ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বছর মুক্তিযুদ্ধের শক্তির নতুন দায়িত্ব

স্বাগত ২০১৮ ॥ এগিয়ে যাবে দেশ

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১ জানুয়ারি ২০১৮

স্বাগত ২০১৮ ॥ এগিয়ে যাবে দেশ

উত্তম চক্রবর্তী ॥ অনাদিকাল থেকে সৌরজগতের নিখুঁত নিয়মে প্রতিদিন সূর্যোদয় হয়। প্রতিদিনের মতো আজও সূর্য উঠেছে। শীতের কুয়াশা সরিয়ে উঁকি দিয়েছে উজ্জ্বল রোদ। কিন্তু অন্য যে কোন দিনের চাইতে আজকের ভোরের আলোতে যেন বেশি মায়া মাখানো। যেন নতুন স্বপ্নের কথা বলছে। বলছে, সামনের দিনগুলোতে অনিশ্চয়তা কেটে গিয়ে শুভময়তা ছড়িয়ে যাবে দেশে, পৃথিবীময়। আশাজাগানিয়া সূর্যকিরণ যেন সে দ্যুতিই ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রত্যেকের প্রাণে, মনে। তমসা কেটে পূর্ব দিগন্তে আবহমান সূর্য আবার শুরু করল নতুন যাত্রা। ‘সময় আর স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না’- এই সত্যকে বির্মূত করে নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয়। স্বপ্ন আর দিন বদলের অপরিমেয় প্রত্যাশার আলোয় উদ্ভাসিত শুভ নববর্ষ। মহাকালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেল আরেকটি বছর ২০১৭। শুরু হলো ২০১৮ খ্রীস্টাব্দ। সুপ্রভাত বাংলাদেশ; স্বাগত ২০১৮। হ্যাপি নিউইয়ার ২০১৮। অভিবাদন নতুন সৌরবর্ষকে। সেই একই সূর্য, একইভাবে উঠছে পূর্বাকাশ আলো করে। তবু তার উদয় ভিন্নতর। আজকের দিনটিও আলাদা, কারণ একটি নতুন বর্ষপরিক্রমা শুরু হলো আজ সোমবার থেকে। সোনালি স্বপ্নের হাতছানি নিয়ে উদিত হলো নতুন বছরের নতুন সূর্য। ভরা পৌষে কুয়াশার হিমেল চাদর ছিন্ন করে উদ্ভাসিত হলো সোনালি আলোর সকাল। কালপরিক্রমায় দ্বারোদঘাটন হলো প্রকৃতির নতুন নিয়মে নতুন বছর ২০১৮ সাল। চেতনায় জাগ্রত আবহমান সেই মাঙ্গলিক বোধ- অতীতের জীর্ণতা অতিক্রান্ত দিনমাসপঞ্জির হিসাব থাক বিস্তৃতির কালগর্ভে, প্রত্যাশায় বুক বাঁধি নতুন দিনের সূর্যোলোকে- তবে উদ্ভাসন হোক সজীব-সবুজ নতুনতর সেই দিনের- যা মুছে দেবে অপ্রাপ্তির বেদনা; জাগাবে নতুন প্রত্যয়ে নতুন সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকা অনুযায়ী ইংরেজী নববর্ষের প্রথম দিন আজ। আজ ২০১৮ সালের প্রথম দিন। আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে/ তবু শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের এ কথার মতোই দুঃখ, কষ্ট সবকিছু কাটিয়ে নতুন জীবনের দিকে যাত্রার প্রেরণা নেবে মানুষ। নতুন বছরটি যেন প্রতি মানুষের মন থেকে সব গ্লানি, অনিশ্চয়তা, হিংসা, লোভ ও পাপ দূর করে। রাজনৈতিক হানাহানি কিংবা জঙ্গী-সন্ত্রাসমুক্ত হয়ে যেন আমাদের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত প্রিয় স্বদেশ সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে পারে। গত বছরের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাব খুঁজতে খুঁজতে নতুন বছরকে সামনে রেখে আবর্তিত হবে নতুন নতুন স্বপ্নের। বাংলাদেশে ইংরেজী নববর্ষ পালনের ধরন বাংলা নববর্ষ পালনের মতো ব্যাপক না হলেও এ উৎসবের আন্তর্জাতিকতার ছোঁয়া থেকে বাংলাদেশের মানুষও বিচ্ছিন্ন নয়। বিশ্বের বয়স আরও এক বছর বাড়ল। এক বছরের ‘আনন্দ-বেদনা, আশা-নৈরাশ্য আর সাফল্য-ব্যর্থতার পটভূমির ওপর আমাদের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এই প্রিয় বাংলাদেশ নতুন বছরে পর্বতদৃঢ় একতায় সর্ব বিপর্যয়-দুঃসময়কে জয় করবে অজেয়-অমিত শক্তি নিয়ে’- এ সংকল্পের সোনালি দিন আজ। আলোড়ন আর তোলপাড় করা ঘটনাবহুল ২০১৭-এর অনেক ঘটনার রেশ নিয়েই মানুষ এগিয়ে যাবে। ভাগ্যাকাশে আনন্দ-বেদনা প্রত্যাশা আর দুর্যোগের ঘনঘটা নিয়েই বাঙালীর বছর ফুরোল। সূচনা হলো আরও একটি বর্ষযাত্রা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে বহু ঘটনার সাক্ষী হয়ে মহাকালের অতল গর্ভে রবিবার সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে চলে গেছে বিগত বছর ২০১৭। আবহমান সূর্য একটি পুরনো বছরকে কালস্রোতের ঊর্মিমালায় বিলীন করে আবার শুরু করল যাত্রা। স্বপ্ন আর দিন বদলের অপরিমেয় প্রত্যাশার রক্তিম আলোয় উদ্ভাসিত ইংরেজী নতুন বছর শুরু হলো। লাখো প্রত্যাশার ঝাঁপি খুলে এবং সরকারের কাছে মানুষের অনেক প্রত্যাশায় আজ ভোরে কুয়াশায় ঢাকা পূর্বাকাশে উদয় হয়েছে নতুন বছরের লালসূর্য। জাতির অনেক আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ হওয়ার বছর এটি। শুরু হলো অগ্রগমনের বছর। আর নতুন বছরটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি নির্বাচনের বছর। নতুন এই বছরে দেশের মানুষকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাদের মহামূল্যবান আমানত ব্যালটের মাধ্যমে। বাংলাদেশে কী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় চলমান উন্নয়ন-অগ্রগতি ও উন্নয়নের মহাসড়ক দিয়েই চলবে, নাকি বাঙালীর জাতির জীবনে আবার নেমে আসবে অতীতের সেই অমানিশার অন্ধকার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, নাকি ভয়াল সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ, দুর্নীতি ও দুশাসনের অন্ধকার গহ্বরে আবারও ডুবে যাবে। এই কঠিন সিদ্ধান্ত জাতিকেই নিতে হবে। কেননা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি পুনরায় ক্ষমতায় আসতে না পারলে দেশ আবারও জঙ্গী-সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির অভয়ারণ্য পরিণত হবে, অগ্রগতির মিছিল থেকে দেশ আবারও পিছিয়ে যাবে। তাই দেশবাসীর সামনেও নতুন এই বছরটি অগ্নিপরীক্ষার। তাই নতুন বছরকে স্বাগতম সুখ-সমৃদ্ধি, উন্নয়ন-অগ্রগতি আর জঙ্গী-সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতামুক্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশায়। খ্রিস্টীয় নববর্ষের প্রথম দিন আজ। প্রাচীন সূর্য রবিবার যে দিবসকে কালস্রোতে বিলীন করে পশ্চিমে অস্ত গেল, তা আজ ফেলে আসা দিন। থার্টি ফাস্টে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ পরমানন্দে ২০১৮ সালকে বরণ করেছে। আজ নতুন দিনের নতুন সূর্যালোকে স্নান করে সিক্ত হবে জাতি-বর্ণ-নির্বিশেষে সব শ্রেণী পেশার মানুষ। বিগত বছরের সব কালিকা ধুয়ে-মুছে নতুন কেতন ওড়াতে ওড়াতে এগিয়ে যাবে সময়, সভ্যতা, হিংসা-বিদ্বেষ-হানাহানিমুক্ত রাজনীতি, অর্থনীতি আর সংস্কৃতি। অনাবিল স্বপ্ন আর অফুরন্ত প্রাণোন্মাদনা নিয়ে নতুন সূর্যের আলোয় অগ্রসর হবে মানুষ। বিগত সময়ের সব ভুল শুধরে নেয়ার সময় এসেছে আজ। স্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়ার পথে ২০১৭ সালটি নতুন করে মিথ্যার কুহেলিকা ভেদ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঠিক ধারায় এবং পুনর্জাগরণের নতুন সম্ভাবনার দ্বারোদ্ঘাটন রচনা করে দিয়ে গেছে, সমগ্র জাতিকে জঙ্গীবাদী ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে এক মহাসড়কে। সূচিত হয়েছে তার যূথবদ্ধ যাত্রা। বাংলার প্রতিটি প্রান্তরে আজ অভিন্ন আওয়াজ- ‘স্বাধীন বাংলায়, জঙ্গী-সন্ত্রাসী আর রাজাকারদের ঠাঁই নাই’। আর এ প্রচ- শপথ পূরণের প্রত্যাশা নিয়েই যাত্রা শুরু হলো নতুন একটি বছরের। গত রাত ১২টার পর পরই সারাবিশ্বে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়েছে নানা অনুষ্ঠানিকতায়। বর্ষবরণের আনন্দোৎসব করেছে সর্বস্তরের মানুষ। হিসাবের খাতায় ব্যর্থতার গ্লানি মুছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে নতুন বছরে শান্তিকামী মানুষের প্রার্থনা ছিল- আর কোন সহিংসতা নয়, কোন হত্যা-খুন কিংবা হানাহানির রাজনীতি নয়। ২০১৮ হবে শান্তির বীজ বপনের সাল। অস্ত্র বা হানাহানির মহড়া হবে না, থেমে যাবে সব যুদ্ধ-সন্ত্রাস। সবার প্রত্যাশা অনুযায়ী ক্ষমতাসীন সরকার নতুন বছরেও ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত