ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নেপিডোয় যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে সই হবে

রোহিঙ্গা ফেরাতে ফিজিক্যাল এ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ১ জানুয়ারি ২০১৮

রোহিঙ্গা ফেরাতে ফিজিক্যাল এ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে ফিজিক্যাল এ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তির (মাঠ পর্যায়ে বাস্তব ব্যবস্থা ) খসড়া চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই এই চুক্তির খসড়া মিয়ানমারের নিকট পাঠানো হবে। নেপিডোয় অনুষ্ঠিতব্য যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠকে এই চুক্তি সই হবে। এই চুক্তির মধ্য দিয়েই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রথম দফায় ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে এক লাখ রোহিঙ্গার তালিকা তৈরির কাজ চলছে। সূত্র জানায়, আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক নেপিডোয় অনুষ্ঠিত হবে। সেই বৈঠকে ফিজিক্যাল এ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তি সইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। এই চুক্তির একটি খসড়া ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত করা হয়েছে। খসড়াটি চলতি সপ্তাহের মধ্যে মিয়ানমারের নিকট পাঠানো হবে। আর নেপিডোয় যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠকে এই চুক্তি সই হবে বলে আশা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে গত ১৯ ডিসেম্বর যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপে দুই দেশের প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে সব ধরনের উদ্যোগ নেবে। গত ২৩ নবেম্বর নেপিডোয় উভয় দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আলোকে এই ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়। এখন উভয় দেশ ফিজিক্যাল এ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তি সইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। উভয় পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যেই ফিজক্যাল এ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তি সই করবে। এদিকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের একটি ডাটাবেজ ইতোমধ্যেই তৈরি করেছে সরকার। রবিবার পর্যন্ত এই ডাটাবেজে ৯ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নাগরিকের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে এখন ডাটাবেজ থেকেই একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। আর এই তালিকা থেকেই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো শুরু হবে। প্রথম দফায় এক লাখ রোহিঙ্গার একটি তালিকা তৈরি করবে সরকার। দ্বিতীয় ধাপে আরও এক লাখ রোহিঙ্গার তালিকা তৈরি করা হবে। এভাবে ধাপে ধাপে রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরি করে ফেরত পাঠানো হবে। তবে প্রথম দফার তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করছে বাংলাদেশ। এই তালিকায় থাকা রোহিঙ্গাদের রাখাইনের আবাসস্থলের ঠিকানা যাতে নির্ভুল হয়, সেজন্যই এই সতর্কতা। কেননা রোহিঙ্গাদের বসত-বাড়ির ঠিকানা না দিতে পারলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদের গ্রহণ নাও করতে পারে। আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত হবে। যদিও রোহিঙ্গাদের ফেরানোর কার্যক্রম ২৩ জানুয়ারির মধ্যে হওয়ার কথা ছিল, সেটি দেরি হতে পারে। চলতি মাসের শেষ অথবা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে রোহিঙ্গা ফেরত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছে, তার জন্য পৃথকভাবে একটি দলিলে সই করেছে উভয় পক্ষ। এখন মাঠ পর্যায়ে যাবতীয় বিষয়াদি তদারকি ও ব্যবস্থা নেয়ার লক্ষ্যে উভয় পক্ষ একটি ফিজিক্যাল এ্যারেঞ্জমেন্টে চুক্তি সই করবে। এরপরেই রোহিঙ্গাদের ফেরত প্রক্রিয়া শুরু হবে। সূত্র জানায়, যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ রোহিঙ্গাদের যাচাইবাছাই, সময় নির্ধারণ, পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নেয়া, যোগাযোগ করা ইত্যাদি বিষয়ে কাজ করবে। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে বাস্তব অবস্থা যাচাই করে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে ফিজিক্যাল এ্যারেঞ্জমেন্ট করবে। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের আওতায় এই ফিজিক্যাল এ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তি সই হবে। ফিজিক্যাল এ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তি সই করতে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে ঢাকায় এক বৈঠকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়। এই যৌথ গ্রুপ রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন শুরু করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ নেবে। দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে ১৫ জন করে সদস্য নিয়ে মোট ৩০ সদস্যের এই গ্রুপ গঠন করা হয়। রাখাইনে নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত সাড়ে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারে নিপীড়নের মুখে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা। সেনাবাহিনী অভিযান এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে শরণার্থীদের ফেরত নিতে সম্মত হয় মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের ঘরে ফেরার পথ তৈরি করতে গত ২৩ নবেম্বর নেপিডোয় দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। উল্লেখ্য, গত বছরের ৯ অক্টোবর সেনা অভিযানের মুখে ৮৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আর চলতি বছর ২৫ আগস্টের পর নতুন করে বাংলাদেশে আসে সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এর আগে বিভিন্ন সময়ে জাতিগত দমন-পীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে শরণার্থী জীবন কাটাচ্ছে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম। বাংলাদেশের আহ্বানে ১৯৯২ সালে দ্বিপক্ষীয় একটি চুক্তির আওতায় মিয়ানমার কিছু রোহিঙ্গাকে ফেরত নিলেও পরে আর সেই প্রক্রিয়া এগোয়নি।
×