টাকা ৩০ পয়সা। সর্বশেষ নিরীক্ষিত মুনাফা ও বাজারদরের ভিত্তিতে এ শেয়ারের মূল্য-আয় (পিই) অনুপাত ১২৯ দশমিক ৬৫।
×