একটি সুখী ও সমৃদ্ধিশালী উন্নত বাংলাদেশ উপহার দেবে জাতিকে। তবে বাংলাদেশের মানুষের জন্য এবার নতুন বছরটি এসেছে ভিন্ন আবহে। সর্বত্র এখন স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি, জঙ্গী ও তাদের দোসরদের পরাজয়ের ধ্বনি। বিদায়ী বছর ২০১৭-তে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির পরাজয় দিয়ে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, বছরের শেষ দিন আবারও সেই পরাজয়ই তাদের বরণ করতে হয়েছে। দেশের জনগণ পুরো বছর ধরে সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ-নাশকতানির্ভর রাজনীতির ধারক-বাহক বিএনপি-জামায়াত জোটকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ এবং উন্নয়ন-প্রগতির প্রতীক নৌকাকে মহাবিজয়ী করে পুনরায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ রায় দিয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে উপজেলা পরিষদ এবং সবশেষ জেলা পরিষদ নির্বাচনেও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জয়-জয়কার। সব স্থানীয় সরকার পরিষদের ৮৫ ভাগ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিই হচ্ছে আওয়ামী লীগের। দেশের মানুষ যে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ-নাশকতার রাজনীতি পছন্দ করে না, বরং উন্নয়ন-অগ্রগতির পক্ষেই রয়েছে- তা আবারও ব্যালটের মাধ্যমে বিদায়ী বছর জুড়েই জানান দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোটকে। এটি শুধু একটি নতুন বছরই নয়, বিদায়ী বছরের অনেক অমীমাংসিত ইস্যু নিষ্পত্তিরও বছর। অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়েই টানা দ্বিতীয় মেয়াদের ক্ষমতার পঞ্চম অর্থাৎ মেয়াদের শেষ বর্ষে পদার্পণ করেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সরকার। নতুন এ নির্বাচনী বছরে বেশকিছু জ্বলন্ত ইস্যুরও সমাধান করতে হবে ক্ষমতাসীন সরকারকে। উগ্র ধর্মভিত্তিক-সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বিশেষ করে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আবারও বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে কিনা, নতুন বছরে এ কঠিন সিদ্ধান্তটি নিষ্পত্তি করতে হবে সরকারকে। হঠাৎ করে মাথা তুলে দাঁড়ানো জঙ্গীবাদী অপশক্তির শিকড় সমূলে উৎপাটন ও এদের নেপথ্যের গডফাদারদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর বিশাল চ্যালেঞ্জও রয়েছে সরকারের সামনে। তাই বিদায়ী বছরের মতো নতুন বছরেও জঙ্গীবাদী, স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের পালিত সন্ত্রাসী-জঙ্গীদের মাথা তুলে দাঁড়াবার সম্ভাবনা কম। বিদায়ী বছরে রাজনীতির মাঠ ছিল বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেকটাই শান্ত। গত এক বছরে রাজপথে আন্দোলনের কর্মসূচী নিয়ে রাজপথে নামতেই পারেনি বিএনপি। ছিল না হরতাল কিংবা আগুনে পোড়া, বোমায় বিধ্বস্ত কোন শোকাতুর পরিবেশ। দেশবিরোধী নানা ষড়যন্ত্র শক্ত হাতে মোকাবেলা করে সৃষ্টির জাগরণে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে বর্তমান সরকার। সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বেড়াজাল ছিন্ন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের দক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনায় আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দুর্নীতি-সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের দেশের কালো তকমা মুছে ফেলে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জঙ্গীবিরোধী ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি শুধু দেশেই নয়, এখন সারাবিশ্বও প্রশংসায় পঞ্চমুখ। শুধুমাত্র মানবতার কারণে প্রায় সাত লক্ষাধিক অসহায়-বিপন্ন মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় এবং তাদের বাসস্থান ও