ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অনিরাপদ কর্মক্ষেত্র

’১৭ সালে ১২৪২ শ্রমিক নিহত, আহত ৩৭১

প্রকাশিত: ০৬:২১, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭

’১৭ সালে ১২৪২ শ্রমিক নিহত, আহত ৩৭১

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২২ ডিসেম্বর রাজধানীর শ্যামপুরে রহিমা ইস্পাত কারখানায় লোহা গলানোর চুলা বিস্ফোরিত হয়ে সাত শ্রমিক দগ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটে। ১৩ নবেম্বর সিলেটের জাফলংয়ের মন্দিরের জুম এলাকায় পাথর তুলতে গিয়ে গর্ত ধসে এক নারী পাথর শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত হয় আরও তিন শ্রমিক। এর আগে গত ৭ নবেম্বর সিলেটের কানাইঘাটের লোভাছড়ায় বাংলা টিলা নামের পাহাড়ের পাশের একটি পাথর কোয়ারিতে শ্রমিকরা কাজ করার সময় পাহাড় ধসে ১৪ জনশ্রমিক মাটিচাপা পড়ে। পরে স্থানীয়রা ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করে। ১৫ অক্টোবর ফতুল্লার লাল খাঁ এলাকায় এক ব্যক্তির বাড়ির নিচতলায় সেপটিক ট্যাংকের ঢালাইয়ের কাজে ব্যবহৃত বাঁশ ও কাঠ খোলার জন্য নামলে বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে তিন নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। সম্প্রতি রাজধানীর আদাবরের শেখেরটেকের একটি বাসায় মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে ১২ বছরের এক গৃহশ্রমিক হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এভাবেই অনিরাপদ কর্মক্ষেত্রে বছরব্যাপী হাজার হাজার শ্রমিক নিহত হয়েছেন। ২০১৭ সালে অনিরাপদ কর্মক্ষেত্রের কারণে বিভিন্ন সেক্টরে ১২৪২ শ্রমিক নিহত হয়েছেন আহত হয়েছেন ৩৭১ জন। ২০১৬ সালে নিহতের সংখ্যা ছিল ১২২০ শ্রমিক। বেরকারী সংস্থা বাংলাদেশ, অকপেশনাল সেইফটি, হেলথ এ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ফাউন্ডেশন (ওশি)র এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ১৫টি সংবাদপত্র এবং ওশির উদ্যোগে মাঠপর্যায় থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। ওশি ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন সাকি রেজওয়ানা সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে নিহত শ্রমিকদের মধ্যে ২৭০ জন প্রাতিষ্ঠানিক খাতে এবং ৯৭২ জন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করতেন। সেক্টরভিত্তিক তথ্যানুযায়ী, উক্ত বছরে পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ ৪৮৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন, ১৭৯ শ্রমিক নিহত হয়েছেন নির্মাণ খাতে, পোশাক শিল্পে ৫২, কৃষি শ্রমিক মৃত্যুর সংখ্যা ৯৯, স্টিল মিল ও রি-রেলিং শিল শ্রমিক ৮ জন এবং দিনমজুর নিহত হয়েছেন ১০৩ জন। এছাড়া ২২ জন গৃহকর্মী, ১৮ জন শিপব্রেকিং শিল্পে কর্মরত শ্রমিক এবং ২৮ জন মৎসচাষী পেশাগত দূর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। অন্যান্য সেক্টরে নিহতের সংখ্যা ছিল ২২১ জন। প্রতিবেদনে কর্মস্থলে হতাহতের উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে কর্মস্থলে আসা যাওয়ার পথে দূর্ঘটনায় ৬৭৯, বিদ্যুতস্পৃস্ট হয়ে ২২৯, ভবন থেকে পড়ে ১০১, বজ্রপাতে ১৪২, বয়লার ও সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ৯৭, গৃহশ্রমিকদের ক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতনে ২২ এবং অন্যান্য কারণে ২২১ জনের হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া জানা গেছে, হতাহতের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১৪৯৮ জন এবং নারীর সংখ্যা ১১৫ জন। ২০০৮ থেকে ২০১৭ গত ১০ বছরে কর্মক্ষেত্রে দূর্ঘটনার তুলনামূলক চিত্র অনুযায়ী মোট ১২ হাজার ৮৬৪ শ্রমিক নিহত হয়েছেন এবং ১১ হাজার ৭৬৭ শ্রমিক আহত হয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ্যাৎ ১৯৭১ শ্রমিক নিহত হয়েছেন গার্মেন্টস খাতে এরপর ১৪৩৭ শ্রমিক নিহত হয়েছে নির্মাণ খাতে। দিনমজুরের সংখ্যা ১১৩৩, কৃষি খাতে নিহতের পরিমাণ ৮৯১ জন এবং জাহাজভাঙ্গা শ্রমিক ১৭৯ জন নিহত হয়েছেন বিগত ১০ বছরে। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়নে ওশির সুপারিশমালাগুলো হচ্ছে-বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধিত ২০১৩) ও শ্রম বিধিমালা ২০১৫ এর আলোকে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিধানের প্রয়োগের লক্ষ্যে নজরদারি বাড়ানো, বয়লার, পরিদর্শকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং বয়লার পরিদর্শন অধিদফতরে রুপান্তর করা, কর্মস্থলে শ্রমিকদের ব্যাক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ ব্যবহার নিশ্চিত করা, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ইউনিট চালু করা, সরকারী হাসপাতালে পেশাগত রোগের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসকদের সংখ্যা বাড়ানো, পোশাকশিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য একটি পৃথক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে দূর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকের পরিবার ও আহত শ্রমিককে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনাধীন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্তিত ছিলেন ওশি ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারপার্সন ড. এস এম মোর্শেদ, পরিচালক মাছু-উল-আলম, সহকারী পরিচালক আলম হোসেন, প্রজেক্ট ম্যানেজার আরিফা আস আলম এবং আহত শ্রমিকবৃন্দ।
×