ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন বছরে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১ জানুয়ারি ২০১৮

নতুন বছরে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ আজ সোমবার থেকে শুরু হলো খ্রিস্টীয় নববর্ষ ২০১৮। ইংরেজি নতুন বছর ২০১৮ উপলক্ষে দেশবাসীসহ সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, নতুন বছরে অমিত সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ। রাষ্ট্রপতি কামনা করেন খ্রিস্টীয় নববর্ষ ২০১৮ সবার জীবনে অনাবিল আনন্দ ও কল্যাণ বয়ে আনুক। অন্যদিকে, নতুন বছরে দেশবাসী এবং প্রবাসী বাঙালীসহ বিশ্ববাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, উন্নত, সমৃদ্ধ ও শান্তিÍপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। খবর বাসস’র। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ আশা প্রকাশ করে বলেছেন, বিগত বছরের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা পেছনে ফেলে নতুন বছরে অমিত সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ। তিনি বলেন, নববর্ষ সকলের মাঝে জাগায় প্রাণের নতুন স্পন্দন, নতুন আশা, নতুন সম্ভাবনা। তিনি বলেন, ‘সময় থেমে থাকে না। এগিয়ে চলাই সময়ের ধর্ম। অতীতকে পেছনে ফেলে সময়ের চিরায়ত আবর্তনে খ্রিস্টীয় নববর্ষ আমাদের মাঝে সমাগত। নতুনকে বরণ করা মানুষের স্বভাবগত প্রবৃত্তি। তাইতো নববর্ষকে বরণ করতে বিশ্বব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজন। আমরাও পিছিয়ে নেই। ইংরেজি নববর্ষকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত আমাদের তরুণ সমাজসহ গোটাদেশ।’ তিনি বলেন, বাংলা নববর্ষ জাতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকলেও ব্যবহারিক জীবনে ইংরেজি বর্ষপঞ্জিকা বহুল ব্যবহৃত। তাই জাতীয় জীবনে ইংরেজি বর্ষপঞ্জি প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে আছে। প্রধানমন্ত্রীর বাণী ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইংরেজি নতুন বছর ২০১৮ উপলক্ষে দেশবাসী, প্রবাসী বাঙালীসহ বিশ্ববাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, উন্নত, সমৃদ্ধ ও শান্তিÍপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নতুনের আহ্বানে পুরাতন সব জঞ্জাল ধুয়ে-মুছে নতুন সূর্যের আলোয় আলোকিত হোক আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। নতুন বছর আামাদের সবার জীবনে অনাবিল সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তি বয়ে আনুক। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে এই প্রার্থনা করি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আসুন, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, উন্নত, সমৃদ্ধ ও শান্তিÍপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তুলি। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করি। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে মধ্যমআয়ের এবং ২০৪১ সালের আগে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করব ইনশাল্লাহ।” দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন, সংবিধান ও গণতান্ত্রিক ধারা রক্ষা এবং সমগ্র জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে ২০১৭ সালকে আমাদের জন্য একটি গৌরবোজ্জ্বল বছর অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বাণীতে বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বছরটি ছিল বাংলাদেশের জন্য সাফল্যময় বছর। তিনি বলেন, গত বছর দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাঠামো, বিদ্যুতসহ প্রতিটি সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যমআয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ৫টি দেশের একটি আজ বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। দারিদ্র্যের হার ২২ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। মানুষের আয় ও ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। আমাদের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৬১০ মার্কিন ডলার। রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ৫ কোটি মানুষ নিম্ন-আয়ের স্তর থেকে মধ্যমআয়ের স্তরে উন্নীত হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।’ তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে বই পাচ্ছে। সাক্ষরতার হার ৭২ শতাংশের বেশি হয়েছে। দেশের ৮৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুত সুবিধা পাচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোড়গোড়ায়। সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। দরিদ্র মানুষ বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ঔষধ পাচ্ছে। গড় আয়ু বেড়ে ৭১ বছর ৮ মাস হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বাণীতে আরও বলেন, সারাদেশে সড়ক, মহাসড়ক, সেতু, ফ্লাইওভার, পাতাল সড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রেল, নৌ ও যোগাযোগ অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলছে। তিনি বলেন, আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করছি। চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। নতুন সমুদ্রবন্দর পায়রার কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করেছি। জাতীয় চারনেতার হত্যাকান্ডের বিচার সম্পন্ন করা হয়েছে। ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার বিচার কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে। শেখ হাসিনা বলেন, জনগণকে দেয়া ওয়াদা অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য পরিচালনা করা হচ্ছে। বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। অসাংবিধানিক ক্ষমতা দখলের সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূলে তার সরকার জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৭ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ অর্জন বাঙালী জাতি হিসেবে অত্যন্ত গৌরবের জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানা সমস্যার শান্তিÍপূর্ণ সমাধান করেছি। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমারও শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে এবং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।’ নববর্ষের শুভেচ্ছা খালেদা জিয়ার ॥ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে নতুন বছরে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে রবিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে তিনি এ আহ্বান জানান। এছাড়া তিনি নববর্ষ উপলক্ষে দেশবাসী ও বিশ্ববাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান এবং সবার সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। খালেদা জিয়া বলেন, অজ রক্তঋণে অর্জিত গণতন্ত্র অপহৃত হয়েছে। হৃত গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য দেশের সংগ্রামী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। গত এক বছরে বেশকিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা, স্বজন হারানোর বেদনা এবং অধিকার হারানোর যন্ত্রণা রয়েছে। যা আগামী বছরে আমাদের নুতন উদ্যোমে অধিকার ফিরে পেতে তাগিদ সৃষ্টি করবে। খালেদা বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বময় সংঘাত আর অশান্তির ঘটনা প্রবাহে নতুন বছরটিকে গণতন্ত্র, শান্তি ও অগ্রগতির বছরে পরিণত করতে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, দেশের গণতন্ত্র অপহৃত হয়েছে। গণবিরোধী শক্তি জনগণের সব অধিকারকে বন্দী করেছে। এমতাবস্থায় সব গণতান্ত্রিক শক্তির মিলিত সংগ্রামে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, নতুন বছরটি সবার জীবনে বয়ে আনুক বিজয়, অনাবিল সুখ ও শান্তি। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে প্রবাহিত হোক শান্তির অমিয় ধারা, দূর হয়ে যাক সব অন্যায়, অবিচার ও নির্যাতন। বন্ধ হোক হত্যা, গুম, খুন, যুদ্ধ বিগ্রহ ও অমানবিকতা। তিনি বলেন, ১ জানুয়ারি প্রতিবছর নতুন বার্তা নিয়ে আমাদের দ্বারে উপস্থিত হয়। পুরনো বছরের ব্যর্থতা, গ্লানি, হতাশাকে ঝেড়ে ফেলে নবউদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায় নববর্ষ। পাশাপাশি অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সুন্দর ভবিষ্যত বিনির্মাণে তৎপর হতে পারলে নতুন বছরটি হয়ে উঠতে পারে সাফল্যময়। অপর এক বাণীতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কালের আবর্তে আরও একটি বছর চলে গেল। নানা ঘটনা দুর্ঘটনার কালের সাক্ষী হয়ে বছরটি বিদায় নিল। গত বছরের সব ব্যর্থতা ও হতাশার গ্লানি ঝেড়ে ফেলে এবং সাফল্যকে সঞ্চয় করে আগামী পথ চলার দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করতে হবে। আমাদের কাজে ইংরেজি নতুন বছরটি যাতে সাফল্য ও সমৃদ্ধির বছরে পরিণত হয় সেজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
×