মুখে অন্ন তুলে দিয়ে সারাবিশ্বেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘মানবতার মা’ হিসেবে আন্তর্জাতিক উপাধি পেয়েছেন। তবে বিগত বছরগুলোতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গণমানুষের যে প্রবল দাবি উচ্চারিত হয়েছে সর্বত্র, নতুন বছরে আগের মতো সেই চাপ আর সহ্য করতে হবে না সরকারকে। কারণ দেশী-বিদেশী শত ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বেড়াজাল ছিন্ন করেই অত্যন্ত সাহসের সঙ্গেই সরকার শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের একে একে বিচারের রায় মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে দেশকে কলঙ্কমুক্ত করেছে। নতুন বছরে মানুষের এখন প্রত্যাশা একাত্তরের ঘাতক দল জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে স্বাধীনতার অর্জন জনগণের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া। এছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, জঙ্গীবাদ দমন, সংঘাত-সহিংস রাজনীতির বদলে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত, বেকারত্ব দূরীকরণ, বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, স্বাধীনতাবিরোধী অন্ধকারের শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিরোধ, অর্থনীতির আরও গতিসঞ্চার, সংসদকে কার্যকর করে নতুন বছরে একটি শান্তিময় সমৃদ্ধশালী দেশ উপহার দিতে ২০১৮ সাল সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়েই সামনে এসেছে। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে পুনরায় পরাজয় করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিজয়ের কেতন ওড়াতে যথাসম্ভব সব প্রস্তুতিই নিতে হবে। নির্বাচনে বিজয়ের পথে বাধা দলের মধ্যে সৃষ্ট অনৈক, বিভেদ ও দ্বন্দ্ব দ্রুত মিটিয়ে দলের সকল সাংগঠনিক শক্তিকে ইস্পাতকঠিন ঐক্যের বাঁধনে বাঁধাও নির্বাচনে বছরে বর্তমান সরকারের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিদায়ী বছর দেশের অনেক ইতিহাসই পাল্টে দিয়েছে। ’৭৫ পরবর্তী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির এমন পুনঃজাগরণ এবং সত্যকে যে মিথ্যা দিয়ে ঢাকা যায় না- তাও প্রতিষ্ঠিত করে দিয়ে গেছে বিদায়ী এ বছরটি। আর তাই শত প্রতিকূলতা ও সহিংসতা মোকাবেলা করে দেশের মানুষ সাহসের ওপর ভর দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার মিছিলে শামিল হয়েছে, ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি-জামায়াতের গণতন্ত্রবিরোধী সহিংস রাজনীতিকে। আর এখন মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত সত্য ইতিহাস যাতে আগামী প্রজন্ম যুগ যুগ ধরে লালন-পালন করতে পারে- নতুন বছরে সেই পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি কৃষ্টি ভুলে মানুষ একটি বছর দেখেছে, শুনেছে এবং বোঝার চেষ্টা করেছে। তবে নির্বাচনী নতুন বছরে রাজনীতির মাঠ গরম করার ঘোষণা দিয়েছে অস্তিত্বের সঙ্কটের মুখে পড়া বিএনপি। রক্তচক্ষু দেখাতে চাইছে সন্ত্রাসনির্ভর দল জামায়াতও। অতীত দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও অপরাজনীতির বলয় থেকে বের না হওয়া কিংবা জাতির প্রত্যাশাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে বন্ধন অটুট রেখে বিএনপির আগামী দিনের পথ চলাতে সচেতন দেশের মানুষ কতটুকু সম্পৃক্ত হবে, এ ব্যাপারে সন্দেহ-সংশয় থাকলেও নতুন বছরে তারা যে রাজপথ উত্তপ্ত করার চেষ্টা করবে তা ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে অনেকটাই সতর্ক অবস্থানে সরকার। বিগত একটি বছর অনেকটাই সাফল্যের সঙ্গে দেশ পরিচালনায় আন্দোলনে মাঠে নামার সুযোগ পায়নি রাজনৈতিক প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তাদের দোসর জামায়াত। বিশ্বের সবচেয়ে দুর্র্নীতিগ্রস্ত দেশের কলঙ্ক মুছে বাংলাদেশ আজ পরিচিত পাচ্ছে অমিত