ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মধুমতির ভাঙ্গনে দিশেহারা ছয় গ্রামের মানুষ

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭

মধুমতির ভাঙ্গনে দিশেহারা ছয় গ্রামের মানুষ

নিজস্ব সংবাদদাতা, নড়াইল, ৩০ ডিসেম্বর ॥ মধুমতি নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন লোহাগড়া উপজেলার কোটাকোল ইউনিয়নের ঘাগা, কোটাকোল, রায়পাশা, করগাতি, মঙ্গলপুর ও চাপুলিয়া গ্রামবাসী। নদী ভাঙ্গনে নিঃস্ব এই ৬ গ্রামের ১২ শতাধিক পরিবার। হুমকির মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে কয়েক’শ বাড়ি ঘর। প্রায় ১৫ বছর ধরে ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে নদীতে পানির চাপ না থাকলেও ইতোমধ্যে ভেঙ্গেছে ৬টি গ্রামের ৮ শতাধিক বসতবাড়ি, গাছপালাসহ কৃষি জমি। বিশেষ করে মধুমতি নদী ভাঙ্গনের শিকার নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ঘাগা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরমঙ্গলপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং চাপুলিয়া বাবুচ্ছন্নাৎ দাখিল মাদরাসা টিকিয়ে রাখার দাবি করেছেন শিক্ষক. শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে সম্প্রতি এমপি শেখ হাফিজুর রহমান ভাঙ্গন প্রতিরোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একটি আবেদন করেছেন। ঘাগা গ্রামের টুটুল বিশ্বাস, লাবু বিশ্বাস, কুটি মিয়া বলেন, অমাদের গ্রামের ৮শ বাড়িঘর, বড় খেলার মাঠ, ফসলি জমি ও বেড়িবাঁধ ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঘাগা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি যে কোন মুহূর্তে নদী গর্ভে চলে যাবে। ঘরবাড়ি হারা শত শত অসহায় মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বার বার জানালেও তারা আজ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি। মঙ্গলপুর গ্রামের ইসহাক আলী বলেন, মধুমতি নদীগর্ভে আমাদের এলাকার ২০০ বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। এখন চরমঙ্গলপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ভাঙ্গছে। মুক্তিযোদ্ধা মোল্যা তমসিল আলী জানান, প্রায় ১৫ বছর ধরে মঙ্গলপুর গ্রামটি ভাঙ্গছে। ভাঙ্গনের কারণে অনেকে পথের ভিখারি হয়ে গেছে। আমরা খুব দুর্ভোগে আছি। বিশাল খেলার মাঠটির চৌদ্দআনা (বেশির ভাগ) মধুমতি নদী গর্ভে চলে গেছে। কোটাকোল ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মুজিবার রহমান বলেন, আগে এখানে প্রায় এক হাজার ৮০০ ভোটার ছিল। নদী ভাঙ্গনে নিঃস্ব হয়ে বর্তমানে প্রায় এক হাজার ২০০ ভোটার আছেন। এছাড়া মধুমতি নদী ভাঙ্গনে গাছপালা, কৃষি জমিসহ বিস্তীর্ণ এলাকা নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙ্গন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন এই জনপ্রতিনিধি। চরমঙ্গলপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহাবুদ্দিন মোল্যা জানান, দীর্ঘদিন ধরে মধুমতি নদী ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে এখন বিদ্যালয়ের কাছাকাছি চলে এসেছে। বিদ্যালয় মাঠটি প্রায় বিলীন হওয়ায় শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারে না। নদীতে পড়ে যাওয়ার ভয়ে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে আসতে দিতে চান না। যে কারণে দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। শিক্ষার্থী সাকিবসহ অন্যদের দাবি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভাঙ্গন প্রতিরোধে যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শাহাদাত হোসেন বলেন, ১৯৮৫ সাল থেকে লোহাগড়া উপজেলার মঙ্গলপুর গ্রামটি ভাঙ্গছে। ইতোমধ্যে ইটভাঁটি, বাড়িঘর, রাস্তাঘাটসহ অনেক ফসলি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। হাসান বলেন, ভাঙ্গন প্রতিরোধে পাশের বড়দিয়া এলাকায় কয়েক বছর আগে বক্ল ফেলা হলেও মঙ্গলপুরে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এদিকে, নড়াইলের কোটাকোল ইউনিয়নের চাপুলিয়া বাবুচ্ছন্নাৎ দাখিল মাদরাসা, ফসলি জমি, গ্রামের কাঁচা রাস্তাসহ বাড়িঘর সম্প্রতি মধুমতি নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে। এছাড়া চাপুলিয়া এলাকার প্রায় ৩০০ বাড়ি ভাঙ্গনের হুমকিতে আছে। নবেম্বরের প্রথম দিকে নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালুকাটায় চাপুলিয়া এলাকার মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
×