সম্ভাবনার দেশ হিসেবে। জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী দেশ হিসেবে বিশ্বের তালিকা থেকেও বাংলাদেশের নাম মুছে ফেলে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত করতেও সক্ষম হয়েছে বর্তমান সরকার। আর জঙ্গীবাদ ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ শক্ত হাতে দমনে দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির মিছিলে শামিল করে একে একে অর্জন করছেন আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও বিরল সম্মান। বিদায়ী বছরে ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, এগিয়ে যাবেই’ স্লোগানে বিশাল বিশাল অনেক অর্জন ছিনিয়ে আনতে পারলেও শুধুমাত্র দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল-দ্বন্দ্ব আর প্রাণঘাতী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ায় অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে সরকারকে। ছাত্রলীগকে সামলাতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারের অনেক অর্জনই ম্লান করে দিয়েছে। চাল, পেঁয়াজসহ দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি, প্রশ্নপত্র ফাঁস, ব্যাংক কেলেঙ্কারি সরকারের সুবিশাল অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আর দলের অনেক বাঘা বাঘা নেতা-মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের অতিকথন, বিতর্কিত মন্তব্যও সরকারকে বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। তাই নতুন বছরে সরকারের সামনে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- শক্ত হাতে দলের চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনা এবং নেতা-মন্ত্রীদের অতিকথন বন্ধ করা। আর এটি করতে পারলে নির্বাচনী বছরেও যে রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগকে বড় কোন বাধার মুখে পড়তে হবে না, এমনটাই বিশ্বাস দলটির তৃণমূল নেতাদেরও। তাই বিপুল প্রত্যাশা ও চ্যালেঞ্জ নিয়েই আজ থেকে যাত্রা শুরু করল আরও একটি নতুন বছর। নতুন খ্রিস্টাব্দের সূচনামূহূর্ত নিয়ে উচ্ছ্বাস-উল্লাস বাঙালী সংস্কৃতির নিজস্ব কোন অঙ্গ না হলেও পাশ্চাত্য-প্রভাবে শহরাঞ্চলে এর ব্যাপ্তি ঘটেই চলেছে। বিশেষ করে তরুণ সমাজের মধ্যে। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর যারা অংশ, তারা জীবিকার কঠোর সংগ্রামে, সমস্যার ভারে এতই ক্লিষ্ট বিড়ম্বিত যে, এসব নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামানোর কোন অবকাশ নেই তাদের জীবনে। তারপরও কালপক্রিমায় নববর্ষ আসে, নতুন আশায়, স্বপ্নে উদ্দীপিত হয় মানুষ। বছরটি সাফল্যে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে, মুছে যাবে ব্যর্থতার গ্লানি, এ রকম প্রত্যাশায় মানুষ উজ্জীবিত হয়। বৈশ্বিক পটভূমিতে খ্রিস্টীয় নববর্ষের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য উপেক্ষা করার মতো নয় মোটেও। সবার প্রত্যাশা নতুন বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ উপহার দেবে জাতিকে। ইংরেজী নববর্ষের শুভলগ্নে দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা। তারা বাণীতে ইংরেজী নববর্ষে দেশবাসী এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। গোধূলি বেলায় রক্তিম সূর্য অস্ত যাওয়ার মধ্য দিয়ে হারিয়ে গেছে ঘটনাবহুল ২০১৭ সালটি। উদিত হয়েছে নতুন বছরের নতুন সূর্য। প্রত্যাশা কেবল মানুষের নিরাপত্তা, শান্তি, স্বস্তি, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বিনির্মাণ, শক্ত হাতে জঙ্গী-সন্ত্রাসী দমন এবং এবং সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির দেশ গড়ার। ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন চৌদ্দ দলীয় জোট সরকারের কাছে এ প্রত্যাশা রেখেই আজ সোমবার থেকে যাত্রা শুরু হলো নতুন বছরের। স্বাগত ২০১৮, বিদায় ২০১৭।
×